কোভিড ১৯ প্যান্ডেমিকের কারণে বেশিরভাগ পর্যটক বাড়িবন্দি হয়ে পড়লেও, পরিবেশের উপর কিন্তু পড়েছে সুপ্রভাব। প্যান্ডেমিকের কারণে আরোপিত লকডাউনের মধ্যে নেপালি এভারেস্ট অভিযাত্রীরা ৪৭ দিনের সময়কালে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প থেকে প্রায় ২.২ টন জঞ্জাল নিষ্কাশিত করেছেন। ফলে নিউজ রিপোর্টগুলি জানাচ্ছে যে পাহাড়ি পরিবেশ ফিরে পেয়েছে তরতাজা প্রকৃতির হারিয়ে যাওয়া স্পন্দন।
পর্বতারোহী দাওয়া স্টিভেন শেরপার নেতৃত্বে ১২ জন অভিযাত্রীর দল এভারেস্টের চারিদিকে প্রায় মোট ৪৫০ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে তাঁদের অভিযান চালান। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ায় বিভিন্ন অভিযানের ফলে পরিবেশের উপর যে কুপ্রভাব পড়ছিল, তা আমরা জানতে পারি একটি সুইস জুতোর কোম্পানির সৌজন্যে। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যখন প্যান্ডেমিকের কারণে সকল অভিযান বন্ধ রাখা হয়, তখন বালি পিক আউটলুক ফাউন্ডেশন এই উদ্যোগটির সূচনা করে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ হতে এখনও পর্যন্ত এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় ১০,৫০০টি অভিযান হয়েছে। সবকটি অভিযানই শুরু হয় এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে তাঁবু টাঙিয়ে। বেস ক্যাম্প এরিয়াতে প্রতি বছর এত মানুষের সমাগমের ফলে কালক্রমে বেড়ে উঠেছে দূষণের ফলাফল।
সাফাই অভিযান সম্পর্কে কিছু তথ্য
যদিও এই সাফাই অভিযানটি হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের শুরুতেই, প্যান্ডেমিকের কারণে তা পিছিয়ে যায়। কিন্তু অবশেষে সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া এই অভিযানের মাধ্যমে চো ওয়ু (৮১৮৮ মিটার), এভারেস্ট (৮৮৪৮ মিটার), লহোৎসে (৮৫১৬ মিটার) এবং মাকালু (৮৪৮৫ মিটার) পর্বতের বেস ক্যাম্প এরিয়া পরিষ্কার করা হয়। দাওয়া শেরপা এবং তাঁর টিমের পর্বতারোহী, সাফাইকর্মী, কুলি, এবং অন্যরা একসাথে এই অভিযান শুরু করেন। প্যান্ডেমিকের সময় সমস্ত পর্বতারোহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এই সহকারী কর্মীদের ওপরেই সবথেকে বেশি সমস্যা হয়েছিল জীবিকা নির্বাহ করার দিক থেকে।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের জন্যে
সামাজিক দায়িত্ত্ব এবং পরিবেশের প্রতি রক্ষণশীল হওয়ার তাগিদ থেকেই বালি পিক আউটলুক ফাউন্ডেশনের জন্ম। এই অভিযানের ফলে যে ২ টনের বেশি ময়লা পাওয়া গিয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি এসেছে ডেথ জোন থেকে। সাগরমাতা পলুশন কন্ট্রোল কমিটি ব্যাপারটি দেখভালের দায়িত্ব নেয়। এই অভিযানের ফলে হিমালয়ের বিভিন্ন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানুষদের , যারা সাধারণত পর্বত অভিযানগুলির উপরে নির্ভরশীল, তাঁদের বিকল্প উপার্জনের উপায়ও সৃষ্টি করে দিয়েছে।
কী ছিল এই সাফাই অভিযানের গুরুত্ব?
দুর্গম আবহাওয়া এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা একদমই না থাকার কারণে, এই সকল জায়গাতে মানুষ জন এলেও, কোনওদিন কিন্তু তাঁদের জঞ্জাল সাফাই করা হয়নি। ফলে বিপুল পরিমাণে ময়লা জমে জমে হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহকে দূষিত করে তুলেছে। ভারতবর্ষের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ এই হিমবাহ প্রসূত জলের উপরে সেচের জন্যে, খাওয়ার জলের জন্যে এবং জলবিদ্যুৎ তৈরি করার জন্যে নির্ভরশীল। এই প্রজেক্টের ফলে বেস ক্যাম্প এরিয়া থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য পদার্থ, বিয়ার ক্যান, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ব্যাটারি, খাবার এবং অন্যান্য জৈব বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে নিয়ে গিয়ে, অঞ্চলগুলিকে অনেকাংশে পরিশোধিত করে তোলা সম্ভব হয়েছে।
ভবিষ্যৎ
বালী পিক আউটলুক ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী এই সাফাই অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু হবে ২০২১ সালে। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮৫৮৬ মিটার), ধুলাগিরি (৮১৬৭ মিটার), মানাসলু (৮১৫৬ মিটার), অন্নপূর্ণা (৮০৯১ মিটার) পর্বতের বেস ক্যাম্প পরিষ্কার করা হবে, তৃতীয় বারের জন্যে পরিষ্কার করা হবে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পও।