বাঙালি হিন্দু ধর্মের আর পাঁচটি মঙ্গল অনুষ্ঠানের মতো অক্ষয় তৃতীয়া একটি অত্যন্ত শুভ অনুষ্ঠান। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়। এইদিনে সাধারণত গণেশ, লক্ষ্মী এবং কুবেরের পুজো করা হয়। অনেকে এই দিনে সোনা রূপার জিনিস কিনে থাকেন। কারণ কেউ কেউ মনে করেন অক্ষয় তৃতীয়ায় জিনিস কেনা লক্ষীর আশীর্বাদ সমান। আবার কেউ কেউ শুভদিন বলে গৃহপ্রবেশ, দান ধ্যান, গরুকে খাওয়ানো এবং ব্যবসার শুভ উদ্বোধন করেন। অক্ষয় তৃতীয়া আখা তিজ নামেও পরিচিত। শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, জৈন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরাও এই অক্ষয় তৃতীয়া পালন করে থাকেন।
অক্ষয় তৃতীয়া পালনের বেশ কিছু গুরুত্ব রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল-
• এই তিথিতে বিষ্ণুর দশম অবতার পরশুরামের জন্ম হয়।
• সত্য যুগের অবসান, ত্রেতা যুগের সূচনা হয় এই তিথিতে।
• এইদিন শ্রীকৃষ্ণর বন্ধু সুদামা তাঁকে অন্নভোগ দিয়েছিলেন।
• মহাভারত অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে অক্ষয় পাত্র তুলে দিয়েছিলেন এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন; যাতে খাদ্যাভাব দূর হয়।
• ভগীরথের প্রার্থনায় স্বর্গ থেকে গঙ্গার মর্ত্যে আগমন ঘটেছিল এই শুভদিনে।
• অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকেই পুরীতে জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রা রথ তৈরি শুরু করা হয়।
• এছাড়াও মনে করা হয় কুবেরের তপস্যায় মহাদেব সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে অতুলৈশ্বর্য প্রদান করেছিলেন; যার ফলে কুবেরের লক্ষ্মী হয় এবং এরপর থেকে বৈভব লক্ষ্মী পুজো শুরু হয়।
• বিভিন্ন জায়গায় অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন হয়ে থাকে। কারওর বাড়িতে এই সময় পুজো করা হয় কোথাও কোথাও আবার হালখাতা করতে দেখতে পাওয়া যায়।
তবে এই সবকিছুর মধ্যেও ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু মন্দির অক্ষয় তৃতীয়ার দিন একটু অন্যভাবে সেজে ওঠে। তবে জেনে নেওয়া যাক সেই মন্দিরগুলির নাম এবং তাদের এই বিশেষ অনুষ্ঠান পালনের রীতি-
• ১. বৃন্দাবনে অবস্থিত বাঁকে বিহারী মন্দিরে এইদিন ঠাকুরের চরণের দর্শন পাওয়া যায়। সারা বছর ঠাকুরের চরণ বস্ত্র এবং ফুলে ঢাকা থাকে। বছরের শুধুমাত্র এই একটি দিনই ঠাকুরের চরণের দর্শন করে বিশেষ আশীর্বাদ গ্রহণ করতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন।
• ২. বদ্রীনাথ মন্দির প্রায় ছয় মাস পর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন তার দরজা দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়। এইদিন মন্দিরের ঠাকুরের বিশেষ পুজো করা হয়।
• ৩. অক্ষয় তৃতীয়ার দিন পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণে রথযাত্রার রথ তৈরি হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ লোক পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে আসেন এই রথযাত্রা উপভোগ করার জন্য।
• ৪. অন্ধ্রপ্রদেশের সিংহচালামে বৈশাখ মাসে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বার্ষিক চন্দন অনুষ্ঠানে ভগবান বরাহ নরসিংহ নিজ- রূপ দর্শন দেন। আর এই রূপ দেখার জন্য ভক্তরা এই মন্দিরে আসেন। অন্যদিন এই ঠাকুর চন্দন কাঠের পেস্টে ঢাকা থাকে। উক্ত দিনে সেই সমস্ত কিছু সরিয়ে দিয়ে ভগবান দর্শন করতে দেওয়া হয়।
• ৫. নদীয়ার মায়াপুরে ইসকন মন্দিরে অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষ্যে রাধামাধবের চন্দন যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রাচীন কথা অনুযায়ী, প্রবল দাবদাহে জন্য শরীরকে রক্ষা করতে রাধামাধবের শরীরে এই চন্দনের প্রলেপ দেওয়া হয়। মহীশূর থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার চন্দন কাঠ এসে পৌঁছয় এই অনুষ্ঠান পালনের জন্য। ২১ দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান চলে। এইসময় ইসকন মন্দিরের পুষ্করিণীকে বিভিন্ন ফুলে এবং আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়।