হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত কলকাতার আশেপাশে বেশ কিছু পর্যটন স্থান রয়েছে। কোনো একদিন বা সপ্তাহান্তে লং ড্রাইভ কিংবা নদী তীরবর্তী পরিবেশের পারিপার্শ্বিক শোভা দর্শন করার জন্য এই জায়গাগুলি কিন্তু বেশ চমকপ্রদ। সেই কথা মাথায় রেখেই খুব কম সময়ে ঘোরা যায় এমন পাঁচটি জায়গাকে তালিকাভুক্ত করেছি। হাতে যদি খুব অল্প সময় থাকে তাহলে চট করে ঘুরে আসতে পারেন।
তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রথম ৩টি স্থান কলকাতা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। তাই আমার মনে হয়, এটি বাজেটে ডে- ট্রিপের জন্য উপযুক্ত। তবে আপনি যদি এর থেকেও বেশি সময় কাটাতে বা রাতে কোথাও থাকতে চান তার জন্যও রয়েছে অন্য ব্যবস্থা।
পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রূপনারায়ণ নদীর কূলে গড়ে ওঠা কোলাঘাট শহরটি, কলকাতা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় এখানে একটি পিকনিকের জায়গা গড়ে উঠেছে। তাই নববর্ষ ক্রিসমাস এবং বিভিন্ন ছুটিতে এখানে লোকের ভিড় লেগেই থাকে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম শহর কোলাঘাট শহরটি ইলিশ মাছ ও ফুলের জন্য বিখ্যাত।
প্রধান আকর্ষণের বিষয়বস্তু - রূপনারায়ন নদীর কূল।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস।
থাকবার জায়গা - হোটেল সোনার বাংলা, শের-ই-পাঞ্জাব ধাবা।
কলকাতা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবারের একটি ছোট্ট শহর হল রায়চক।
প্রাচীন সময় এখানে একটি দুর্গ ছিল, যেটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তীতে গঙ্গার পাড়ে অবস্থিত রেডিসন দুর্গকে পুনর্নির্মাণ করে একটি পাঁচতারা হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। রোমাঞ্চকর ভ্রমণপ্রেমীদের অ্যাডভেঞ্চারের জন্য রয়েছে রায়চক জেটি বা পার্শ্ববর্তী নুরপুর জেটি। এখান থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কুকড়াহাটি বা হাওড়া জেলার গাদিয়াড়া যাওয়ার জন্য অনায়াসে নদী তীরবর্তী ফেরির সুবিধা পাবেন।
আপনি যদি জেটি করে ভ্রমণ করতে চান তাহলে খরচ পড়বে ৩০ মিনিটের জন্য ১০ টাকা। গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণ করার সময় শীতল হাওয়া আপনার জীবনে এক অদ্ভুত ছন্দের সৃষ্টি করবে।
এই হোটেলটি বেশ ব্যয়বহুল, তাই আপনি যদি এই সুবিধাটি দিতে সমর্থ হন তাহলে অন্তত একবার দু'দিনের জন্য এখানে গিয়ে ঘুরে আসুন। এরসাথে আপনি চাইলে গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণ করার জন্য একটি ক্রুজ ভাড়া করতে পারেন। তবে এটিও খুব ব্যয়বহুল।
আকর্ষণীয় বিষয় - হুগলি নদীর তীর।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - সারা বছরই এখানে যাওয়া যায় (তবে গ্রীষ্মকাল বাদে)।
থাকবার জায়গা - গঙ্গার তীর রায়চক, দ্যা ফোর্ট, হোটেল সি বার্ড ইনটেল।
খাবারের জায়গা - সোনার তরী অথবা রিফ্লেকশনস এট দ্যা ফোর্ট। এই দুটি জায়গা ছাড়া তেমন কোনো রেস্তরাঁ এখানে নেই। যদি আপনি এই ভ্রমণ থেকে একটু সঞ্চয় করতে চান, তাহলে কলকাতা বা আমতলা থেকে খাবার সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারেন।
ইছামতি নদীর তীরে, কলকাতা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে টাকি শহরটি অবস্থিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইছামতি নদীর অপর পাড়ে বাংলাদেশে রয়েছে।
সুন্দরী, গোলপাতা ইত্যাদি পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী বিভিন্ন রকম গাছের সমন্বয়ে টাকি পৌরসভা এখানে একটি ছোট সুন্দরবন তৈরি করেছেন। ফেরিঘাট থেকে ফেরি করে আপনি অনায়াসে প্রায় ১২৯ একর জমি নিয়ে গঠিত মাছরাঙ্গা দ্বীপটি ঘুরে দেখতে পারবেন। এছাড়াও ১০০ টাকা দিয়ে একটি ভ্যান রিক্সা ভাড়া করে আপনি টাকির বিভিন্ন ঐতিহাসিক জায়গাগুলি অনায়াসে ভ্রমণ করতে পারবেন।
আকর্ষণীয় বিষয় - ইছামতি নদীর তীর, ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ি।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময় - সারা বছরই এখানে ঘুরতে আসা যায় (গ্রীষ্ম কাল বাদে)।
