ভারতের সৌন্দর্য থেকে সংস্কৃতি সমস্ত কিছুতেই ভিন্নতা লক্ষ করা যায় । তবে ভ্রমণ প্রিয় মানুষ সমগ্র ভারতের মধ্যেই নতুনত্বের ছোঁয়া খুঁজে পায় । অবিশ্বাস্য ভারতের মধ্যভাগ ও সেই নতুনত্বের তালিকায় যুক্ত থাকে । ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য হল মধ্যপ্রদেশ। বান্দবগড় ন্যাশনাল পার্ক বিখ্যাত গোয়ালিয়র ফোর্ট এমনকি মহাকালেশ্বর দর্শন একই রাজ্যে ন্যাশনাল পার্ক থেকে কিংবা ইতিহাস আবার আধ্যাত্বিকতাকেও উপভোগ করে নিতে পারেন। তাই মধ্যপ্রদেশ সব মিলিয়ে একটা জমজমাট ভ্রমণ প্যাকেজ হতে পারে । তবে এই ব্লগে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের বিখ্যাত শহর উজ্জয়িনীর কাহিনি।
অবস্থান
ভারতের পশ্চিম-মধ্যভাগে শিপ্রা নদী তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত ভারতের প্রাচীন শহর উজ্জয়িনী। ইতিহাসবিদদের মতে এই শহরের উৎপত্তির সময়কাল হল প্রায় ৬০০ খ্রীস্টপূর্ব। অবন্তী শাসনকালে এই শহরটি রাজধানী শহর হিসেবে বিবেচিত হত। মোটামুটি ১৯ শতক পর্যন্ত এই রাজ্যটি রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বেশ উন্নত ছিল। পরবর্তী কালে ইন্দোর শহরের নির্মাণ হলে এই শহরটির প্রধানত্বের শিরোপা ছিন্ন হলেও এই শহরের ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা যায় না।
উজ্জয়িনীর শহরের ইতিহাস
মহাভারতে বর্ণিত আছে উজ্জয়িনী অবন্তী রাজ্যের রাজধানী ছিল । একদা এই শহরটি মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ছিল, সেই কারণে এই শহরটিতে মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজা অশোক বাস করতেন । মৌর্য সাম্রাজ্যের পরবর্তী সময়ে এখানে শতবাহন সম্রাজ্যের উত্থান শুরু হয় । পরবর্তীকালে গুপ্তযুগ থেকে মুঘল আমলে ও মালোয়া অঞ্চলের রাজধানী হিসেবে উজ্জয়িনীকেই বেছে নেওয়া হতো । ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে জানা যায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক দিক থেকে নয় গণিতশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে ও এই শহরটি শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পেয়েছিল ।
দর্শনীয় স্থান -
১. মহাকালেশ্বর জোতির্লিঙ্গ
ধর্মপ্রাণ পর্যটকদের কাছে উজ্জয়িনী ভ্রমণের মুখ্য কারণ হল - মহাকালেশ্বর দর্শন । স্বয়ম্ভূ এই শিবলিঙ্গটি ১২টি জোতির্লিঙ্গ এর অন্যতম । শিবের মূর্তিটি দক্ষিণমুখী হওয়ায় হিন্দুদের কাছে এটি একটি পবিত্র স্থান। এই মন্দিরের বিখ্যাত ভস্ম আরতি দর্শনের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে বহু পর্যটকের সমাগম হয় । এই মন্দির নির্মাণের ক্ষেত্রে মারাঠা, ভূমিজা, চালুক্য সংস্কৃতির মিশ্র ধারণা লক্ষ করা যায় ।
২. রাম মন্দির ঘাট
উজ্জয়িনীতে প্রতি ১২ বছর অন্তর কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয় । হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী কুম্ভমেলার পবিত্র তিথিতে স্থান করে পুন্য অর্জন করা যায় । তাই সেই রীতি মেনেই হিন্দুরা উজ্জয়িনী ভ্রমণে এসে এই রাম ঘাটে স্নান করেন পুন্য অর্জনের কামনায় ।
৩. কাল ভৈরব মন্দির
ভগবান শিবই কাল ভৈরব নামে পরিচিত । এই কালভৈরব হলেন তন্ত্র সাধনার প্রধান দেবতা। ৮ ভৈরবের মধ্যে অন্যতম হলেন কাল ভৈরব ।
৪. হরসিদ্ধি মন্দির
হরসিদ্ধি মন্দিরে স্থাপিত আছেন দেবী অন্নপূর্ণা । যিনি মহাসরস্বতী এবং মহালক্ষ্মীর মিলিত রূপের অধিকারী । একটা সময় পর্যন্ত এই মন্দিরটি ভগ্নপ্রায় ছিল। পরে মারাঠাদের তত্ত্বাবধানে মন্দিরটি পুনঃগৌরব ফিরে পায়।
৫. কালিয়াদেয় প্যালেস
১৪৫৮ সালে নির্মিত এই প্যালেসটি শিপ্রা নদীর তীরে অবস্থিত । বর্তমানে ভগ্নপ্রায় এই প্যালেসটিতে একসময় আকবর, জাহাঙ্গীরের মতো সম্রাটরা এখানে এসেছিলেন । পারস্য স্থাপত্য এর অসাধারণ নিদর্শনের সাক্ষী এই প্যালেস ।
এছাড়াও উজ্জয়িনীতে ইসকন উজ্জয়িনী মন্দির, পীর মাতস্যেন্দ্রনাথ, যন্তরমন্তর, বড় গণেশ মন্দির, দর্শন করে নিতে পারেন ।
কী কী করবেন?
১. রাম ঘাট নৌকাবিহার করে শিপ্রানদী তীরবর্তী স্থানগুলি ভ্রমণ করে নিতে পারেন ।
২. শিপ্রা নদীতে পুন্য স্নান করতে পারেন ।
৩. হরিদ্বার বা বেনারসের মতো রাম ঘাটে শিপ্রা নদীর আরতি দর্শন করে নিতে পারেন।
৪. কুম্ভমেলার সময় গেলে এই মেলা দর্শন করে নিতে পারেন ।
৫. পরিশেষে গোমতী কুণ্ড দর্শন করে নিন ।
কখন যাবেন?
বছরের যে কোনও সময় উজ্জয়িনী ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন ।
কোথায় থাকবেন?
উজ্জয়িনীতে অনেক হোটেল উপলব্ধ আছে । তাই অনলাইনে সার্চ করে নিজের ইচ্ছামতো হোটেল ভাড়া করে নিতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন?
বিমানে - ভারতের যেকোনো বিমানবন্দর থেকে পৌঁছে যান ইন্দোরের দেবী আহল্যাবাই হোলকার বিমানবন্দর। সেখান থেকে ঘণ্টা দেড়েক পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যান গন্তব্যে ।
ট্রেনে - ভারতের যে কোনও বড় শহর থেকে ট্রেনে চেপে পৌঁছে যেতে পারেন উজ্জয়িনী ।