ভারতবর্ষ শিল্প-সংস্কৃতিসমৃদ্ধ এক দেশ। ভারতে বিভিন্ন ছোট ছোট গ্রাম আছে, সংখ্যাভিত্তিক গবেষণাতে কোনও কোনও গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ১০০ জনেরও কম। এই গ্রামগুলো খুব সাধারণ আর শহুরে জীবন যাপন থেকে একদমই আলাদা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি এমনও কিছু গ্রাম ঘুরে দেখেছি যেখানে জন সংখ্যা প্রায় ৫০০ জনের থেকেও কম, আর এই নিরালা নিভৃত অবসরের কারণেই এই স্থানগুলি হয়ে উঠেছে ভারতের অজানা এক গুপ্তধন কোনও এক রহস্যগল্প! নিজের চোখে উপলব্ধি করতে সত্যিই লিখে প্রকাশ করা মুশকিল ! এই গ্রামগুলির এক সংক্ষিপ্ত বিবরণী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম, হাতে সময়-সুযোগ থাকলে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন।
১। হা , অরুণাচল প্রদেশ
জন সংখ্যা : ২৮৯
হা , আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামটি, সমুদ্র তট থেকে ৪৭৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই গ্রামটি ভারতের অন্যতম ছোট স্থানের মধ্যে একটি। এই শান্ত গ্রামটি কুরুং কুমেয় জেলার লংডিং কলিং (পিপ্সরাং) প্রান্তে অবস্থিত। হা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আপনাকে মুগ্ধ করবে এমনটা নয়, এখানে আছে প্রাচীন মেঙ্গা গুহা। স্থানীয় পরিভাষাতে একে বলা হয় মহাদেবের গুহা।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব: ওল্ড জিরো
২। সাংসা , লাহুল, হিমাচল প্রদেশ
জন সংখ্যা : ৩২০
কেলং থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সাংসা নামে একটি গ্রাম। এখানে সর্বমোট ৭২ টি বাড়ি আছে। তান্দি রাস্তার খুব কাছে সাংসা গ্রামটি অবস্থিত, পর্যটকরা এখানকার দুর্গম রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এখানে ছোট্ট বিরতি নিয়ে থাকে । এই গ্রামে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য করার জন্য ১০০০০ ফুট উঁচুতে একটি গ্রীন হাউস বানানো হয়েছে।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব: মানালি (১২৩ কিমি দূরে)
৩। স্কুরু , নুব্রা ভ্যালি , জম্মু কাশ্মীর
জন সংখ্যা : ২৩০
এই লুকনো গ্রামটিতে যাওয়ার সেরা এবং একমাত্র উপায় হল ৪ দিনের ট্রেক স্যাস্পষ্টে থেকে। স্যাস্পষ্টে পৌঁছনোর জন্য লেহ থেকে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। আরেকটা উপায় হল লেহ থেকে কোনো ট্যুর অপারেটরের সাহায্যে ট্রেকিং অভিযান করতে পারেন। যেই রাকুরুক নদীর ঘাট পার করবেন আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্যে স্কুরু গ্রামের লোকেরা অপেক্ষায় থাকবে। গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা আপনাকে অত্যন্ত সরলভাবে নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশী করে তুলবে এবং নিজেদের বাড়িতে আপনাকে সযত্নে থাকতেও দেবে । এই প্রসঙ্গে বলে রাখা প্রয়োজন এই গ্রামটিতে পৌঁছনোর পথ সোজা নয়, আপনাকে সমুদ্র তট থেকে ১০০০ফুট উচ্চতায় ট্রেকিং করে পৌঁছতে হবে, তবে আপনার পরিশ্রম সার্থক হবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংস্পর্শে।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব: খারদুং লা
৪। কাঞ্জি , লেহ, জম্মু কাশ্মীর
জন সংখ্যা: ৩২৫
কাঞ্জি গ্রামটি সমুদ্র তট থেকে ১২০০০ ফুট উঁচুতে , লেহ জেলার একটি গ্রাম। কার্গিল জেলা থেকে গাড়িতে আর পরে পাহাড় চড়ে পৌঁছতে হয় এই গ্রামে। যারা রংদুম গোম্পার ট্রেক করে থাকে তারা প্রায় এই গ্রামটিতে আসে। যেহেতু গ্রামটি কাঞ্জি নদীর তীরে সেহেতু স্থানীয় লোকেদের যেকোনও কাজের জন্য (যেমন স্কুল , কলেজ , মার্কেট) নদী পারাপার করতে হয়।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব: কার্গিল
৫। নিতই, কিফিরে, নাগাল্যান্ড
জন সংখ্যা : ৪০২
নিতই গ্রামটি পর্যটকদের কাছে সেভাবে মান্যতা পায় না একেবারেই অবহেলিত বলা যায় কিন্তু এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সর্বাধিক সুন্দর। এখানকার গ্রামে যদিও লোক সংখ্যা খুব কম তবুও ৮০ শতাংশ শিক্ষিত। কিফিরে জেলা থেকে (কোহিমা থেকে ৮ ঘণ্টা দূর) খুব সহজ ভাবেই এই গ্রামে পৌঁছনো যায়।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব্য : কিফিরে ( ২৪৮ কিলোমিটার কোহিমা থেকে )
