আপনি কি করতে ভালোবাসেন? তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে একটি দুর্দান্ত খবর। ২০২১ সালে এই অতিমারী পরিস্থিতির মধ্যেও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অ্যাডভেঞ্চার ওভারল্যান্ডস নামে একটি কোম্পানি এক সুবিশাল সুব্যবস্থা সম্পন্ন বাস তৈরি করেছেন, যেটি আপনাকে দিল্লি থেকে যাত্রা শুরু করিয়ে ১৮ টি দেশের মধ্যে দিয়ে মাত্র ৭০ দিনে লন্ডন পৌঁছে দেবে।
প্রথম বাস পরিষেবা (১৯৫৭)-
বর্তমানে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় খুঁজলে জানতে পারবেন অসওয়াল্ড- জোসেফ গ্ৰারো- ফিশার নামে এক ব্যক্তি ১৯৫৭ সালে ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্রথম বাস পরিষেবা চালু করেন। তখন বাসটি উনি নিজেই চালাতেন। সেই সময় এই বাসটি ফ্রান্স, ইতালি, যুগোস্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, তুর্কি, ইরান এবং পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করত। শুধু তাই নয়, বাসটি ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা যেমন- নিউ দিল্লি, আগ্রা, এলাহাবাদ, বরাণসী এবং কলকাতাতেও চলাচল করত। কলকাতা থেকে লন্ডন পৌঁছতে খরচ এই বাসের ভাড়া পরে মোটামুটি ৮৫ পাউন্ড মতো। তবে এর সঙ্গে আনুষাঙ্গিক ৬৫ পাউন্ড যোগ করলে এনারা নিজের জায়গায় ফিরে আসার ব্যবস্থাপনা করে দিতেন।
এই রকমই আরেকটি বাসের পরিষেবা শুরু করেন অ্যাডভেঞ্চার ওপেনল্যান্ডস কোম্পানি।
২০২১ সালের মে মাসের ভ্রমণ বৃত্তান্ত-
ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে, সম্পূর্ণ একটি নতুন রাস্তা ধরে ৭০ দিনে ভারতবর্ষ থেকে লন্ডন প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এই বাসটি। এই যাত্রাপথটিকে চারটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। আপনি চাইলে যে কোনও একটি অংশ ধরে ঘুরতে পারেন। আবার এই চারটি অংশই একসঙ্গে ভ্রমণ করতে পারেন। যেমন ধরুন, যদি আপনি এই বাস করে শুধুমাত্র চীনদেশ ঘুরতে চান, তাহলে আপনাকে এর মধ্যে ১ এবং ২ নম্বর অংশটিকে বেছে নিতে হবে। আমি বলব, যদি সম্ভব হয় আপনি পুরোটাই অর্থাৎ এই চারটি অংশই ঘুরে দেখবেন।
১ নং অংশ ভারতবর্ষ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড-
কোহিনা থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথম গন্তব্যস্থান মায়ানমার। ৯ দিন ধরে এই যাত্রাপথে মায়ানমার অতিক্রম করার সময় আপনি দেখতে পাবেন এখানকার সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক শহর বাগানকে, যেটি হাজার হাজার বছরের পুরনো ঔপনিবেশিক স্থাপত্য ভাস্কর্য এবং ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দির এবং ইয়াঙ্গন দ্বারা সজ্জিত, যার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্বর্ণমন্দির মন্দিরও রয়েছে। এছাড়াও এই শহরের রাস্তার ধারে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। মায়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ডের প্রবেশের আগে বেশ কিছু শহর ঘুরে দেখতে পাবেন। থাইল্যান্ডের প্রবেশের পর দু'টো শহর দেখতে পাবেন ব্যাংকক ( থাইল্যান্ডের রাজধানী) এবং চিয়াং খঙ। এরপর লাওসের মেকং নদীর উপর দিয়ে বাসটি চলতে চলতে পৌঁছে যাবে চীন।
২ নং অংশ চীন-
২০ দিন ধরে আপনি চীন দেশ ঘুরে দেখার সময় পাবেন। চীনে প্রথম যে জায়গায় যাবেন তার নাম চেংডু, যেটি বৃহত্তম পান্ডার জন্য বিখ্যাত। এই স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবসময় পর্যটকদের নজর কেড়েছে। এরপর পৌঁছে যাবেন সবুজ তৃণভূমির জায়গা রুওরগাই। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আপনারা পৌঁছে যাবেন গাঁশু প্রদেশের দিকে। এখানে আপনি দেখতে পাবেন সেই চীনের বিখ্যাত প্রাচীর, পুরাতন সিল্ক রাস্তা এবং খ্যাতিমান মোগাও গুহা। চীন দেশ ঘোরার একবারে শেষ দিনে আপনি পৌঁছে যাবেন বৃহত্তর সিঞ্জিয়াং প্রদেশে। এই জায়গাটির মূলত আভ্যন্তরীণ দৃশ্যর ( অল্প ঢাকা পাহাড় গোবি মরুভূমি রং হিমবাহ ) দ্বারা সজ্জিত। সবশেষে বলা যায়, চীনের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে।
৩ নং অংশ মধ্য এশিয়া (কিরগিজস্থান উজবেকিস্থান কাজাখস্থান রাশিয়া)-
বর্তমানে কিরগিজস্থান, উজবেকিস্থান, কাজাখস্থান এই তিনটি জায়গা প্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিরগিজস্থানে ৭০ শতাংশ ভূমি ভাগের মধ্যে প্রায় ৮৮ টি পর্বতমালা অবস্থান করছে। এছাড়াও এই জায়গাটি বাজার এবং সিল্ক রাস্তার জন্য বিখ্যাত। এরপর আপনারা পৌঁছে যাবেন মধ্য এশিয়ার মধ্যমণি উজবেকিস্থানে। পরবর্তী সাত দিন প্রাচীন কারিগরি এবং বিস্ময়কর জায়গাগুলি আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন। তার মধ্যে অন্যতম হল সামারকান্ড, বুখারা এবং খিভা। এরপর কাজাখস্থান পেরিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশ করবেন। রাশিয়ার প্রবেশ করে অস্ট্রোখনে একটা দিন আপনি কাস্পিয়ান সাগরে ক্রজে চেপে ঘুরতে পারবেন। এখানে আপনি জলজ প্রাণীদের জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। এরপর সেখান থেকে আস্তে আস্তে আপনি পাড়ি দেবেন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয়। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান গুলির অন্যতম গর্ভগৃহ এই মস্কো।
৪ নং অংশ ইউরোপ লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, ক্যচ- রিপাবলিক জার্মানি নেদারল্যান্ডস বেলজিয়াম ফ্রান্স এবং ইউনাইটেড কিংডম-
এরপর আস্তে আস্তে আপনারা পাড়ি দেবেন বাল্টিক শহরের লাটভিয়া এবং লিথুনিয়াতে, যেগুলি ইউনেস্কোর দ্বারা নির্বাচিত সবচেয়ে পুরনো স্থাপত্য শিল্পের শহর। এরপরে সেখান থেকে পোল্যান্ডের এক ঐতিহাসিক তাৎপর্যময় জনপ্রিয় এক ঝকঝকে জায়গা ওয়ারসও-তে পৌঁছে যাবেন। পরবর্তী জায়গা প্রাগ- এর রাজধানী ক্যচ। এখানে রয়েছে ১০০ স্পায়ার্স এবং অসংখ্য ভাল্লুক। সেখান থেকে সোজা জার্মানি পেরিয়ে বেলজিয়ামে প্রবেশ করবে বাসটি। বেলজিয়াম বিভিন্ন রকমের চকলেট এবং ব্রোয়ারিজের জন্য বিখ্যাত। সবশেষে বেলজিয়াম থেকে নেদারল্যান্ডস হয়ে ফ্রান্স ঘুরে সেখান থেকে অবশেষে ইউনাইটেড কিংডম- এ পৌঁছবে।
• সংক্ষিপ্তসার-
• হোটেলে থাকতে গেলে দুজন করে ভাগাভাগি করে থাকতে হবে।
• খাবার-দাবার।
• প্রত্যেক দেশের জন্য আলাদা আলাদা দক্ষ ইংরেজি ভাষার পথপ্রদর্শক নেওয়া জরুরি।
• পঞ্চকের অনুমোদন, শুল্ক, অভিবাসন ছাড়পত্র আভ্যন্তরীণ সবকিছুই সীমাবদ্ধ এলাকায় প্রবেশের আগে সঙ্গে রাখতে হবে।
• বর্ডার পার করার সময় এই সমস্ত অনুমতি পত্রগুলি দেখা হয়।
• জ্বালানি, ব্যবস্থাপনা, টোল ট্যাক্স এবং পার্কিংয়ের জন্য সমস্ত টাকা দিতে হবে।
• প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বিভিন্ন জায়গার প্রবেশমূল্য প্রত্যেকের নিজস্ব।
• এখানে এসে কিছু আনন্দদায়ক হাস্যকৌতুক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা সারা জীবনের জন্য স্মৃতিমুখর হয়ে উঠবে।
• পুরো ভ্রমণ থেকে আপনি চকলেট, বিভিন্ন রকমের খাবার, জল, বিভিন্ন রকম পানীয় সংগ্রহ করতে পারবেন।
• অ্যাডভেঞ্চার ওভারল্যান্ড তাদের প্রত্যেক সদস্যকে একটি করে মার্চেন্ডাইজ দিয়ে থাকে।
• যাত্রাপথের পুরো বর্ণনাসহ একটি বই প্রত্যেক যাত্রীকে প্রদান করা হয়।
আরও কিছু জানতে ওদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন। ওয়েবসাইটের লিংক নিচে দেওয়া হল- Bus2london