আমরা সকলেই জানি যে কোনও দেশ ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয়, কিন্তু আপনি কি জানেন আমাদের নিজের দেশেই এমন কিছু স্থান রয়েছে যেগুলো পরিদর্শনের আগে ইনার লাইন পার্মিটের প্রয়োজন হয়?
ইনার লাইন পার্মিট হল একটি অনুমতি পত্র, যা ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে । এই অনুমতি পত্রটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের জন্যই প্রযোজ্য । এছাড়াও দুই দেশের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার কারণেই এই পার্মিট ব্যবহার করা হয় ।
চলুন এই ৬টি বিখ্যাত স্থান সম্পর্কে বিশদে জেনে নেওয়া যাক -
উত্তর-পূর্ব ভারতের উদীয়মান সূর্যের দেশ হলো অরুণাচল প্রদেশ । ভারতের এই রাজ্যটিতে মোট তিনটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত বর্তমান আছে । এই রাজ্যের পশ্চিমে ভুটান, পূর্বে মায়ানমার এবং উত্তরে রয়েছে চিন ।স্থানীয় মানুষ ছাড়া এই রাজ্য পরিদর্শনের জন্য ভারতীয়দের ইনার লাইন পার্মিট প্রয়োজন হয়।
অরুণাচল প্রদেশ সরকারের রেসিডেন্ট কমিশনারের স্বাক্ষরিত এই অনুমতি পত্রটি কলকাতা, নিউ দিল্লি, শিলং, গুয়াহাটি শহরগুলি থেকে অনায়াসেই পেয়ে যেতে পারেন । এছাড়াও অনলাইনেও এই পার্মিটের আবেদন করতে পারেন ।
খরচ- সিঙ্গেল e-ILP বা গ্রুপ e-ILP এর মাথাপিছু খরচ ১০০টাকা । এই অনুমতি পত্রটি যাওয়া আসা মিলিয়ে ৩০দিনের জন্য প্রযোজ্য ।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট -
প্যানকার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট অথবা ভোটার আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট সাইজ ফটো প্রয়োজন । এখান থেকে ইনার লাইন পার্মিটের জন্য আবেদন করতে পারেন ।
দর্শনীয় স্থান -
অরুণাচল প্রদেশের দর্শনীয় স্থানগুলি হল - তাওয়াং, রৈয়িং, ইটানগর, বোমদিলা, জিরো, ভালুকপং, পাসিঘাট, আনিনি, শেসা অর্কিড সংকচুয়ারি, মনপা গ্রাম, সিলা লেক, নূরানাং জলপ্রপাত, ডিরাং দিজোঙ, পেঙ্গা টেং লেক, ইত্যাদি ।
পার্বত্য অঞ্চল এবং পাহাড়ি জীবনযাত্রা উপভোগ করার জন্য মিজোরাম আদৰ্শ স্থান । এই রাজ্যটিতে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার মিলিয়ে মোট দুইটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে । তাই মিজোরাম ভ্রমণের আগে মিজোরাম সরকারের লিয়াশন অফিসারের স্বাক্ষরিত অনুমতি পত্রের প্রয়োজন । এই অনুমতি পত্রটি কলকাতা, শিলচর, শিলং, গুয়াহাটি, নিউ দিল্লি থেকে খুব সহজেই পেয়ে যেতে পারেন ।
পর্যটকরা বিমানে এই অঞ্চল পরিদর্শনে এলে আইজলের লেংপুই বিমানবন্দরে সিকিউরিটি অফিসারকে এই অনুমতি পত্রটি দেখানোর প্রয়োজন হয় ।
খরচ- মিজোরামে দুই ধরণের ইনার লাইন পার্মিট উপলব্ধ আছে ।
১.টেম্পোরারি পার্মিটের খরচ ১২০টাকা, যা ১৫দিনের জন্য বৈধ ।
২. রেগুলার পার্মিটের খরচ ২২০ টাকা, যা ৬মাসের জন্য বৈধ ।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট - ফটো আইডি কার্ড এবং চারটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন । এখান থেকে পার্মিট ডাউনলোড করতে পারেন।
দর্শনীয় স্থান -
মিজোরামের দর্শনীয় স্থানগুলি হল - ফাউনপুই পাহাড়, ভান্তাওয়াং জলপ্রপাত, পালাক লেক, ছিঙপুই হেরিটেজ সাইট, দূরত্বলাং পাহাড়, রেইক হেরিটেজ গ্রাম, লেংটেং ওয়াইল্ডলাইফ সংকচুয়ারি ইত্যাদি ।
ভারতের এই উত্তর-পূর্ব অঞ্চলটিতে বর্তমানে ১৬টি প্রজাতির আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করেন, এছাড়াও এই রাজ্যের প্রতিটি জেলায় মানুষের আলাদা আলাদা রীতি, ভাষা এবং পোশাক লক্ষ করা যায় । নাগাল্যান্ড রাজ্যের পূর্বে রয়েছে মায়ানমার । তাই এই অঞ্চল ভ্রমণের আগে ইনার লাইন পার্মিটের প্রয়োজন হয় ।
নাগাল্যান্ডের ডেপুটি কমিশনার দ্বারা অনুমতি পত্রটি দিমাপুর, কোহিমা, মোককচুঙ, নিউ দিল্লি, কলকাতা এবং শিলং থেকে পেয়ে যেতে পারেন । এছাড়াও আপনি অনলাইনেও পার্মিটের আবেদন করতে পারেন ।
খরচ- ভারতীয় পর্যটকদের খরচ- ১০০ টাকা
অন্যান্য পর্যটকদের খরচ- ১৫০ টাকা
