চুঁচুড়ায় সাত সাহেবের বিবি সুসানা আনা মারিয়ার কবর: বাস্তব আর কল্পনার মেলবন্ধন

Tripoto

সাহেবি আমলে কিন্তু চুঁচুড়ার মানে শুধু সরু সরু রাস্তাঘাট, ভিড় আর ট্র্যাফিক জ্যামের ঝঞ্ঝাট ছিল না। ১৬১৫ থেকে ১৮২৫ খ্রিস্টান - প্রায় ২০০ বছর ধরে এই ডাচ উপনিবেশ কিন্তু ছিল বঙ্গদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং দৃষ্টিনন্দন শহর। চুঁচুড়ার ক্লক টাওয়ার আর তার স্থ্যাপত্যকলার দিকে তাকালেই কিন্তু চুঁচুড়ার সেই গৌরবের দিনের আঁচ পাওয়া যায়।

স্থাপত্যশিল্পের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য সৌধ (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Chinsurah, West Bengal, India by Aninda De

কিন্তু চুঁচুড়া, ব্যান্ডেলে ঘোরার সময়ে আমার নজর কিন্তু কেড়েছিল একটি কবর, সুসানা আনা মারিয়ার কবর! স্থানীয়রা কিন্তু এই কবরটিকে চেনেন সাত সাহেবের বিবির কবর বা মেমসাহেবের কবর নামেই। আর এটা শুনে কিন্তু আমার প্রথমেই মনে পড়ল রাস্কিন বন্ডের সেই পাঁচ পাতার ছোটগল্পের কথা, সুসানাস সেভেন হাসব্যান্ডস, যার উপর ভিত্তি করে পরিচালক ভিশাল ভরদ্বাজ তৈরি করেছিলেন "সাত খুন মাফ" সিনেমাটি। আমরা বোধহয় সবাই দেখেছি এই সিনেমাটি, যেখানে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনয় করেছিলেন সুসানা আনা মারিয়া নামক এক রহস্যময়ী নারীর চরিত্রে, যার স্বামীরা একে একে নিখোঁজ হতে থাকেন। কারণ সুসানা নিজেই তাঁদের হত্যা করেন!

এই কবরের কাছে গিয়ে বুঝলাম যে এই অঞ্চলের নানা মানুষের গল্পগুজব আর আড্ডা দেওয়ার স্থান সুসানার এই স্মৃতিসৌধটি। আর সুসানার গল্প জানতে গিয়ে কিন্তু আসতে আসতে আমিও হারিয়ে যাচ্ছিলাম অতীতের হাতছানিতে।

চলুন যেনে নেওয়া যাক কে এই সুসানা আনা মারিয়া ইটস?

ড্যানিশ এই ভদ্রমহিলার প্রাথমিক নাম ছিল সুসানা আনা মারিয়া ভ্যার্কেরক। তাঁর প্রথম স্বামী পিটার ব্রুইসকে নিয়ে থাকতেন চুঁচুড়ায়। পিটার ছিলেন এই অঞ্চলের অন্যতম নামকরা বণিক এবং স্থানীয় ডাচ শাসনসংস্থার একজন পরিচালক। দুই মেয়ে সুসানা জ্যাকোবা ও মারিয়া আনা দে ব্রুইস এবং এক সন্তান লুইস অদ্রিয়ান দে ব্রুইস নিয়ে ছিল তাদের সংসার। ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে পিটারের মৃত্যুর পর সুসানা বিয়ে করেন ইংরেজ থমাস ইটসকে, তখন থেকেই তার নাম সুসানা আনা মারিয়া ইটস।

গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড আর চুঁচুড়া স্টেশন রোডের ক্রসিংয়ের কাছে অবস্থিত সুসানার সাদা গম্ভীর স্মৃতিসৌধটি দাঁড়িয়ে নীরবে। ইন্দো-ডাচ স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী এই সৌধটি অষ্টভুজাকৃতি। সৌধটি দু'তলা, খিলান সমৃদ্ধ প্রবেশ পথের মাথায় রয়েছে গম্বুজ। সম্ভবত সৌধটির হাল আমলে পরিচর্যা পেতে শুরু করেছে, সাদা দেওয়ালে নতুন রঙের প্রলেপ তাই জানান দেয়। সৌধের ভিতরে দেখলাম একদল যুবক একসঙ্গে বসে গল্প করছে।

গম্বুজাকৃতির স্মৃতিসৌধ (ছবি সংগৃহীত)

Photo of চুঁচুড়ায় সাত সাহেবের বিবি সুসানা আনা মারিয়ার কবর: বাস্তব আর কল্পনার মেলবন্ধন by Aninda De

১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে সুসানা মারা যান, ততদিনে তাঁর রয়েছে দুই স্বামীর উদ্বৃত সম্পত্তি। শোনা যায় সুসানার নাকি ঘোড়া পোশার শখ ছিল। অদ্ভুত ভাবে সাত খুন মাফ সিনেমায়ও আমরা দেখতে পাই যে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার চরিত্রটিও ছিল ঘোড়ার শখ। ইতিহাস বলে এই কবরের মালকিন সুসানার বিয়ে হয়েছিল মাত্র দুই বার। কিন্তু তাও লোকমুখে এই জায়গাটি পরিচিত সাত সাহেবের বিবির কবর হিসেবেই।

এবার এই গোটা সাত সাহেবের গল্প কি নিছকই লোকমুখে প্রচলিত গল্পকথা? নাকি সিনেমা রিলিজের পর সিনেমার নায়িকা আর সুসানার নামের মিল থেকেই উঠে এসেছে সাত সাহেবের বিবির কবর নামটি, তা বলা মুশকিল। সেকালের চুঁচুড়া ছিল ডাচ ও ইংরেজের বিচরণক্ষেত্র, তাই রাস্কিন বন্ডের লেখা গল্পের আগেও যে সাহেব আর সাহেবের বিবিরা এখানে থাকবেন, তা তো বলাই বাহুল্য!

তাই কোথাও গিয়ে সুসানার গল্প মিলে মিশে রয়েছে বাস্তব আর কাহিনির সন্ধিস্থলে। তাই আপনিও চলুন, চক্ষু কর্ণের মানভঞ্জন হোক সাত সাহেবের বিবির কবরস্থলে।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)

Further Reads