![Photo of হরেক রকম আম - ভারতবর্ষের কোথায় কোথায় পাবেন কোন কোন বিখ্যাত আম? 1/4 by Aninda De](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1621859365_mango_2360551_1920.jpg)
গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন আমরা হাঁসফাঁস করছি, তখন কিন্তু আমাদের একটুখানি শান্তি এনে দিতে পারে কয়েকফালি সুমিষ্ট আম। হ্যাঁ, আমাদের সবার প্রিয় আম কিন্তু গরমকালের এই কয়েক মাসে আমাদের মাতিয়ে রাখে স্বাদে গন্ধে। তবে চেনা শোনা আলফানসো, হিমসাগর বা ল্যাংড়ার বাইরেও গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে পাওয়া যায় নানান রকম প্রজাতির আম, যারা প্রত্যেকেই স্বাদে, আকারে বা রঙের দিক থেকে স্বতন্ত্র। জানতে চান ভারতবর্ষের নানারকম আমের ব্যাপারে, আর কোথায় খুঁজে পাবেন সেগুলো? পড়তে থাকুন, আর হয়ে যাক ফলে ফলে মিষ্টিমুখ।
১. ব্যাঙ্গানাপল্লী বা সফেদি
অন্ধ্রপ্রদেশের ব্যাঙ্গানাপল্লী টাউন থেকে প্রথম শুরু হয় এই আমাদের যাত্রা। উৎপত্তিস্থলের নামানুসারেই এই আমের নামকরণ হয়েছে। উজ্জ্বল হলুদ বা সোনালি রঙের এই আমটি মরসুমের প্রথম আমগুলির মধ্যে অন্যতম।
![Photo of হরেক রকম আম - ভারতবর্ষের কোথায় কোথায় পাবেন কোন কোন বিখ্যাত আম? 2/4 by Aninda De](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1621858493_product_500x500.jpeg)
২. পায়রী
প্রতি বছর ম্যাঙ্গো সিজন শুরুর দিকেই পাওয়া যায় পায়রী নামের এই উজ্জ্বল লাল রঙের আমটি। প্রধান ফলন হয় কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং কেরালাতে। তবে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় আমরস তৈরি করতে এই আমটি ব্যবহার করা হয়। ক্ষণস্থায়ী হওয়ার দরুণ, কেনার পরেই এই আমটি খেয়ে বেশিদিন না রেখে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেওয়া ভাল।
![Photo of হরেক রকম আম - ভারতবর্ষের কোথায় কোথায় পাবেন কোন কোন বিখ্যাত আম? 3/4 by Aninda De](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1621858584_payri_mango_500x500.jpg)
৩. কেশর
গুজরাটের আহমেদাবাদের গিরনার পাহাড়ে চাষ হয় কেশর নামের এই সুগন্ধি আমটির। খোসা ছাড়িয়ে দেখতে পাওয়া যায় ঘন গেরুয়া রঙের শাঁস, আর তাই আমটির নামকরণ হয়েছে স্যাফরন বা জাফরান বা কেশরের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। কথিত আছে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে জুনাগড়ের নবাব এই আমের চাষ শুরু করেন। দামের দিক থেকেও একটু ওপরের দিকে এই আমটি।
৪. বাদামী
এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে বাজারে পাওয়া যায় কর্ণাটকের সবচেয়ে জনপ্রিয় আমি বাদামী। পাতলা খোঁসার এই আমটি খাদ্যগুনে ভরপুর, খেতেও বিখ্যাত আলফানসো আমের কাছাকাছি। দক্ষিণ ভারতের মানুষজনের প্রিয়তম আমের প্রজাতি এই বাদামী আম।
৫. ল্যাংড়া
বাঙালীদের অত্যন্ত পরিচিত এই আমের উৎপত্তি কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে। তবে কাশির সাথে বাঙালীদের সম্পর্ক সুপ্রাচীন, হয়তো সেইভাবেই বহু দিন আগেই ল্যাংড়া আম পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেও পাড়ি দিয়েছিল। পেকে গেলেও ল্যাংড়া আমের রঙ থাকে উজ্জ্বল সবুজ, পাওয়া যায় জুন থেকে আগস্ট মাসের সময়, খেতে অত্যন্ত মিষ্টি।
