সর্ব ধর্মের মিলনস্থল আমাদের ভারতবর্ষ। আর ভারতবর্ষের প্রতিটি প্রান্তেই রয়েছে বিভিন্ন ধার্মিক আচার-অনুষ্ঠান, যেগুলি হয়ত অনেকেরই অজানা। করোনা পরিস্থিতিতে এই সমস্ত শুভ কার্যগুলিতে ব্যাঘাত ঘটলেও সদিচ্ছা এবং ভক্তিপূর্ণ মনোভাব নিয়ে এখনও কিছু কিছু জায়গায় অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে।
আজ ২৪শে জুন ২০২১! বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজকের দিনটি একটি বিশেষ অর্থ বহন করে। আজ শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার মহোৎসব। প্রত্যেক বছর এই দিনে প্রতিটি জগন্নাথ মন্দির খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে সেজে ওঠে। হিন্দু ধর্মের প্রত্যেক ভক্তগণ আজকের দিনটিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করেন। কিন্তু কী এই স্নানযাত্রা, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। তাহলে দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক স্নানযাত্রা কী এবং কেন হয়?
জৈষ্ঠ্য মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব কালকে স্মরণ করে রাখার জন্যই এই স্নান যাত্রার আয়োজন করা হয়। স্নান যাত্রার আগের দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শন দেবকে বেদী থেকে নামিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা স্নানের বেদীতে স্থানান্তরিত করা হয়। পুরীর মন্দির প্রাঙ্গণে স্নানমণ্ডপ নামে এক বিশেষ মন্ডপ তৈরি করা হয়। এই মণ্ডপের উচ্চতা এতটাই বড় হয়, যে বাইরে থেকে বিগ্রহগুলিকে দেখতে পাওয়া যায়।
স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন জগন্নাথ দেবের একটি কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর থেকেই স্নানযাত্রা অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। অনুষ্ঠানের দিন সকালবেলা ফুল, বাগান ও কিছু গাছের চিত্র দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়। স্নান মন্ডপের আশেপাশে তোরণ এবং পতাকা লাগানো হয়। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এরপর বিগ্রহগুলির সামনে ধূপধুনো অর্পণ করা হয়। পুরীর মন্দিরের এই স্নান যাত্রা উপলক্ষ্যে সোনার তৈরি এক ধরনের কুয়ো থেকে জল নিয়ে আসা হয়। জল আনার সময় মন্দিরের পুরোহিতরা ভাল করে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন। কারণ তাদের নিঃশ্বাস, এমনকি মুখ থেকে নিঃসৃত কোন রকম দূষিত পদার্থ যেন ধরে না পতিত হয়। স্নানের পূর্বের জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহকে সিল্কের কাপড় দিয়ে আবৃত করা হয় এবং গায়ে লাল ধরনের একরকম গুঁড়োর প্রলেপ দেওয়া হয়। এরপর ১০৮ স্বর্ণপাত্রে রাখা জলের সঙ্গে গঙ্গাজল, কাঁচা দুধ, আতর, চন্দন মিশিয়ে বিগ্রহের অভিষেক করানো হয়।
সাথে চলে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, কীর্তন, শঙ্খ ধ্বনি। স্নানের পর ১০৮টি তুলসী পাতা জগন্নাথদেবের চরণে দেওয়া হয়। এরপর জগন্নাথদেব ও বলরামকে গজবেশে এবং সুভদ্রা দেবীকে পদ্ম বেশে সজ্জিত করে তোলা হয়।
এরপর তিনমূর্তির মধ্যে সামনে গোলাপ ফুল এবং ৫ রকমের ফল উৎসর্গ করা হয়। এই স্নানযাত্রা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার পর পূর্ণিমা থেকে আষাঢ় মাসের অমাবস্যা পর্যন্ত ১৫ দিন ভগবানকে সকল দর্শনার্থীদের থেকে দূরে রাখা হয়। এই সময় মন্দিরের ভিতরে ভগবানের পূজার্চনা চলে। ১৬তম দিন অর্থাৎ রথযাত্রার দিন জগন্নাথদেবকে সাজিয়ে সকল ভক্তের সামনে দিয়ে গুন্ডিচা মন্দিরে মাসির বাড়ি রথে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
কথিত আছে, স্নানযাত্রার পরের ১৫ দিন জগন্নাথ দেবের প্রবল জ্বর হয়। এটি অনসর পর্যায় নামে পরিচিত। এই সময় ভগবান আয়ুর্বেদিক পাঁচন গ্রহন করে একপক্ষ কালের মধ্যে সুস্থ হন। সেইজন্য এই সময় জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে পটচিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করানো হয় এবং জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা রতন বেদী নামক একটি বিশেষ জায়গায় স্থাপন করা হয়।