থাকবার জায়গা - টাকি গেস্ট হাউস, টাকি টুরিস্ট বাংলো।
খাওয়ার জায়গা - স্থানীয় পান্থশালা, যেখানে আপনি ইচ্ছামতি নদীর সুস্বাদু মাছ খুব স্বল্প দামে পেয়ে যাবেন।
টিপ- আমি উপরিউক্ত থাকবার জায়গাগুলির মধ্যে সবকয়টি বাদ দিয়েছিলাম। ঘুরতে যাওয়ার জন্য শনিবার আমি খুব সকালে বাড়ি থেকে বের হই এবং মোটামুটি শনিবার রাতেই বাড়ি ফিরে আসি, এবং পরের দিন রবিবার থাকায় সারাদিন ঘুমিয়ে ক্লান্তি দূর করি। সব কিছু যোগ করে মোটামুটি ২০০ টাকার মধ্যে আমি প্রত্যেকটা ঘোরার জায়গা সম্পন্ন করেছি।
এরপরে যে দুটো জায়গার কথা আমি বলব সেখানে রাত্রিযাপন করাটাই আমার সঠিক বলে মনে হয়েছে। কারণেই জায়গাগুলি কলকাতা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেই জন্য আপনি যদি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে এতদূর পথ অতিক্রম করে আবার একদিনেই ফিরে আসেন, তাহলে আপনার শরীর ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে।
৪. তাজপুর ( কলকাতা থেকে প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত)-
বঙ্গোপসাগরের তীরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত তাজপুর, মন্দারমণি এবং শঙ্করপুর কলকাতা থেকে প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে প্রায় ১৪০০ একর জমি নিয়ে মৎস্য চাষের একটি প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। এই স্থানীয় অনেক মাছের ভেড়ি এবং মাছ চাষের পুকুর দেখতে পাওয়া যায়। সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে অত্যন্ত পরিষ্কার বলে এখানে বহু লাল কাঁকড়ার দেখা মেলে।
এই সমুদ্রসৈকতটি একটু অদ্ভুত। এটি দেখতে অনেকটা উল্টো অর্ধচন্দ্রাকৃতির মত। সেই জন্য এখানে আগত পর্যটকরা এই জায়গার প্যানারমিক দৃশ্য দেখতে খুব পছন্দ করেন। সমুদ্রসৈকতে খুঁজে পাবেন বিপুল লাল কাঁকড়া, যেগুলি বালিয়াড়িতে লুকোচুরি খেলে। এদের উপস্থিতি এই সমুদ্রসৈকতকে আরও বেশি রঙিন করে তুলেছে। আশেপাশে রয়েছে জেলেদের গ্রাম, যেখানে গেলে অনায়াসে তাদের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এই জায়গা থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে একটি উপহ্রদ রয়েছে।
আকর্ষণীয় বিষয় - দ্যা ভার্জিন বিচ, লাল কাঁকড়া, ঝাউ বন এবং সমুদ্রের গর্জন।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময় - অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস।
থাকবার জায়গা - তাজপুর রিট্রিট, তাজপুর নেচার ক্যাম্প।
খাওয়ার জায়গা - বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক খাবার স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।
কলকাতা থেকে ১৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাকদ্বীপের নামখানায় (কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ব্লক) সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি রিসোর্ট হল বকখালি। দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে অবস্থিত বিভিন্ন বদ্বীপ-এর মধ্যে এটি অন্যতম, যেগুলির বেশিরভাগই সুন্দরবনের অংশ। এর মধ্যে কিছু সংকীর্ণ খাঁড়ির ব্রিজের সাথে সংযোগ রয়েছে।
আকর্ষণীয় বিষয় - হেনরি'স আইল্যান্ড, এখানকার নিজস্ব সমুদ্র সৈকত।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাসে।সাগরদ্বীপের মেলার জন্য প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে ৯ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত এখানকার সমস্ত রাস্তা বন্ধ থাকে।
থাকবার জায়গা - হোটেল আইকন হেরিটেজ, হোটেল সি ভিউ।
খাওয়ার জায়গা - এখানে সব জায়গায় বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক খাবার পেয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন: কলকাতার সেরা রেস্তোরাঁ, বিজ্ঞান শহর কলকাতা
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমি দীঘা এবং মন্দারমনির কথা এখানে উল্লেখ করলাম না কারণ বর্তমানে এগুলি ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে ঘুরতে যাওয়ার এক প্রবাহমান ধারা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।