৬. মালদা
নামে মালদা থাকলেও, এই আমের উৎপত্তিস্থল কিন্তু বিহারে। টক মিষ্টি স্বাদের এই আম থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু চাটনি আর আচার। ফাইবারের অংশ কম, আর শাঁস বেশি থাকায় এটি ক্রেতাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
![Photo of হরেক রকম আম - ভারতবর্ষের কোথায় কোথায় পাবেন কোন কোন বিখ্যাত আম? 4/4 by Aninda De](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1621858903_malda_mango_1572870193_5140251.jpeg)
৭. আলফানসো
সম্ভবত পৃথিবীর সবথেকে বিখ্যাত আম আলফানসো, যাকে আমের রাজাও বলা হয়ে থাকে। মহারাষ্ট্রে এই আমের প্রাথমিক উৎপত্তি হলেও বর্তমানে গুজরাট, কর্ণাটক এবং মধ্যপ্রদেশেও এই আমটির চাষ হয়। স্বাদে, গন্ধে, বর্ণে, অন্য সকল আমের থেকে আলফানসো একেবারেই আলাদা। এবং দামের দিক থেকে সবথেকে দুর্মূল্য। ভারত হতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই আমের রপ্তানি হয়।
৮. তোতাপুরী
টিয়াপাখির ঠোঁটের মতো বাঁকানো এই আমগুলির প্রান্তগুলি, তাই নাম ও হয়ে উঠেছে তোতাপুরী। দক্ষিণ ভারতের চার রাজ্যে, অর্থাৎ অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু এবং তেলেঙ্গানাতে এই আমের ফলন হয়, এবং ক্রমে ভারতজুড়ে বিখ্যাত হয়ে উঠছে এই প্রজাতির আম। স্যালাডে, আচারে বা আমের শরবতে বেশী করে ব্যবহৃত হয় তোতাপুরী।
৯. হিমসাগর
পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িষ্যার সবথেকে জনপ্রিয় আম হল হিমসাগর। মে জুন মাসে খুব অল্প সময়ের জন্যেই এই আমের ফলন হয় এবং স্বাদ হয় খুব মিষ্টি। গন্ধের দিক থেকেও হিমসাগর আম খুবই বিখ্যাত। হিমসাগর আমের মধ্যে ফাইবার কম কিন্তু শাঁস বেশি হওয়ায় খেতেও খুব মজাদার এবং সুস্বাদু।
১০. দশেরি
উত্তর প্রদেশের আরেক জনপ্রিয় আম হল দশেরি, এবং মনে করা হয় এটি ভারতবর্ষের বিভিন্ন আমের প্রজাতির মধ্যে প্রাচীনতম। নবাবী শাসনকালে এই আমটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হলুদ-সবুজ রঙের এই আমটি খেতে বেশ মিষ্টি এবং মিষ্টি চাটনীতে বহুল ব্যবহৃত।
১১. রত্নাগিরি
মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরি, দেবগড়, রায়গড় এবং কোঙ্কন উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় এই আমটি খুঁজে পাওয়া যায়। সারা গায়ে সবুজ রঙ থাকলেও একদম উপর দিকে একটু লাল রঙের আভা রত্নাগিরি চিনিয়ে দিতে সাহায্য করে আমাদের। আলফানসো আমের খুব কাছাকাছি প্রজাতির আম এই রত্নাগিরি।
এছাড়াও খেয়ে দেখতে পারেন চৌষা, কিষানভোগ, রসপুরী, মালগোয়া, আম্রপালি, লালবাগ, গুলাবখাস প্রজাতির আম। সঙ্গে খেতে পারেন লক্ষণভোগ, সুবর্নরেখা, রাজাপুরি, ফিলিহারা, কিয়েৎ, নাজুক নামের আম। ভারতবর্ষের সুবিশাল আয়তন জুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে পাওয়া যায় নানান বৈচিত্র্যের আম যার বৰ্ণনা স্বল্প পরিসরে বলে শেষ করা অসম্ভব। পর্যটক এবং খাদ্যরসিকরা, আপনাদের কোথাকার কোন কোন আম সবথেকে বেশি পছন্দ?