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট -
প্যানকার্ড / আধার কার্ড /ভোটার আইডি এবং পাসপোর্ট সাইজ ফটো প্রয়োজন । এখান থেকেও পার্মিট আবেদন করতে পারেন ।
দর্শনীয় স্থান -
নাগাল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানগুলি হলো - কোহিমা, দিমাপুর, মোককচুং, ওয়াখা, মন, ফেক, কিপহিরে ইত্যাদি ।
এক কথায় লাক্ষাদ্বীপ কথার অর্থ হল হাজার দ্বীপের সমাহার । এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি লাক্ষাদ্বীপ, মিনিকয়, আমিনীডিভি নামক প্রধান তিনটি দ্বীপের সংমিশ্রণে গঠিত ।
লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় পার্মিট এবং খরচ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য এখান থেকে জেনে নিতে পারেন । এই অনুমতিপত্রটি ৫ মাসের জন্য বৈধ ।
দর্শনীয় স্থান -
লাক্ষাদ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলি হল - ব্যাঙ্গারাম দ্বীপপুঞ্জ, মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জ, কাভারত্তি দ্বীপপুঞ্জ, আগাত্তি দ্বীপপুঞ্জ, কল্পেনি দ্বীপপুঞ্জ, কাঁদমাত দ্বীপপুঞ্জ, পিত্তি বার্ড সংকচুয়ারি ইত্যাদি ।
সিকিম রাজ্যটিতে মোট তিনটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে ।রাজ্যের উত্তরে এবং পূর্বে রয়েছে চিন, এক্কেবারে পূর্বপ্রান্তে রয়েছে ভুটান এবং পশ্চিমে রয়েছে নেপাল । তাই ভারতীয় নাগরিকদের সিকিমের কিছু অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য ইনার লাইন পার্মিট প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে ।
লাচুং, ছাঙ্গু লেক, চোপতা ভ্যালি, গুরুদংমার লেক পরিদর্শনের জন্য পর্যটকদের সিকিম ট্যুরিজম এবং সিভিল অভিয়েশন ডিপার্টমেন্ট এর অনুমতি পত্রটি বাগডোগরা বিমানবন্দর এবং রংপো চেকপোস্টে দেখানো প্রয়োজন হয় । এই অনুমতিপত্রটি বিনামূল্যে এখান থেকে পেয়ে যেতে পারেন । এছাড়াও আপনার ট্রাভেল এজেন্সি থেকেও এই পার্মিট তৈরি করে নিতে পারেন ।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট - ফটো আইডি কার্ড যেমন - পাসপোর্ট/ ভোটার আইডি কার্ড / ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন ।
এখান থেকে পার্মিট পেয়ে যেতে পারেন ।
দর্শনীয় স্থান -
সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলি হল - তসমগো লেক,যুক্সোম, নাথুলা পাস, লাচুং, লাচেন, য়ুমথাং ভ্যালি, রাভাঙলা, নামচী, জুলুক, তিস্তা নদী, গ্যাংটক ইত্যাদি ।
লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিতে পাকিস্তান এবং চিন মিলিয়ে মোট দুইটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে । সম্পূর্ণ লাদাখ অঞ্চলটি দর্শনের অনুমতি নেই ।তাই ইনার লাইন পার্মিটের সাহায্যে লাদাখের দা, হানু গ্রাম, পাঙ্গঙ টস, মান, মিরাক, লোমা বেন্ড, খারদুংলা, নুব্রা ভ্যালি, তুর্তুক, দিগ্গর লা পরিদর্শন করে নিতে পারেন ।
লে শহরের প্রধান বাজারের ডি সি অফিস থেকে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যে ৭টার মধ্যে ইনার লাইন পার্মিট রেডি করে নিতে পারেন । এক্ষেত্রে আপনাকে বিকাল ৩টের মধ্যে আবেদনপত্রটি জমা করতে হবে ।এই অনুমতি পত্রের জন্য আপনি অনলাইনে ও আবেদন করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে ও সরকার কর্তৃপক্ষের স্ট্যাম্পটির প্রয়োজন হবে । ট্রাভেল এজেন্ট-এর সহায়তায় ও অনুমতিপত্রটি তৈরি করে নিতে পারেন ।
খরচ- অনুমতি পত্রের জন্য মাথাপিছু খরচ মাত্র ৩০টাকা ।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট - নিজ স্বাক্ষরিত বৈধ নাগরিকত্বের প্রমানপত্রের ফটোকপি এবং লে লাদাখ অঞ্চলের ডি সি এর উদ্দেশ্যে আবেদন পত্রটির প্রয়োজন ।
এখান থেকে আপনি পার্মিটের জন্য আবেদন করতে পারেন ।
দর্শনীয় স্থান -
লাদাখের দর্শনীয় স্থানগুলি হল - প্যাংগং লেক, শান্তি স্তুপ, টস মরিরি লেক, লে প্যালেস, খারদুংলা পাস, নুব্রা ভ্যালি, নামজ্ঞাল টসেমো গুফা, চ্যাংটাং ওয়াইল্ডলাইফ সংকচুয়ারি, টস কার লেক ইত্যাদি ।