পোষ্যকে সঙ্গে নিয়েও আপনি ট্রেন সফর করতে পারবেন, শহর পরিবর্তনও করতে পারবেন...

Tripoto
Photo of পোষ্যকে সঙ্গে নিয়েও আপনি ট্রেন সফর করতে পারবেন, শহর পরিবর্তনও করতে পারবেন... 1/3 by Surjatapa Adak
শেরু আর আমার বন্ধুত্বের মিষ্টি ছবি

আজকাল মোটামুটি সব বাড়িতেই পোষ্য- এর দেখা পাওয়া যায়। সত্যি কথা বলতে কী আপনার সুখ -দুঃখ, আনন্দ - কষ্ট এই পোষ্যরা অনায়াসেই বুঝে যায় । তাছাড়া আমাদের মনের মধ্যে অনেক না বলা কথা লুকিয়ে থাকে, যা কোনও রক্ত মাংসে গড়া মানুষকে অনেক সময় সেই কথা গুলি শেয়ার করা যায় না। তবে এই পোষ্যকে কিন্তু নির্দ্বিধায় সমস্ত কথা বলে আপনি আপনার মন হালকা করতে পারেন । আমার মনে হয় একমাত্র, আমার যে সমস্ত পাঠকদের পোষ্য রয়েছে এই অনুভূতিটা একমাত্র তারাই বুঝবেন ।

Photo of পোষ্যকে সঙ্গে নিয়েও আপনি ট্রেন সফর করতে পারবেন, শহর পরিবর্তনও করতে পারবেন... 2/3 by Surjatapa Adak
প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতা

এবার আসি পোষ্যকে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে । আমাদের পোষ্যটি একটি সারমেয় ( street dog)। ব্যক্তিগতভাবে আমি একসময় তাকে খুব ভয় পেতাম । তবে কিছুদিনের মধ্যেই তার সাথে আমার সখ্যতা তৈরি হয় । কিন্তু পড়শিরা এই সখ্যতাকে ভালোভাবে গ্রহণ না করায় আমরা তাকে আমাদের বাড়িতেই আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই । হ্যাঁ, এই সময় পরিবারের লোকজনেরও রাস্তার কুকুরকে বাড়িতে রাখা সম্পর্কে আপত্তি থাকলেও একটা সময় পর তারাও এই পোষ্যকে আপন করে নেয় এবং ধীরে ধীরে শেরু (মানে আমাদের পোষ্য) আমাদের পরিবারের প্রধান সদস্যের জায়গা করে নেয়। ঘটনাচক্রে কর্মসূত্রে সেই সময় আমরা জামশেদপুরে থাকতাম, তবে সম্প্রতি আমাদের জামশেদপুর থেকে আমেদাবাদে স্থানান্তরিত হতে হয়।

Photo of পোষ্যকে সঙ্গে নিয়েও আপনি ট্রেন সফর করতে পারবেন, শহর পরিবর্তনও করতে পারবেন... 3/3 by Surjatapa Adak
আমাদের শেরুও এই ট্রেনসফরকে উপভোগ করেছিল

কিন্তু সমস্যা হিসেবে দেখা দিল কিভাবে পোষ্যকে নিয়ে স্থানান্তরিত হব? আমাদের কখনওই ইচ্ছা ছিল না তাকে জামশেদপুরে একা রেখে চলে আসার। পোষ্যকে নিয়ে যাত্রা করার জন্য খরচের অঙ্কটা বিশাল ছিল শুধু তাই নয়, পোষ্যকে নিয়ে যাত্রা করা সমস্যাবহুলও হতে পারে বলে অনেকে আমাদের পরামর্শ দেন, তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার। কিন্তু এই পোষ্যটি আমাদের, আমার এবং আমার পরিবারের কাছে খুবই মূল্যবান; তাই সমস্ত রকম সমস্যা উপেক্ষা করে আমরা তাকে সাথে নিয়েই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

কিন্তু কীভাবে পোষ্যকে ট্রেন যাত্রা সম্ভব হল?

আজকাল স্মার্টফোনের দৌলতে প্রথমেই ইউটিউব এবং গুগুলের শরণাপন্ন হই। তবে সেখান থেকে আমরা সঠিক পরামর্শ পায়নি । আমাদের কাছে শুধুমাত্র একটাই তথ্য ছিল ট্রেনে ফার্স্ট-ক্লাস এসির কুপগুলিতে পোষ্য নিয়ে যাত্রা করার অনুমতি রয়েছে। যেহেতু আমাদের টিকিট অনলাইনে কাটা হয়েছিল, তাই রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পোষ্যকে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম প্রসঙ্গে আমাদের জানা ছিল না। আর তাই টাটানগর স্টেশনে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ একটি অ্যাপ্লিকেশন হাওড়া স্টেশনে গিয়ে জমা করে আসতে বলেন, কারণ আমাদের ট্রেনটি হাওড়া স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা ছিল ।

কিন্তু হাওড়া স্টেশনে গিয়েও কোনওরকম সুফল পাওয়া যায়নি। তবে রেল কর্তৃপক্ষের সাথে কথোপকথনে জানতে পারলাম, ট্রেনে পোষ্যকে নিয়ে যাত্রার জন্য আলাদা ভাবে একটি টিকিটের প্রয়োজন হয়। গত ৮ ই অগাস্ট টাটানগর স্টেশন থেকে সকাল ৯টায় আমাদের ট্রেন ছিল; তাই ভোর ভোর বেরিয়ে টিকিট কেটে নিলাম। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, পোষ্যর টিকিটের খরচ পড়ল ১০০০ টাকার মতো।

আমাদের শেরুর এটাই ছিল প্রথম ট্রেন যাত্রা। ট্রেনের জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্যটা প্রত্যক্ষ করতে মানুষের যেমন ভালো লাগে, আমার মনে হয় শেরুও নতুন অভিজ্ঞতাটা সুন্দরভাবেই উপভোগ করেছে।

পরিশেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমার একটাই অনুরোধ, আপনার বাড়িতে যদি পোষ্য থাকে এবং কর্মসূত্রে আপনাকে যদি স্থানান্তরিত হতে হয় তাহলে পোষ্যটি একা রেখে চলে যাওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্তটি নেবেন না। আমাদের মানুষের মনে এই ধরণের মানসিকতা কাজ করে, সেই সময় একটু ভেবে দেখবেন এই পোষ্যটির জন্যই আপনি মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন। আপনার মন ভালো করার রসদ জোগাতে, আপনাকে ভালো রাখার জন্য এই পোষ্যটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিঃদ্রঃ - পোষ্যকে নিয়ে যাত্রা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে নিচের কমেন্ট বাক্সে লিখে জানাতে পারেন। আশা রাখি ট্রিপোটো বাংলার ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য দ্বারা আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads