সারা বিশ্ব যখন করোনা আবহে আতঙ্কগ্রস্থ, তার মধ্যেও আপামর বিশ্ববাসী কিন্তু রবীন্দ্রপ্রেমে বিভোর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! বাঙালির প্রথম ভালোবাসা, প্রথম পরিচয়। শুধু সাহিত্য সৃষ্টিতে নয়; জীবনের বহু বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে যেতে যাঁর লেখনি ক্রমশ হয়ে উঠেছে আমাদের জীবনের ঢাল। জুগিয়েছে সাহস। দেখিয়েছে সত্যের পথ।তাই এই বছর কবি প্রণামে ট্রিপটোর নিবেদন-
মংপুতে রবীন্দ্রনাথ-
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিং থেকে ৩৩ কিলোমিটার এবং শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে কালিম্পং-এর একটি ছোট্ট শহর মংপু। পাহাড়ে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ মেলবন্ধনে মধ্যে গড়ে ওঠা এই মংপু শহরের মৈত্রেয়ী দেবীর আহবানে ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে প্রায় চার বার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছুটে আসেন এই জায়গায়। কবিগুরু পাহাড় ভালোবাসতেন। তাই মৈত্রেয়ী দেবীর আমন্ত্রণ বার্তা তিনি অগ্রাহ্য করতে পারেননি। এই স্থানে এসে তিনি বিভিন্ন গান, কবিতা লিখেছেন।
১৯৪০সালের শেষবারের মতো যখন তিনি মংপুতে আসেন তখন সৌভাগ্যবশত ২৫শে বৈশাখ অর্থাৎ কবিগুরুর জন্মদিন ঠিক সেই সময় মংপুতে পালন করেন মৈত্রেয়ী দেবী। সুন্দরভাবে বাড়িটিকে সাজিয়ে তোলেন এবং তারপর আশেপাশে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষজনকে ডেকে করা হয় একটি ছোট্ট অনুষ্ঠান। প্রত্যেকে সেইদিন কবিগুরুর জন্য ফুল নিয়ে আসেন। উক্তদিনে সকলে মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করা হয় এবং সারা দুপুর ধরে চলে অনেক আনন্দ। সেইবার ২৫শে বৈশাখ তাঁর জন্মদিনের দিন রবীন্দ্রনাথ তিনটি কবিতা রচনা করেন। মংপুতে বসে তিনি জন্মকথা, ছেলেবেলা এবং যৌবন জীবন নিয়ে অনেক লেখা লিখেছেন। তার মধ্যে- নবজাতক, সানাই, আকাশ প্রদীপ, মংপু, ক্যামেলিয়া প্রভৃতি রচনাগুলো খুব জনপ্রিয়।
এই রবীন্দ্রভবন ও সংগ্রহশালা দর্শন করতে বহু দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা আসেন মংপুতে। রবীন্দ্রনাথের ছবি ছাড়াও এখানে রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত খাট, লেখার ডেস্ক, রঙের প্যালেট, ওষুধের শিশি। এছাড়াও তাঁর নিজের হাতে অঙ্কিত পাহাড় বিভিন্ন ছবি। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবার মংপুতে এসে ঠিক কী কী করেছিলেন তার একটি দিনলিপিসহ বিভিন্ন বর্ণনা করে মৈত্রেয়ী দেবী ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’ বলে একটি বই লিখেছেন, যা পড়লে রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে আরও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান:-
• রবীন্দ্রভবন ছাড়াও এখানে রয়েছে কুইনাইন ফ্যাক্টরি, যার চারপাশে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে সিঙ্কোনা গাছের বাগান। যেখানে ম্যানেজারের অনুমতি নিয়ে আপনারা ঘুরে দেখতে পারবেন কীভাবে সিঙ্কোনা গাছের ছাল থেকে কুইনাইন ওষুধ তৈরি হয়।
• মংপু থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কমলালেবুর গ্রাম সিটং অবস্থিত।
• এর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সূর্যোদয়ের জায়গা অহল দাড়া ১৮০ ডিগ্রি কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট।
• থামদাড়া চা বাগান।
• বহু বছরের পুরনো বুদ্ধ মন্দির ও যোগীঘাট।
• অর্কিড বাগান।
• হাতে আঁকা ছবির মতো সুন্দর তুরক গ্রাম।
• পাখিদের স্বর্গরাজ্য লাটপঞ্চার।
কীভাবে যাবেন-
হাওড়া থেকে প্রথমে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছতে হবে।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সেবক কালিঝরা হয়ে মংপুর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং যেতে লাগে প্রায় দু'ঘণ্টা। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গাড়ি পাওয়া যায়, মোটামুটি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মতো ভাড়া পরে।