ভারতবর্ষ ভিন্ন সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে গঠিত হওয়ায় এই স্থানের ইতিহাসটা বেশ সমৃদ্ধ । সেই সিন্ধু সভ্যতার উৎপত্তি থেকে ব্রিটিশ শাসনকাল পর্যন্ত সময়ের কাহিনি উঠে এসেছে ইতিহাসে । বর্তমানে ভারতের ইতিহাসে তাজমহল, ইন্ডিয়া গেট, চারমিনার, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বিভিন্ন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠলেও, ভারতের ইতিহাসে এমন আরও অনেক ঐতিহাসিক ইমারত রয়েছে যা পর্যটকদের নজরবন্দি হতে পারেনি ।
এই স্মৃতিস্তম্ভগুলি অচেনা হলেও ভারতীয় ইতিহাসে এগুলির অবদানকে অস্বীকার করা যায় না । চলুন এই ব্লগের মাধ্যমে সেই ঐতিহাসিক স্থানগুলির সঙ্গে পরিচয় করে নেওয়া যাক।
ভারতে ইসলামীয় স্মৃতিস্তম্ভগুলির মধ্যে বিদার ফোর্ট হল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন । যখন সুলতান আলা-উদ-দিন বহমাণ তাঁর রাজধানী গুলবার্গা থেকে বিদার রাজ্যে পরিবর্তন করেন, সেই সময় অর্থাৎ ১৪২৭ সালে বিদার ফোর্ট নির্মাণ করা হয় । এই ফোর্ট এর স্থাপত্য যেমন রাজকীয় স্নানগার, রাজসভা, উন্মুখ মণ্ডপ দেখলে তৎকালীন সময়ে এই রাজ্যের গৌরব সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা করা যায় ।
এই ফোর্টটি পরিচালকদের ছবি তৈরি করার জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় । অনন্ত নাগ অভিনীত বারা, দুনিয়া বিজয় অভিনীত জরাসন্ধ, এবং বিদ্যা বালান অভিনীত ডার্টি পিকচার ছবির শুটিং এখানেই হয়েছে ।
আগ্রার সিকান্দারা অঞ্চলের আকবরের সমাধির নিকটে অবস্থিত কাচ মহলে মুঘল রাজত্বকালীন স্থাপত্য ঝড়োখা এবং গাউখ-এর নিদর্শন মেলে । কাচ মহল ও আকবরের সমাধির নৈকট্য দেখে মনে করা হয় এই কাচ মহল কোনও রানি বা রাজ পরিবারের কোনও মহিলা সদস্যের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে । পরবর্তী কালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে তা শিকারগাতে ( ভৌতিক লজে ) পরিণত হয় ।
এই বিশালকার বাগানটি জয়শলমীরের উত্তরে প্রায় ৬ কিমি দূরে অবস্থিত । মহারাওয়াল জাইত সিং ষোড়শ শতকে এই বাগান নির্মাণের কাজ শুরু করেন এবং তাঁর পুত্র লুনাকরণ এই বাগান নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেন । এই বড়া বাগ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজপরিবারের বিদায়ী শাসকদের উদ্দেশ্যে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা।
এই বাগান থেকে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তর একটা রোমাঞ্চকর দৃশ্যর সাক্ষী থাকতে পারেন । এছাড়াও স্থানীয় ট্যাক্সি ভাড়া করে জয়শালমীরের বিখ্যাত স্থানগুলির পরিদর্শন করে আসতে পারেন।
মনে করা হয় ফ্রেঞ্চ মিশনারীরা ১৮৬০ সালে এই চার্চটি নির্মাণ করেন । চার্চটি গথিক স্থাপত্যর একটি অভূতপূর্ব নিদর্শন যা ভারতীয় ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে । এটি হাসান অঞ্চলে হেমাবতী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত । একসময় সরকারী তত্ত্বাবধানে এখানে গরুর ড্যাম তৈরি করা হয় । বাঁধ নির্মাণের ২৫ বর্ষ পূর্তির পরও প্রতি বছর বর্ষাকালে এই চার্চ সম্পূর্ণ জলের তলায় নিমজ্জিত থাকে ।
এই চার্চ এর সৌন্দর্যকে প্রত্যক্ষ করার জন্য এই স্থানে বছরে দুইবার পরিদর্শন করা উচিত । একটা সময় হল বর্ষাকালীন সময় অর্থাৎ জুলাই থেকে অক্টোবর মাস যখন সম্পূর্ণ চার্চ জলের তলায় নিমজ্জিত থাকে। অথবা শুধুমাত্র চার্চের সৌন্দর্য্য অনুধাবন করার জন্য ডিসেম্বর থেকে মে মাস সময় পৌঁছে যেতে পারেন ।
