মারণব্যাধি যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের চারিদিকে, তখন বাড়ি থেকে বেড়ানো যেন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশের থেকে কম কিছু না। এই সময়ে আমাদের সবারই মনে হচ্ছে যদি নিশ্চিন্তে নিরাপদে থাকতে পারতাম বহু দূরে, জনমানবশূন্য কোনও স্থানে। তবে জেনে হয়তো চমকে উঠবেন যে এই মহামারীর গ্রাস পৌঁছে গেছে পৃথিবীর দূরতম, নির্জনতম স্থানে - মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে।
কী হচ্ছে এভারেস্ট চূড়ায় ?
সাম্প্রতিক একটি সি.এন.এন রিপোর্ট অনুযায়ী, এভারেস্ট বেস ক্যাম্প থেকে এরল্যান্ড নেস নামক এক নরওয়েজিয়ান পর্বতারোহীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। নেপালের কাঠমাণ্ডুতে তাঁর কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল আসে পজিটিভ। বেস ক্যাম্পে ভাইরাসের আশঙ্কা দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং আরও ৩০ জন আরোহীকেও বেস ক্যাম্প থেকে নামিয়ে আনা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী আর নতুন কোনও কেসের কথা জানা না গেলেও, উপস্থিত আরোহীদের সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে এবং ১৭,৬০০ ফিট উচ্চতাতেও তাঁদের আইসলেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের তুলনায় যেহেতু এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে অক্সিজেনের মাত্রা প্রায় ৫০% কম, এই রকম উচ্চতায় ভাইরাসের মারণ কামড় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও এভারেস্টে শৃঙ্গ জয়ের দুরূহ অভিযানের পিছনের থাকে আরোহীর ব্যক্তিগত দৃঢ়তা এবং মানসিক শক্তি, তাঁর স্বপ্ন সত্যি করার পিছনে কিন্তু অবদান থাকে একাধিক শেরপা, গাইড এবং পাচকদের বাহিনীর। ফলে প্রতিটি অভিযাত্রী দল পিছু বিপুল পরিমাণে লোকজন প্রতি বছর বেশ ক্যাম্পে ভিড় করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্য এখনও কর্তৃপক্ষরা জানাননি যে এই সিজনের সবকটি অভিযান বাতিল করা হবে কি না।
প্যান্ডেমিকের আগে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় অভিযান দলের সদ্যসদের, ইন্টারনেট জুড়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়া এই ছবিটার কথা মনে আছে? ছবিটি থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি কেন মাউন্ট এভারেস্ট তথা বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গের চূড়ায় সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে চলা কতটা অসম্ভব হয়ে যেতে পারে।
যদিও আমরা আশা করছি যে এভারেস্ট চূড়াটি এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রভাব থেকে মুক্তি পেয়েছে, আমাদের অনুরোধ আপনারা সবাই এখন বাড়ি থাকুন। বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার, বা হাইক বা ট্রেকে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও বলবো যে এই মুহূর্তে এভারেস্টের মতন প্রতিকূল জায়গাও এই মুহূর্তে নিরাপদ নয়। বাড়ি থাকুন, সুস্থ থাকুন, ঘুরতে তো আমরা আবার যাবই ঠিক সময়ে!