মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত আস্ত একটা বাজার, যা এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম বাজার...

Tripoto
Photo of মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত আস্ত একটা বাজার, যা এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম বাজার... 1/1 by Surjatapa Adak
মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত বাজার (ছবি সংগৃহীত)

এককথায় নারীরা হলেন দশভূজা । আর ইমা কেইঠেল হলো নারীর আরেকটা পরিচয়। ইমা কেইঠেল কথার অর্থ হল মায়ের বাজার । প্রায় ১৬শ শতক থেকে কিছু অস্থায়ী স্টল সহযোগে মহিলা বিক্রেতারা তাদের নির্মিত পণ্য বিক্রি করে জীবনধারণ শুরু করেন। এইভাবেই ইমা কেইঠেলের যাত্রা শুরু হয় ।

কোথায় এই ধরণের বাজারের অবস্থান?

মণিপুরের রাজধানী শহর ইমফলে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম মহিলা পরিচালিত বাজার ইমা কেইঠেল । প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এই বাজারটিতে বর্তমানে ৫০০০ মহিলা বিক্রেতা রয়েছেন ।

কীভাবে শুধুমাত্র মহিলা পরিচালিত এই বাজারের উৎপত্তি?

বাজারের ছবি (সংগৃহীত)

Photo of Manipur, India by Surjatapa Adak

১৫৩৩ সালে মণিপুরে শ্রমিক ব্যবস্থা চালু হয়, যা স্থানীয় ভাষায় লাললুপ কাবা নামে পরিচিত । এই ব্যবস্থা অনুসারে এই রাজ্যের মেইটিয়ে সম্প্রদায়ের সমস্ত পুরুষদের চাষবাস, পশুপালনের কাজ ছেড়ে দিয়ে প্রায় জোর করেই যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয় । সরকারি আইনের বিনিময়ে গ্রামের পুরুষরা অভাবের তাড়নায় যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন। অন্যদিকে গ্রামের মহিলাদের একা হাতেই বাড়ির সমস্ত কাজ, চাষবাস, পশুপালনের দায়িত্ব এসে পড়ে । সংসারের বৃদ্ধ মানুষজন এবং সন্তানদের মুখে দু মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই গ্রামের মহিলারা চাষের পণ্য, তাদের হাতের তৈরি পোশাক, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নানান পণ্য বাজারে বিক্রি করে পয়সা উপার্জন করেন। আর এইভাবেই ইমা কেইঠেলের উৎপত্তি ঘটে। স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশের জন্য ইমা কেইঠেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ।

মণিপুরের ইতিহাস ও নূপী লান -

ছবি সংগৃহীত

Photo of মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত আস্ত একটা বাজার, যা এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম বাজার... by Surjatapa Adak

মণিপুরের ইতিহাস থেকে জানা যায়,১৮৯১ সালে ব্রিটিশদের রাজত্বকালে এই অঞ্চলের অর্থনীতি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ে । স্থানীয় জমি থেকে চাষ করা ধান কম মূল্যের বিনিময়ে অন্য দেশে রপ্তানি করা হয় , জলের জন্য অধিক ট্যাক্স দেওয়া ইত্যাদি প্রসঙ্গ গুলি তৎকালীন মণিপুরের আর্থ- সামাজিক মেরুদণ্ডের উপর চরম আঘাত হানে ।

১৯৩৯ সালে স্থানীয় মহিলারা ব্রিটিশদের এই শোষণের বিরুদ্ধে নূপী লান অর্থাৎ শোষণের বিরুদ্ধে মহিলাদের লড়াই নামক একটি সংগঠন নির্মাণ করেন । মিটিং, মিছিলের সাহায্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান ।যদিও তাদের এই প্রতিবাদ ব্রিটিশ শাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেনি, তবে ব্রিটিশদের দাম্ভিক শোষণকে স্তব্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল ।

পরবর্তী কালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন সমগ্র মণিপুর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল তখন নূপী লান এর বামপন্থী ধারণা সমাজকে উজ্জীবিত করেছিল । আর এইভাবেই মণিপুরে লিঙ্গ বৈষম্য দূর হয়ে মহিলাদের ক্ষমতায়নের বিকাশ সূচিত হয় ।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ইমা কেইঠেলের রূপরেখা -

স্বাধীন ভারতের আর্থ-সামাজিক বিকাশের প্রধান অঙ্গ হয়ে ওঠে এই বাজার । ধীরে ধীরে এই বাজার জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যায় ।২০১৬ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে এই মার্কেটের অনেক অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও, এর গৌরব অক্ষুন্ন রয়েছে ।

ইমা কেইঠেল সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্য -

মহিলা দ্বারা পরিচালিত এই বাজারটি Market of Matriachs নামে ও পরিচিত । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, শুধুমাত্র বিবাহিত মহিলাদেরই এই বাজারে পণ্য বিক্রির অনুমতি রয়েছে । উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই বিপণীগুলি থেকেই মহিলারা পণ্য বিক্রি করেন ।এছাড়াও ইউনিয়নের তরফ থেকে লোনের ব্যবস্থা ও রয়েছে । মহিলারা লোন নিয়ে জিনিস কিনে,সেই জিনিস বিক্রি করেও টাকা ফেরৎ দিতে পারেন ।

ইমা কেইঠেল বা খাওয়াইরামব্যান্ড বাজারের বিক্রয় যোগ্য পণ্য হল -

চাষের দ্বারা উৎপন্ন শস্য, স্থানীয় অঞ্চলের কিছু প্রধান খাদ্য, মুদিখানার সমস্ত রকম পণ্য, জামা-কাপড়, বাসনপত্র, খেলনা, বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র, বিভিন্ন ধরণের হস্তশিল্প ইত্যাদি ।

ঠিকানা - ইমা কেইঠেলের ঠিকানা হল - বীর টিকেন্দ্রজিৎ রোড, থাঙ্গল বাজার, ইমফল, মণিপুর।

সময়সীমা - এই বাজারটি সোমবার থেকে রবিবার অর্থাৎ সপ্তাহের সাতদিন ভোর ৩টে থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত খোলা আছে ।

আপনি যদি কখনো এই বাজার পরিদর্শনে যান তাহলে এক অন্যধরনের প্রাণবন্ত বাজারের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন । গৃহকর্মে নিপুনা মহিলারা যে বাইরের জগতে ব্যবসা বাণিজ্য এর ক্ষেত্রে ও যে সমানভাবে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ইমা কেইঠেল তারই একটা উদাহরণ ।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads