রহস্যময়তা দ্বারা যদি আপনি আকৃষ্ট হয়ে থাকেন, তাহলে ভারতের ঔরঙ্গাবাদ শহরের বিখ্যাত ইলোরার ১৬ নং গুহার কৈলাশ মন্দিরের রহস্য আপনাকে মুগ্ধ করবে ।
অবস্থান - ঔরঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র
দূরত্ব - পুনে থেকে ইলোরার দূরত্ব ২৩৫ কিমি এবং মুম্বাই থেকে ইলোরার দূরত্ব ৩৫০কিমি
কীভাবে যাবেন - ঔরঙ্গাবাদে পৌঁছনোর জন্য বাস, ট্রেন এবং বিমান পরিষেবা উপলব্ধ আছে । তবে ইলোরা দর্শনের জন্য বাসে ভ্রমণ করাই শ্রেয় ।
ভ্রমণ সময়সারণী -
ইলোরা ভ্রমণের জন্য ১ দিন যথেষ্ট । তবে আপনি যদি অজন্তা এবং অন্যান্য স্থানগুলি ভ্রমণ করতে চান তাহলে ২দিনের ছুটি নিয়ে ভ্রমণ প্ল্যান করতে পারেন। হোটেল এবং খাবার সহ খরচ পড়বে ৩০০০ টাকার মতো।
এই শহর সম্পর্কিত কিছু তথ্য -
ঔরঙ্গাবাদ শহরের প্রধান পর্যটনস্থান হল অজন্তা এবং ইলোরা গুহা । এই দুইটি গুহাই UNESCO-এর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমায় ভূষিত।
ঔরঙ্গবাদের বিশেষ পর্যটনস্থান -
•অজন্তা এবং ইলোরা গুহা
• বিবি কা মাকবারা
• গ্রীষ্ণেশ্বর জোতির্লিঙ্গ মন্দির
•জৈন মন্দির
•দৌলতাবাদ ফোর্ট
• শোনেরি মহল
• পঞ্চাক্কি
• সেলিম আলি লেক
ইলোরা গুহা -
ঔরঙ্গাবাদ বাস স্টেশন থেকে ইলোরার দূরত্ব ২৮ কিমি । সম্পূর্ণ গুহায় মোট ১০০ টি বৌদ্ধ, হিন্দু এবং জৈন গুহা আছে, তবে এর মধ্যে ৩৪টি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে ।
১৬নং গুহার, কৈলাশ মন্দির
ইলোরার প্রধান আকর্ষণ হল পৃথিবীর বৃহত্তম একশিলার পাথর, যা কৈলাশ মন্দির নামে পরিচিত । এটি ইলোরার ১৬নং গুহায় অবস্থিত ।
এই মন্দিরের কিছু আশ্চর্যজনক বিষয় -
• শোনা যায় যখন এই শিলাটি আবিষ্কার হয় তখন সাদা প্লাস্টারের আবৃত ছিল, আপাতদৃষ্টিতে অনেকটা কৈলাশ পর্বতের মতো। সেই অনুসারেই এই মন্দিরটিকে কৈলাশ মন্দিরের নামকরণ করা হয় এবং ভগবান শিবের আরাধনা করা শুরু হয় ।
• সম্পূর্ণ মন্দিরটি একটি শিলা দ্বারাই নির্মিত । মন্দিরের কোথাও শিলার সংযুক্তিকরণ নেই ।
•এটি বিশ্বের একমাত্র মন্দির যেখানে উপর থেকে নিচে পাথর কেটে নির্মাণ করা হয় ।
সাধারণত পাথর কেটে নির্মাণের সময় নিচে থেকে ধাপে ধাপে নির্মাণ করা হয় । কিন্তু কৈলাশ মন্দিরের ক্ষেত্রে বিপরীত পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই মন্দিরের নির্মাণ পাথরের উপরের দিক থেকে শুরু করা হয়েছে এবং নিচে এসে শেষ হয়েছে।
• এই মন্দির ঠিক কবে নির্মাণ করা হয়, তেমন কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি । কিন্তু মন্দিরের পাথরটি প্রায় ৬০০০বছরের প্রাচীন এবং কখন এই পাথর কেটে মন্দির তৈরি করা হয়েছে তা আজও রহস্য ।
•ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে মন্দির নির্মাণের সময় প্রায় ৪০০,০০০ টন পাথর অপসারণ করা হয়েছে । তবে এতো পাথর কোথায় সরিয়ে ফেলা হয়েছে, তা আজও কারওর জানা নেই ।
•ঐতিহাসিকদের মতে এই নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১৮ বছরের কম সময়ে। অর্থাৎ ৪০০,০০০টন পাথর কাটার জন্য সাধারণ যন্ত্রপাতি যেমন হাতুড়ি, পাথর কাটার যন্ত্র ইত্যাদির সাহায্যেই ১৮ বছরের মধ্যেই একটি সুসজ্জিত মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে ।
• যেহেতু এই মন্দিরটি উপর থেকে নিচে কাটা হয়েছে, তবে কোথাও রূপের ক্ষেত্রে কোনো রকম পার্থক্য হয়নি ।সম্পূর্ণ মন্দিরটি শুধুমাত্র পাথর দ্বারাই নির্মিত ।
কোনো মানুষের পক্ষে এই ধরণের নির্মাণ সম্ভব? নাকি এই মন্দির অন্য কোনও সভ্যতা দ্বারা নির্মিত?
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন,আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে ও এই ধরণের নির্মাণ করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় । তাহলে কী প্রাচীন কালে অন্য কোনও সভ্যতা বিকাশ ঘটেছিল?
এই প্রসঙ্গে কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্যসমূহ -
১. একটা বিশালকার পাথর খনন করে কৈলাশ মন্দির গঠন করা হয় । এই খননকার্যের সময় প্রায় ৪০০,০০০ টন পাথর অপসারণ করা হয় ।
ধরে নেওয়া যাক, সেই সময় নির্মাণের জন্য ৭০০০ শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়, তারা ১৮ বছরে প্রতিদিন ১২ঘণ্টা কোনও রকম বিরতি না নিয়েই কাজ করেছে ।
এছাড়া যদি ১৮ বছরে ৪০০,০০০ টন পাথর অপসারণ করতে হয়, তাহলে প্রত্যেক বছরে ২২,২২২ টন পাথর অপসারণ করা প্রয়োজন ।
৪০০,০০০টন / ১৮ বছর = ২২,২২২ টন
অর্থাৎ, প্রতি ঘন্টায় ৫ টন এবং প্রতিদিন ৬০ টন পাথর অপসারণ করা প্রয়োজন ।
২২,২২২ টন/ ৩৬৫দিন = ৬০ টন প্রতিদিন
৬০টন / ১২ ঘন্টা = ৫ টন / ঘণ্টা
এইভাবেই হিসেব করে দেখলে মাত্র ১৮ বছরে খনন, ডিজাইন, প্ল্যানিং এবং নির্মাণ সমস্ত কিছু কীভাবে সম্ভব হল সেটা সত্যি আশ্চর্যের বিষয় ।
২. ১৬৮২ সালে মুসলিম শাসক ঔরঙ্গজেব ১০০০ শ্রমিক নিয়োগ করেন এবং ৩ বছরের মধ্যে এই মন্দির ধ্বংসের আদেশ দেন ।
শ্রমিকদের অদম্য প্রচেষ্টার পর ও এই মন্দির ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি । শুধু তাই নয়, মন্দিরের কোনও রকম ভাঙ্গন ধরানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি । শেষ পর্যন্ত ঔরঙ্গজেব এই মন্দির ধ্বংসের কাজ থেকে বিরত হন ।
যে মন্দিরটি কোনও মানুষের পক্ষে ধ্বংস করা সম্ভব নয়, সেই মন্দিরটি কি সত্যিই মনুষ্য দ্বারা নির্মিত?
৩. বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গুহায় সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে । ইলোরায় অনেক গুলি টানেল এবং সরু পথ রয়েছে ।বাইরে থেকে দেখা গেলেও, কাছাকাছি গেলে বোঝা যায় কোনো মানুষের পক্ষে সেই স্থানে প্রবেশ করা সম্ভব নয় ।
যদি মানুষের প্রবেশের উপযোগ্য না হয়ে থাকে, তাহলে কী কারণে নির্মাণ করা হয়েছে? গুহার আড়ালে কি কোনও লুকানো শহর রয়েছে? তাহলে কী সেই মানুষগুলো আকারে ক্ষুদ্র?
৪. এই গুহার মেঝেতে অনেক গুলি গর্ত রয়েছে, কিন্ত এই গর্ত গুলি রাখার কারণ কেউ জানে না । এগুলি কী মাটির গভীরের শহরের বায়ু চলাচলের জন্য নির্মিত?
৫. এই গুহায় বেশ কিছু স্থাপত্য রয়েছে, যার ফলে বোঝা যায় একসময় মাটির নিচে কোনও এক সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল এবং এই মানুষগুলো আকারে ক্ষুদ্র ছিল। এই স্থাপত্যগুলির মধ্যে দেবদেবীর এবং পশুদের নিদর্শন রয়েছে।
৬. ঐতিহাসিকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে , ১৬নং গুহায় ইলোরার সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্য -এর নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গিয়েছে । তবে এই মন্দিরের স্থাপত্যকাররা ইলোরার অন্যান্য অংশের তুলনায় অতিরিক্ত পারদর্শী ছিলেন ।
৭. আকাশপথে ও কৈলাশ মন্দিরকে স্বচ্ছভাবে দর্শন করা যায়। মূলত বৃত্তাকার শিল্পরীতি এবং উপরিভাগে চারটি সিংহের অবস্থানের কারণেই সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। আকাশপথে এখানে অনেকটা বড়ো 'X' চিহ্ন লক্ষ্য করা যায় । তাহলে কি কেউ নিজেদের গোষ্ঠীকে চিহ্নিতকরণের জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন?
মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে এমনি অনেক অদ্ভুত শিল্পরীতি, যা আজও রহস্যের সঞ্চার করে ।
পরিশেষে জানিয়ে রাখি,আপনি যদি এখানে ভ্রমণ করতে যান, তাহলে স্থানীয় গাইডের সাহায্য নিতে কিন্তু এক্কেবারে ভুলবেন না । গাইডের সাহায্য নিলে আপনার খরচ পড়বে ৫০ - ১০০টাকা । তাঁরা এই মন্দিরের খননকার্য এবং স্থাপত্য এর কাহিনি শোনাবেন, সেটি থেকে এই মন্দির প্রসঙ্গে আরও বিশদে জ্ঞান লাভ করতে পারেন।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)