বাঙালির কাছে জঙ্গল এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভব। অনেকেই জঙ্গল পছন্দ করেন। জঙ্গলে ঘুরতে যান। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে জনপ্রিয় জঙ্গল ডেস্টিনেশন হল ডুয়ার্স। কিন্তু আমরা যারা দক্ষিণবঙ্গে বাস করি তাদের কাছে রোজ রোজ ডুয়ার্স যাওয়া সম্ভব নয়। তাই কলকাতার হাতের কাছে আজ একটি জঙ্গলের সন্ধান দেব। কলকাতা থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে গেলে সেই জঙ্গল পৌঁছে যাওয়া যাবে খুব সহজেই।
কলকাতা থেকে মাত্র 130 কিলোমিটার দূরে বর্ধমান এ অবস্থিত ভালকি মাচান। ভালকি মাচান বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি জঙ্গল। এই জঙ্গলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। জঙ্গলের ভিতরে একটি বড় টাওয়ার রয়েছে যা এখন অনেকটাই ভগ্নপ্রায়। এই টাওয়ারকে ভালকি মাচান বলা হয় এবং এই টাওয়ার এর নামে এলাকার নাম ভালকি মাচান। ব্রিটিশ রাজত্বের সময় স্থানীয় জমিদার বর্ধমানের রাজার সঙ্গে সাংকেতিক যোগাযোগ এবং স্থানীয় জঙ্গলে-পাহাড়ে চালাবার জন্য এই টাওয়ার এর নির্মাণ করেছিলেন। দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর ভ্রমণ প্রেমী মানুষ এখন ভালকি মাচান ঘুরতে আসেন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সবসময় এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তবে বেশিরভাগ লোক এখানে একদিন কিংবা দু দিনের জন্য ঘুরতে আসেন।
কিভাবে যাবেন?
বর্ধমান লোকাল ধরে পারাজ স্টেশন থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ভালকি মাচান। তবে গাড়ি করে যাওয়াই শ্রেয়। দুর্গাপুর থেকে যেতে হলে, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বুদবুদ, মানকর হয়ে অভিরামপুর। সেখান থেকে সামান্য দূরেই ভালকি মাচান। ছোট ছোট জনপদ পেরিয়ে, রাস্তায় বসে থাকা ছাগল ছানাদের সরিয়ে সোজা পিচের রাস্তা ধরে যাওয়া যায় ভালকি মাচানে। কলকাতার দিক থেকে গেলেও দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হয়ে ধরে গলসি পেরিয়ে ডান দিকে একটি রাস্তা চলে গিয়েছে সেই রাস্তা ধরে ভালকি মাচান যাওয়া যায়। এখানে যাওয়ার জন্য গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে যাওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায়।
কোথায় থাকবেন ?
এখানে থাকার একমাত্র ঠিকানা হলো অরণ্য সুন্দরী গেস্ট হাউস। ফোনে এদের সঙ্গে কথা হলে ওরা এটাকে রিসোর্ট বলে দাবি করে। কিন্তু এটি কোন ভাবেই রিসোর্ট নয় খুব বেশি হলে লজ কিংবা গেস্টহাউস বলা চলে। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে লিজ মারফত একটিমাত্র এটি থাকা ঠিকানা। রুম গুলো খুবই মাঝারিমানের। তবে ভাড়া হিসেবে রুমের মান ভালো নয়। সর্বনিম্ন রুম 1000 টাকা নন এসি রুম। এরপর এদের দেড় হাজার দুই হাজার টাকার রুম রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো এরা আমার গাড়ি থেকে দুবার তেল চুরি করেছিল। অনেক বলার পরেও তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখায়নি। এছাড়াও 400 টাকায় এদের ডরমিটরি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
আর গাড়ি করে আপনারা এখানে যান তাহলে ফেরার পথে শের আফগান ও পীরবাহারাম এর সমাধি এবং নবাব বাড়ি দেখে ফিরতে পারেন। আর হাতে বেশী সময় থাকলে বর্ধমানের 108 শিব মন্দির এবং প্রতাপেশ্বর (যেটা কিনা টেরাকোটার মন্দির) সেগুলো দেখেও ফিরতে পারেন।