এই নতুন বছরের শুরুতে আমার গন্তব্য ছিল "মামা ভাগ্নে" পাহাড়। জানুয়ারি মাস সবে শুরু হয়েছে। আমি আমার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম "মামা ভাগ্নে" পাহাড়ের উদ্দেশ্যে।
আমার গ্রামের বাড়ি চিনপাই। সেখান থেকে "মামা ভাগ্নে" পাহাড়ের দূরত্ব প্রায় ১০-১২ কিমি। এটি বীরভূম জেলার দুবরাজপুর শহরের নিকট অবস্থিত। বীরভূম জেলার একমাত্র পাহাড় - "মামা ভাগনে"।
"মামা ভাগ্নে" পাহাড়টি গ্রানাইট শীলা দিয়ে তৈরী। পশিমবঙ্গের বীরভূম জেলার এক অন্যতম আকর্ষণ কেন্দ্র ও পর্যটন এলাকা।
"মামা ভাগ্নে" পাহাড়ের সৃষ্টিকথা:-
"মামা ভাগ্নে" পাহাড়ের সৃষ্টি নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। অনেক রকমের কাহিনি শোনা যায়।
সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল,
রামায়ণের রাম যখন তাঁর পত্নী সীতাকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে লঙ্কা যাত্রা করেছিলেন তখন হিমালয় থেকে পাথর আনা হচ্ছিল রথে করে সেতুবন্ধনের জন্য। সেসময় কিছু পাথর এখানে পরে যায়। আর এইভাবেই সৃষ্টি হয় "মামা ভাগ্নে" পাহাড়ের।
ওপর এক পৌরাণিক কাহিনি হল,
দেবতা বিশ্বকর্মা, দেবাদিদেব মহাদেবের আদেশে এক রাতের মধ্যে দ্বিতীয় কাশি নির্মাণ করছিলেন। সেসময় কিছু পাথর পরে এর সৃষ্টি হয়।
বিশেষ আকর্ষণ:-
১: এই অঞ্চলটি ছোট ছোট বিক্ষিপ্ত পাথরের টিলা দারা নির্মিত। সঙ্গে আছে ছোটো ঘন জঙ্গল। "মামা ভাগ্নে" পাহাড়ের উচ্চতা বেশি হবে না। একটা আনুমানিক ১৫ ফুট এবং আরেকটা আনুমানিক ১৩ ফুট।
২: বিশেষত যে দুটো পাথরের নামানুসারে এই পুরো অঞ্চলটার নাম হয়েছে সেই মামা ও ভাগ্নে পাথর দুটি এখানে দেখতে পাবেন।
৩: মামা ও ভাগ্নে পাথর দুটির কাছেই আছে একটা কালি মন্দির এবং প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট পাহারেশ্বরী যোনি।
৪: এই অঞ্চলেই রয়েছে ত্রিলেশ্বর মহাদেবের মন্দির। কথিত আছে, এখানে যে শিলাখন্ডটি ত্রিলেশ্বর মহাদেব রূপে পূজিত হয় সেটি নাকি প্রতিদিন একতিল-একতিল করে আকারে বৃদ্ধি পায়।
৫: এই অঞ্চলে সত্যজিৎ রায়ের অভিযান, গুপিগাইন বাঘা বাইন, এবং সন্দীপ রায়ের রবার্টসনের রুবি, গোঁসাইপুর সরগরম ইত্যাদি চলচ্চিত্রও শুটিং হয়েছে।
৬: এছাড়া এখানে আছে একটা পার্ক। পার্কের এন্ট্রি ফি হলো মাত্র ১০ টাকা। পার্কটি দারুণভাবে সাজানো। ছোটদের জন্য আছে আকর্ষণীয় খেলার সামগ্রী। বড়দের জন্য মনকে শান্ত করার আদর্শ স্থান।
"মামা ভাগনে" পাহাড় কীভাবে আসবেন:-
কলকাতা থেকে প্রথমে বর্ধমান-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। তারপর, সেখান থেকে দুবরাজপুর-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে। বাস ও ট্রেন উভয় মাধ্যমেই আসা যাবে।
দুবরাজপুর বাসস্ট্যান্ড ও রেলওয়ে স্টেশন থেকে অটো রিক্সা অথবা টোটো- ই করে সহজে পৌঁছে যাবেন "মামা ভাগনে" পাহাড়ে।