ডিসনি সিনেমার দুর্গগুলির আদলে নির্মিত চিকতান ফোর্টটি কার্গিল জেলায় সিন্ধু নদী উপত্যকায় গড়ে তোলা হয়েছে । ১৬ শ শতকে নির্মিত এই ফোর্টটি বিভিন্ন সময় রাজাদের বাসস্থান হিসেবে পরিগণিত হত । বাল্টি কারিগরদের অসাধারণ শিল্পকলার নিদর্শন হলো এই চিকতান ফোর্ট । দুর্ভাগ্যবশত বর্তমানে অবহেলায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই স্থাপত্যটি ধ্বংসের মুখোমুখি, তাই সম্পূর্ণ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হওয়ার আগে এই ফোর্টটির সম্মুখ দর্শন করে আসতে পারেন ।
প্রকৃতপক্ষে জুনাগড়ে অবস্থিত মহাবাত মাকবারা হলো নবাব দ্বিতীয় মহাবত খান এর সমাধিস্থল । এই স্মৃতিস্তম্ভটি গুজরাটের ইউরো -ইন্দো ইসলামীয় স্থাপত্য শিল্পরীতির অনন্য নিদর্শন ।
এই স্থানটিতে ভ্রমণ করলে ইসলামীয় স্থাপত্য যেমন ডোম গুলির গঠন রীতি, ফরাসী শিল্পকলার আদলে গঠিত জানালা, রৌপ খচিত প্রবেশদ্বার চোখে পড়ে । এখানে কোনও প্রবেশমূল্য নেই এবং মহাবত মাকবারা ভিতরের মসজিদে সকল ধর্মের মানুষের প্রবেশের অনুমতি রয়েছে ।
ভারতের ইতিহাসে বেশিরভাগ ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভগুলি প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হলেও বেকাল ফোর্টটি কিন্তু প্রতিরক্ষার কারণে নির্মাণ করা হয়েছিল । চারিদিকে সমুদ্রবেষ্ঠিত বেকাল ফোর্ট থেকে প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্যপট কে প্রত্যক্ষ করা যায় । বোম্বে ছবির বিখ্যাত গান 'তু হি রে 'শুটিং এই বেকাল ফোর্ট এই হয়েছিল । তাই কেরালা ভ্রমণের হাউসবোট যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে বেকাল ফোর্ট পরিদর্শন করতে কিন্তু একদম মিস করবেন না ।
১৫ শ শতকে কোলি প্রধানরা সামুদ্রিক দস্যু এবং ছিনতাইকারীদের থেকে রক্ষা পেতে এই ফোর্ট নির্মাণ করেন । ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় এই ফোর্ট বিভিন্ন যুদ্ধের সাক্ষীবহ । শিবাজীর মতো বিখ্যাত রাজারা এই ফোর্ট থেকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতেন ।
আরবি ভাষা জাজীরা থেকেই মারাঠি ভাষা জাঞ্জিরারে উৎপত্তি । এই শব্দের অর্থ হল -দ্বীপ । মহারাষ্ট্রের রায়গদ জেলার উপকূলীয় গ্রাম মুরুদ এর সমুদ্র বেষ্ঠিত দ্বীপে প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতায় গ্রানাইট পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে এই মুরুদ -জাঞ্জিরা ফোর্ট ।
বেতওয়া নদী এবং জামনি নদীর সংযোগস্থলের দ্বীপাঞ্চলে ওরচ্ছা শহরে গড়ে তোলা হয়েছিল ওরচ্ছা ফোর্ট। এই ছোট্ট শহরে অবস্থিত এই ফোর্টটি ঐতিহাসিক শিল্পের অসামান্য নিদর্শন । এই ফোর্টটি বুন্দেল রাজপুত রুদ্র প্রতাপ সিং নির্মাণ করেন । ফোর্ট-এ আজও কক্ষ এবং মন্দির সযত্নে রক্ষিত রয়েছে ।
তৎকালীন বুন্দেল রাজপুত ঘরানার ইতিহাসকে জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওরচ্ছা ফোর্ট এ লাইট এবং সাউন্ড এর একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ।
সময় - ইংরেজি ভাষায় বুন্দেল ইতিহাস প্রদর্শনীর সময় সন্ধে ৬.৩০ হিন্দি ভাষায় বুন্ডেল ইতিহাস প্রদর্শনীর সময় সন্ধে ৭.৩০।
গ্রেট ওয়াল অফ ইন্ডিয়া নামে পরিচিত এই ফোর্টটি উদয়পুরের উত্তরে ৮৪কিমি অদূরে মেওয়ার সাম্রাজ্যের কুম্ভলগড় ফোর্টটি অবস্থিত । আরবল্লি পর্বতের পাদদেশে ১৫শ শতকে রানা কুম্ভ এই দুর্গটি নির্মাণ করেন । প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষার জন্য মেওয়ার রাজা এই দুর্গে আশ্রয় নিতেন । দুর্গের প্রায় ৩৬ কিমি প্রস্থ দেওয়ালে একসাথে প্রায় ৮ টি ঘোড়া পাশাপাশি সজ্জিত থাকত । এই ফোর্ট থেকে সম্পূর্ণ শহরের একটা প্যানেরোমিক ভিউ পাওয়া যায় ।
অনেক সময় এই অপরিচিত স্থান গুলি পরিদর্শনের করলে মনে হয় কোথাও যেন ইতিহাস ও কথা বলে । তাই ভ্রমণ তালিকায় এই অচেনা ঐতিহাসিক স্থানগুলি সংযুক্ত করে নিয়ে অতীতের সঙ্গে নিজের পরিচয় ঘটানোর প্ল্যান মনে হয় না খুব খারাপ হবে । তাই নয় কি?আপনার কমেন্টের অপেক্ষায় রইলাম ।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)