
ধরুন আপনি কোথাও একটা ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ করে দেখতে পেলেন সেই জায়গার বিভিন্ন দেওয়ালে রাস্তায় বা নদীর ধারে বার্তাবহনকারী বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য চিত্র বা লেখা রয়েছে। আপনার নজর কিন্তু সব ছেড়ে গিয়ে ঠিক ওদিকেই পড়বে। কারণ প্রথমত, রঙিন জিনিস আমাদেরকে আকর্ষণ করে। আর দ্বিতীয়ত, এরকম অদ্ভুত সুসজ্জিত একটি পরিবেশ কিছুতেই আপনার চোখের আড়াল হতে পারবে না। সেগুলিকে খুব কাছে থেকে দেখতে আপনি বাধ্য হবেনই।এবার প্রশ্ন হল তাহলে এই রঙিন বার্তা বা আঁকাগুলি তো কিছু নাম থাকা দরকার। দেওয়াল চিত্র বা দেওয়ার লেখন বলে তো আর পরিচিত হতে পারে না। তাহলে কী? ঠিক ধরেছেন আজকে আমাদের বিষয় হল গ্রাফিটি।

উৎপত্তি-
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে গ্রাফিটিকে মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়েছে। কিন্তু এটির একটি নিজস্ব শিল্পসত্ত্বা থাকতে পারে; তা কারোর চিন্তাভাবনাতেই আসে নি। ১৯৬০ সালে ফিলাডেলফিয়ার কোন একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র একটি মেয়ের তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য প্রথমবার এইরকম কিছু চিত্র দেওয়ালে আঁকতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, সে বিভিন্ন জায়গার দেওয়ালে এবং পাতাল রেলের গায়ে এই চিত্র আঁকতে থাকে। তার কাজ দেখে আরও ছাত্রছাত্রীরা অনুপ্রাণিত হয়ে তারাও খুব দ্রুততার সাথে এই কাজটি করতে শুরু করে।

ফলে, একসময় গ্রাফিটি বিদ্রোহের অন্যতম অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। কারণ গ্রাফিটির সাহায্যে খুব সহজেই নিজের মনের কথা বা পারিপার্শ্বিক কোন বার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া যায়। এ ঘটনার প্রায় কুড়ি বছর পর অর্থাৎ ১৯৮০ সালে গ্রাফিটি নিজের জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়। তখন থেকে গ্রাফিটিকে শিল্পের একটি অঙ্গ হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং তা গ্যালারিতে স্থান পায়।
ভারতবর্ষের গ্রাফিটি শিল্প-

মূলত পপ সংস্কৃতি এবং সমসাময়িক শিল্পগুলিকে এই গ্রাফিটির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। তবে বর্তমানে ভারতবর্ষও এই গ্রাফিটি শিল্পের প্রতি দৃষ্টি আরোপ করেছে। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত স্ট্রীট অফ স্টাইলস গ্রাফিটি ফেস্টিভ্যালে ভারতবর্ষের চারজন স্বনামধন্য গ্রাফিটি শিল্পী (জাক, মুজ, এনএমই, জিরো) অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই প্রতিযোগিতাটি তাঁদের কাছে এবং সম্পূর্ন ভারতের কাছে এই শিল্পকে একটি অন্যতম স্বীকৃতি প্রদান করে।

সমস্যা-
• বর্তমানে ভারতবর্ষে গ্রাফিটি শিল্পটি জনপ্রিয়তা লাভ করলেও বহু মানুষ আজও এই শিল্পটি সম্বন্ধে তেমন অবগত নয়। তাই জনপ্রিয়তার সাথে সাথে বেশ কিছু সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। তার মধ্যে প্রধান হল অর্থ। গ্রাফিটি শিল্পীরা নিজেদের উপার্জন করা অর্থ থেকে খরচ করে এই সমস্ত শিল্পকলা প্রদান করে থাকেন।
• গ্রাফিটির মূল অংশ হল রং আর এই রং বেশ ব্যয়বহুল।
• কাজটি সম্পন্ন নিজস্ব হওয়ার কারণে সরকারিভাবে তেমন কোনও সাহায্য পাওয়া যায় না।
• ফলত, অনেক গ্রাফিটি শিল্পী তাদের শিল্পসত্ত্বাকে পরিস্থিতির চাপে রুদ্ধ করতে বাধ্য হয়।
• কোথাও কোথাও সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা রাস্তায় বা দেওয়ালে বার্তা প্রচার করতে চাইলেও সেখানে বাধা দেওয়া হয়।
• গ্রাফিটি শিল্পীরা কোন কোম্পানির কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য দ্বারস্থ হলে তারা ব্যাপারটায় তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
• সময় ও পারিবারিকগত কারণে অর্থ উপার্জনের চাপ মাথায় এসে পড়লে অনেক গ্রাফিটি শিল্পী এই ভালোলাগার বিষয়টি বর্জন করতে বাধ্য হয়।

তবে এই সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করেও কিছু গ্রাফিটি শিল্পী শুধু ভারতবর্ষ নয়, পশ্চিমবঙ্গেও নিজেদের কাজের প্রমাণ রেখে চলেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনার বিভিন্ন রকম সচেতনতামূলক বার্তা প্রদান করার জন্য রাস্তায় এবং বাড়ির দেওয়ালে গ্রাফিটির মাধ্যমে অনেক কিছু বার্তা দিয়ে চলেছে। ফলে যে সমস্ত মানুষ দূরদর্শন বা সংবাদপত্র পড়তে অক্ষম তারা এই ছবিগুলি দেখেও নিজেদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলছেন।


শুধু তাই নয়,পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এই সমস্ত গ্রাফিটি শিল্পীরা এক অনন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা কেউ কেউ বাংলা কার্টুন এবং উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রকে গ্রাফিটির মাধ্যমে তুলে ধরতে জনসাধারণের কাছে।

বিশ্বের কিছু বিখ্যাত গ্রাফিটি শিল্পী এবং তাঁদের শিল্প-
১. জর্জ লি কুইনোনেস -

২. ব্লু -

৩. রিচার্ড “রিচি” মিরান্ড -

৪. সান্দ্র ফেবারা -

৫. আলেক্সান্দ্রে ম্যানুয়েল দিয়াস ফার্ত -

৬. ওতাভিও পান্ডল্ফ এবং গুস্তাভো পান্ডল্ফ -

৭. ব্লেক লি রট -

৮. এডুয়ার্ড কোবরা -

৯. ডেভিড চয় -

১০. বাঁস্কি -
