বাঙালি ঘরে কিছু টক-ঝাল-মিষ্টি সম্পর্ক দেখা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হল ননদ-বৌদি এবং শাশুড়ি-জামাই-এর সম্পর্ক। এই সম্পর্কগুলি পারিবারিকভাবে তৈরি হলেও, এইগুলিতে জড়িয়ে থাকে অনেক আবেগ, ভালোবাসা এবং কখনও কখনও খুনসুটি। আর সেই জন্য এই সম্পর্কগুলিকে আরও মধুর করে তুলতে বাঙালি পঞ্জিকায় এক একটি স্পেশাল দিন তৈরি করা হয়েছে। ঠিক সেই রকমই বাঙালি ঘরের শাশুড়িদের কাছে একটি আনন্দ ও আবেগের দিন হল জামাই ষষ্ঠী।
জামাই ষষ্ঠী পালনের সময়-
প্রধানত মায়েরা তাদের সন্তানের শুভ কামনায় বিভিন্ন রকম ষষ্ঠী পালন করে থাকেন। জামাই ষষ্ঠীও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রত্যেক শাশুড়ি তার জামাইয়ের মঙ্গল কামনায়, জনসম্পদ বৃদ্ধি এবং শারীরিক সুস্থতা কামনা করে জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে এই ষষ্ঠী পালন করেন। কোথাও কোথাও এই ষষ্ঠী অরণ্য ষষ্ঠী নামেও পরিচিত। এই দিন সকাল থেকে জামাইকে প্রথমে হলুদ মাখানো হয়, তারপর কপালে চন্দনের টিকা দেওয়া হয়।এইদিনের সবথেকে আকর্ষণের বিষয় হল শাশুড়িরা জামাইদের জন্য পঞ্চব্যঞ্জন রান্না করে পরিবেশন করেন।
কথায় বলে, বাঙালি বাড়ির অনুষ্ঠান মানেই কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া। আর সেটা যদি জামাই ষষ্ঠী হয়, তাহলে তো কোন কথায় নেই। শাশুড়িরা সারাদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জামাইদের জন্য নানা পদ রান্না করে যখন জামাইয়ের সামনে সাজিয়ে ধরেন, তখন জামাই স্বাদে-আহ্লাদে আটখানা হয়ে পরেন। এই দিনে সব শাশুড়িদের মধ্যে একটা গুপ্ত প্রতিযোগিতা চলে। কার শাশুড়ি ঠিক কত রকম রান্না করে জামাইকে খাওয়াতে পারেন।
তাহলে এবার দেখা যাক বাঙালি ঘরের জামাই ষষ্ঠীর খাদ্য তালিকায় ঠিক কোন কোন পদ রাখা হয়-
১. বাসন্তী পোলাও/ভাত-
২. পাঁচ রকমের ভাজা-
৩. মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল-
৪. পনিরের তরকারি/ধোকার ডালনা-
৫. কাতলা মাছের কালিয়া-
৬. সর্ষে ইলিশ/ভাপা ইলিশ-
৭. চিংড়ি মাছের মালাইকারি/ডাব চিংড়ি-
৮. ভেটকি পাতুরি-
৯. পাবদা মাছের ঝাল-
১০. খাসির মাংসের কষা-
১১. চিকেন রেজালা/ চিকেন কষা/ তন্দুরি চিকেন-
১২. আমের চাটনি-
১৩. পাঁপড়-
১৪. পাঁচ রকমের মিষ্টি-
১৫. পাঁচ রকমের ফল-
১৬. দই-
এবং শেষপাতে,
১৭. পান-
এই বছর করোনা পরিস্থিতিতে যে সমস্ত নতুন জামাই বা পুরনো জামাইরা জামাইষষ্ঠী পালন করতে পারলেন না, তাদের জন্যই আমাদের এই ছোট্ট নিবেদন। ঘ্রাণের মাধ্যমে অর্ধভোজন এবার না হয় ছবির মাধ্যমেই হোক।