সমগ্র বাংলা জুড়ে পারিবারিক সম্প্রীতির কারণে নানান প্রথার প্রচলন রয়েছে। চিরাচরিতভাবে পালন করা এই প্রথাগুলির মধ্যে অন্যতম হল জামাইষষ্ঠী ।মূলত শাশুড়ি - জামাইয়ের সম্পর্ককে দৃঢ় করার অপর নাম হল জামাইষষ্ঠী।
কবে প্রথম জামাই ষষ্ঠীর প্রচলন ঘটে?
মোটামুটি বৈদিক যুগ থেকেই বাংলায় জামাইষষ্ঠী পালন করা শুরু হয়। প্রধানত ষষ্ঠীদেবীকে তুষ্ঠ রাখার জন্যই জ্যৈষ্ঠ মাসের বিশেষ তিথিতে মহিলারা জামাইষষ্ঠীর ব্রত রাখেন ।
কীভাবে জামাইষষ্ঠী প্রথার উদ্ভব হয়?
একদা এক লোভী ভদ্রমহিলা তার নিজের বাড়ির রান্না করা মাছ চুরি করে খেয়ে এক বিড়ালের উপর দোষারোপ করেন । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, বিড়াল মা ষষ্ঠীর বাহন হিসেবে পরিচিত । এই পাপের কারণে তিনি একের পর এক সন্তানকে হারান । হারানো সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি গভীর জঙ্গলে গিয়ে ষষ্ঠীদেবীর আরাধনা করেন এবং তার সন্তানদের ফিরে পান । তবে চুরির অপরাধে ভদ্রমহিলার শ্বশুরবাড়ির লোকজন শাস্তি হিসেবে পিতৃগৃহে যাওয়ার অনুমতি চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেন।
অন্যদিকে ভদ্রমহিলার পিতৃগৃহের পরিজন তাদের মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন । তাই ষষ্ঠী পুজোর দিন মেয়েকে দেখার জন্য জামাইকে আমন্ত্রণ করেন । আর এই ঘটনা থেকেই জামাইষষ্ঠী প্রথার উদ্ভব হয় ।
জামাইষষ্ঠী কেন্দ্রিক লোকগাথা -
শোনা যায় একটা সময় বাংলার সংস্কার ছিল বিবাহের পর যতদিন না মেয়ে সন্তানসম্ভবা হচ্ছেন ততদিন সে পিতৃগৃহে যেতে পারবে না । অনেক সময়ই সন্তান ধরণের কোনও রকম দেরি হলে বিবাহিত মেয়ের দর্শন পেতে তার বাবা মায়ের অনেক বছর কেটে যেত । নিজের কন্যাসন্তানকে দেখার জন্য তারা ব্যাকুল হয়ে উঠতেন । তাই কন্যাদর্শনের উদ্দেশ্যেই ষষ্ঠী পুজোর দিন জামাইষষ্ঠীর আয়োজন শুরু করা হয় ।
জামাইষষ্ঠীর রীতি-নীতি -
জামাইষষ্ঠীর তিথিতে শাশুড়িরা তাদের জামাই এবং মেয়ের শুভ কামনায় ব্রত রাখেন ।এই শুভ দিনে শাশুড়িরা উপোস করে জামাকাপড়, পাঁচ রকমের ফল, পান-সুপারি, তালের পাখা, কুলো ইত্যাদি নানান শুভ সরঞ্জাম সহকারে জামাইষষ্ঠীর সমস্ত রকম আচার নিষ্ঠাভরে পালন করেন । এছাড়াও নানান পদ রান্না এবং পরিবেশন করে জামাইকে আপ্যায়ন করেন ।
বর্তমান দিনে জামাইষষ্ঠী পালন -
আধুনিক যুগে জামাইষষ্ঠীর প্রাচীন রীতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে । সেই আদি নিয়ম কানুনের পরিবর্তন ঘটলে ও, বংশপরম্পরায় ধারণাটা একই রয়ে গিয়েছে । এখন জামাইষষ্ঠী পালনে পরিবারের সদস্যরা মিলিত হয়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ভিড় জমান ; দুই পরিবারে উপহার আদান প্রদান , গল্প গুজব, সাক্ষাত করা এই সব মিলিয়ে এটি একটি আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে ।
আপাতদৃষ্টিতে লিঙ্গবিভেদের উৎসব হিসেবে মনে হলেও, পারিবারিক সম্প্রীতির মুখ্য নিদর্শন হলো এই জামাইষষ্ঠী । ঘরোয়াভাবে পালিত এই উৎসবটি বাঙালিদের কাছে আজ একটি আনন্দমুখর দিন হিসেবেই পরিচিত ।