উত্তর পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য হল ত্রিপুরা; যার উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিমে রয়েছে বাংলাদেশের কিছু অংশ আর পূর্ব দিকে রয়েছে আসাম ও মিজোরাম। ত্রিপুরাকে ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। এই রাজ্যের রাজধানী আগরতলাও বেশ বিখ্যাত। হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত এবং পুরাণে ত্রিপুরা রাজ্যের নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে এই ত্রিপুরার ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের কথা কিন্তু অনেকেরই অজানা। আজ আমরা জেনে এই মন্দিরের কথা!
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের প্রাককথা-
ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে মাতাবাড়ি গ্রামে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির অবস্থিত। ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা ধন্য মানিক্য এই জাগ্রত মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। সতীর ৫১ শক্তিপীঠের মধ্যে এটি অন্যতম। মনে করা হয় সতী ডান পা এই স্থানে পতিত হয়েছিল। তাই এই মন্দিরে শক্তিকে ত্রিপুরা সুন্দরী বা ত্রিপুরেশ্বরী হিসাবে পুজো করা হয়। মধ্যযুগে মহারাজা ধন্য মানিক্য দেবীর স্বপ্নাদেশের পর চট্টগ্রাম থেকে দেবী চট্টেশ্বরীর বিগ্রহ নিয়ে এসে মাতাবাড়ির একটি ছোট পাহাড়ের উপর স্থাপন করেন। এই পাহাড়ের আকৃতি ঠিক কচ্ছপের কুঁচিতির মত ছিল বলে এই শক্তিপীঠের নামকরণ করা হয় কুরুমা পীঠ।
কষ্টিপাথরের দেবীমূর্তি এই মন্দিরে পূজিত হয়। মহারাজা ধন্য মানিক্য এই মন্দিরটি হিন্দু-বৌদ্ধ-ইসলামিক শৈলী সমন্বয় গড়ে তুলেছিলেন। প্রধান মন্দিরটি দিল্লীর মুঘল শাসনের পূর্বে ত্রিপুরার মহারাজা বাংলার রত্ন শৈলী সহযোগে ৩ স্তরীয় ছাদ বিশিষ্ট এক ঘনক্ষেত্র আকারে নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরে দুটি অনুরূপ দেবীমূর্তি রয়েছে। ৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মূর্তিটি ত্রিপুরাসুন্দরী নামে পরিচিত এবং অনুরূপ ২ ফুট লম্বা ছোট মূর্তিটিকে ছোটমা বা চন্ডীমাতা নামে চিহ্নিত করা হয়। মন্দিরে নারায়ণ শিলা রয়েছে।
প্রতিদিন ভোর চারটের সময় দেবী মায়ের মঙ্গল আরতি ও ভোগ নিবেদন করা হয়। তারপর সকাল আটটায় শুরু হয় দেবী স্নানকার্য। এরপর সকাল সাড়ে নয়টায় বলি দিয়ে মায়ের পুজো শুরু হয়। বিকেল বেলা আবার সন্ধে সাতটায় মায়ের সন্ধ্যা আরতি শুরু হয় এবং রাত্রি সাড়ে ন’টার সময় ভোগ এবং মায়ের নিদ্রা সম্পন্ন হয়। তবে এই মন্দিরে বলির ক্ষেত্রে মায়ের সঙ্গিনী ডাকিনী যোগিনীদের উদ্দেশ্যে তা উৎসর্গ করা হয়। সেই বলির কিছু অংশ কল্যাণ সাগরের কচ্ছপ, মাছ ও সরীসৃপের দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মন্দিরের পূর্বদিকে ৬.৪ একর জমি জুড়ে এই কল্যান সাগর অবস্থিত। সাগরের জলে বিভিন্ন জলজ প্রাণী, মাছ এবং কচ্ছপ রয়েছে। পুণ্যার্থীরা পুণ্যার্জন করার জন্য এখানে এসে এই সমস্ত জলজ প্রাণীদেরকে বিস্কুট, মুড়ি খাওয়ান। প্রতিবছর দীপাবলি উপলক্ষ্যে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরে এক সুবিশাল মেলার আয়োজন করা হয়।
কীভাবে পৌঁছবেন-
কলকাতা থেকে বাসে করে আগরতলা পৌঁছাতে হবে। আগরতলা থেকে পুনঃরায় বাসে করে উদয়পুর পৌঁছানো যায়।
অথবা,
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আগরতলা এবং আগরতলা থেকে গাড়ি করে উদয়পুর।