রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন "কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে" এই বিষয়ে যথার্থ পর্যবেক্ষণ ছিল কবির। নানা জানা এবং অজানা, আশ্চর্য বস্তুকে নিয়েই কয়েকশ বছর ধরে এই শহর একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে। সাবেকীয়ানা আর আধুনিকতা দুইয়ের সমান্তরালে... কেউ বলেন প্রাণের শহর, কেউ বলেন সিটি অব জয় বা আনন্দনগরী। কলকাতার দশটি অনন্য আকর্ষণের কথা আজ তাই আপনাদের কাছে তুলে ধরব। যা কোনও ভাবেই মিস করা যায়না। আর এগুলো আছে বলেই এই শহরে হাজা়রও অভিযোগে, অভাবের ভিড়ে থেকে যায় চির বসন্তের, চির নতুনের ডাক।
ভোজনরসিক এবং ভোজনপ্রেমী বাঙালিদের জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা হল কলকাতা কিন্তু আপনি কি কলকাতায় সবচেয়ে কোন খাবার বিক্রি হয় জানেন? চাইনিজ খাবার। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি! ফ্রায়েড রাইস বলুন, চাউমিন বলুন বা চিলি চিকেন, চাইনিজ বলতেই বাঙালি একেবারে অজ্ঞান। হবে নাই বা কেন, এই শহরেই আছে দেশের সবচেয়ে পুরনো চায়না টাউন। টেরিটি বাজারে যান বা ট্যাংরায়, চিনে রেস্তরাঁ, চিনে মন্দির সব মিলিয়ে মনে হবে আপনি একদম খাস চিনেই বসে আছেন।
বিরিয়ানি লা জবাব
এই সেই চিড়িয়াখানা যেখানে আপনি ছোটবেলায় বাবা মার হাত ধরে যেতেন। শীত এলেই যেখানে বাঙালির ভিজিট মাস্ট। কত শীত আসে কত শীত যায়। চিড়িয়াখানার আকর্ষণ একই থেকে যায়। এখন আপনি নিজের ছেলে মেয়েদের নিয়ে যান। এই চিড়িয়াখানা কিন্তু দেশের সবচেয়ে পুরনো চিড়িয়াখানা, যা তৈরি হয়েছিল ১৮৭৫ সালে।
বিড়লা তারামণ্ডল
ব্রিটিশ আমলে লন্ডনের পরই ছিল এই শহর
হ্যাঁ, একদম ঠিক শুনেছেন। নানা দিক বিচার করেই কলকাতাকে তাঁদের রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ সরকার। ১৯১১ সাল পর্যন্ত কল্লোলিনী তিলোত্তমাই ছিল দেশের রাজধানী। পড়াশোনা, গান, বাজনা, সাহিত্য সংস্কৃতির আধার এই শহর। আজ কলকাতা রাজধানী না হলেও সারা দেশ এই শহরকে সম্মান জানায় বুদ্ধিজীবীদের শহর হিসেবে। রাজধানী শহর হওয়ার কারণেই ঔপনিবেশিক শাসনামলে এই শহরের শিল্প-সংস্কৃতির এক অভূতপূর্ব উন্নতিসাধন ঘটেছিল।
বই চাই গো বই চাই
আপনি শুধু একবার বলুন আপনার কোন বই চাই। ইংরেজি, বাংলা, চিনে, জাপানি, ফার্সি হরেক ভাষার হরেক বিষয়ের বই আপনি পেয়ে যাবেন আমাদের সবার প্রিয় কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়ায়। পুরনো বই হোক বা নতুন, কলেজ স্ট্রিট মানেই বইপ্রেমীদের ইতিউতি আড্ডা। জেনে রাখুন কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়া হল এই দেশের সর্ব বৃহৎ বুক জোন। আর বইপোকাদের জনপ্রিয় আড্ডার ঠেক বইপাড়া সংলগ্ন শতাব্দীপ্রাচীন কফি হাউস।
দেশের সর্ব বৃহৎ জাতীয় গ্রন্থাগার
আপনি হয়তো বহুবার ন্যাশনাল লাইব্রেরি বা জাতীয় গ্রন্থাগারে গেছেন, মন দিয়ে পড়াশোনাও করেছেন। কিন্তু জানেন কি এই ন্যাশনাল লাইব্রেরি দেশের সবচেয়ে পুরনো আর সবচেয়ে বড় পাবলিক লাইব্রেরি? আপনি যদি কলকাতায় থাকেন তাহলে এই গ্রন্থাগার নিয়ে আপনার গর্ব করা উচিত।
শহরের গর্ব ট্রাম
সারা ভারতে একমাত্র কোন শহরে চলে ট্রাম? যে কোনও কুইজ প্রোগ্রামে এই প্রশ্ন শুনলেই বিনা দ্বিধায় উত্তর দিতে পারেন সে হল আমাদের শহর কলকাতা। সেই ১৯০২ সাল থেকে এখানে ট্রাম চলছে। ইউরোপের কয়েকটি শহর ছাড়া আমাদের দেশে কিন্তু এই একটি শহরেই ট্রাম আছে। বলুন এটা গর্বের বিষয় কিনা?
চায়না টাউনের চতুরঙ্গ
খাওয়া দাওয়ার কথা যখন উঠলই তখন বিরিয়ানিই বা বাদ যায় কেন ! কলকাতা বিরিয়ানি হচ্ছে স্পেশাল, কারণ একমাত্র এখানকার বিরিয়ানিতেই থাকে আলু। এই শহরেই বেশ কিছুদিন কাটিয়ে গেছেন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ। পয়সা নেই, এদিকে নবাবের বিরিয়ানি ছাড়া মুখে কিছু রোচে না। তাই মাংসের অভাব ঢাকতে রাঁধুনি তাতে দিলেন আলু। নবাবের বংশধরেরাই খুলেছেন মঞ্জিলাত। যার মালকিন ফাতিমা খোদ নবাবের আত্মীয়া।
হাওড়া ব্রিজ
হাওড়া থেকে ট্রেন ধরার সময় আপনি এই ব্রিজের উপর দিয়ে অসংখ্যবার গেছেন আর এসেছেন। এই ব্রিজ হল কলকাতার অন্যতম ল্যান্ডমার্ক। আপনি এই শহরে থাকেন বলে হয়তো খেয়াল করেন না কিন্তু দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ এই ব্রিজ দেখতে আসেন। এটি বিশ্বের ষষ্ঠ লম্বা ব্রিজ। ব্রিটিশদের তৈরি করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকৃতির নিদর্শন।
বোটানিক্যাল গার্ডেন
একটা বটগাছ তার বয়স কিনা ২৫০ বছর? শুনে অনেকেই বিশ্বাস করেন না। একদম খাঁটি সত্যি কিন্তু। বোটানিক্যাল গার্ডেনে আছে এমনই একটি গাছ, যার বয়স আদতে কত কেউ জানেন না। কলকাতার কাছেই অবস্থিত হাওড়ার এই গার্ডেনে আছে এমন একটি পদ্মপাতা যার উপরে উঠে আপনি বেশ স্বচ্ছন্দে নাচতে পারেন! (সত্যি সত্যি করতে যাবেন না যেন !)
আলিপুর চিড়িয়াখানা
চিড়িয়াখানার মতো এনার বয়সও কিছু কম নয়। এটি তৈরি হয়েছিল ১৯৬৩ সালে যার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু। এটি শুধু ভারতেই নয় এশিয়ার বৃহত্তম প্ল্যানেটোরিয়াম।