৬। ওয়ারিসফিস্টন , লেহ , জম্মু কাশ্মীর
জন সংখ্যা : ২৫৮
ওয়ারিসফিস্টন নুব্রা নদীর কোলেই অবস্থিত। যদিও নুব্রা ভ্যালি পর্যটকের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় তা সত্ত্বেও ওয়ারিসফিস্টন এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গিয়েছে। এনসা গোম্পাও এই গ্রাম থেকে খুবই কাছে। এনসা গোম্পা থেকে পুরো নুব্রা উপত্যকার মরুভূমি আর নদী দেখা যায়।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব্য : লেহ (১৪৭ কিলোমিটার ভায়া খারদুংলা )
৭। কিব্বের , স্পিতি , হিমাচল প্রদেশ
জন সংখ্যা : ৩৬৬
এই প্রসিদ্ধ গ্রামটি সমুদ্র তট থেকে ১৪২০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। কিব্বের নামের এই গ্রামটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম নামেও সুপরিচিত। কিব্বেরে মোট ৪০টা বাড়ি আছে, যেগুলোর বেশিরভাগই স্থানীয় মাটি ও পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। গ্রামটি যদিও হিমাচলে অবস্থিত তবুও একদম আলাদা একটা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ধরে রেখেছে। কিব্বের, কাজা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, অদূরেই রয়েছে প্রাচীন গোম্ফা বা গুহা।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব্য : মানালি ( ১৮৮ কিমি দূরে )
৮। লোসার , স্পিতি , হিমাচল প্রদেশ
জন সংখ্যা : ৩২৮
লোসার হলো মানালি থেকে আসলে স্পিতির প্রবেশপথ। গ্রামটি খুবই শান্ত এবং স্থানীয় লোকেরা ভালোই চাষাবাদ করে থাকে। এখানে একটি মাত্র ছোট ধাবা আছে , যেখানে কালো চা আর বাড়ির বানানো খাবার পাওয়া যায়। লোসার চন্দ্রা নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় পুরো গ্রামে নদীর কলকল শব্দে বয়ে চলার শান্ত নীরব ধ্বনি শোনা যায় ।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব্য : মানালি ( ১৪৫ কিমি দূরে )
৯। সাংকৃ , উত্তর কাশি, উত্তরাখন্ড
জন সংখ্যা : ২৭০
সাংকৃ হচ্ছে প্রথম শিবির উত্তরাখণ্ডে হার কি ধুন বা কেদারকণ্ঠা ট্রেক যেতে হলে। এখানে পর্বতারোহীদের জন্য একটা ছোট্ট বাজার আছে। সাংকৃ গ্রামে ৭৭ টি বাড়ি আছে, যার মধ্যে ৩ টি গেস্ট হাউস। স্থানীয় লোকেরা নিজেদের বাড়িতেও পর্বতারোহীদের থাকতে দেয়। সেখানে আতিথেয়তা বা আপ্যায়নের কোনও ত্রুটি পাবেন না।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব্য : মুসোরি (১৫৩ কিমি )
১০। সেল্পেম , দক্ষিণ গোয়া , গোয়া
জন সংখ্যা : ২৫৫
আপনি যদি ভেবে থাকেন যে গোয়া শহরে শুধু বিচ আর শ্যাক আছে তাহলে ভুল করবেন। এই জনপ্রিয় রাজ্যতে অনেক নাম না জানা গ্রাম আছে যেটা ঘুরে দেখতে পারেন। সেল্পেম এইরকমই একটি গ্রাম, সল্লুইম নদীর তীরে অবস্থিত। এই গ্রামের প্রধান আকর্ষণ হলো কুর্দি মহাদেবের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব্য : পানাজি ( ৬২ কিমি দূরে )
১১। গান্দাউলিম , উত্তর গোয়া
জন সংখ্যা : ৩০১
গান্দাউলিম গ্রামটি কুমবুর্জুয়া পরিখার তীরে স্থিত। পরিখাটিতে জানা যায় প্রচুর কুমির দেখা যায়। সন্ত ব্রাজ চার্চ খুব জনপ্রিয় এই গ্রামের, প্রচুর লোক এই চার্চটি দেখতে আসে। এই গ্রামটির অন্যতম বিশেষত্ব হল গ্রামের প্রায় ৯৫% শিক্ষিত লোক এখানে বাস করে থাকে।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব্য : পানাজি ( ১৫ কিমি দূরে )
১২। ইস্ট আইল্যান্ড , আন্দামান নিকোবর
জন সংখ্যা : ১৬
যদি জন সাধারণের থেকে নিজেকে একদম বিছিন্ন করে ফেলতে চান তাহলে এই দ্বীপটি আপনার জন্য যথাযথ হবে। আন্দামানের উত্তর দিকে এই ইস্ট আইল্যান্ডটি অবস্থিত। সবচেয়ে নিকটতম এয়ারপোর্ট হলো পোর্ট ব্লেয়ার। আপনি যদি এখানে নিজের জন্য শ্যাক চান তাহলে স্থানীয় লোকেরা তা জোগাড় করে দেন।
নিকটতম পরিচিত গন্ত্যব্য : পোর্ট ব্লেয়ার ( সুভাষগ্রাম থেকে নৌকা করে এই দ্বীপে পৌঁছাতে পারবেন )
যদি এই প্রবন্ধটি পছন্দ হয় , তাহলে আপনি আমার ওয়েবসাইট আই "উইশ আই ওয়াস হিয়ার" দেখতে পারেন।
এখন Covid -19এর জন্য আমরা আপনাদের ঘুরতে যেতে বলছি না, তবে এখন বাড়িতে বসে আপনারা ভবিষ্যতে ঘোরার পরিকল্পনা করে ফেলতেই পারেন। এখন বেড়াতে যাওয়া ঠিক হবে না। সাবধানে থাকবেন।