ধর্ম, সংস্কৃতি, গোঁড়ামির বাধা অতিক্রম করে কাছে আসছে মানবিকতা, রুখে দাঁড়াচ্ছে মহামারীর বিরুদ্ধে...

Tripoto
Photo of ধর্ম, সংস্কৃতি, গোঁড়ামির বাধা অতিক্রম করে কাছে আসছে মানবিকতা, রুখে দাঁড়াচ্ছে মহামারীর বিরুদ্ধে... 1/1 by Aninda De
ছবি সংগৃহীত

নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসের নাম দিয়েছিলেন "লাভ ইন দ্য টাইমস অফ কলেরা", কলেরার দাপটকে উপেক্ষা করে প্রেমের বেঁচে থাকার আশ্বাস-ই যেন প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর গল্পনামে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ আমরা আবার নতুন এক মহামারীর কবলে। কোভিড ১৯ এর দুরন্ত গ্রাসে ভেঙে পড়ছে ভারতবর্ষের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বাড়তে থাকা সংক্রমণ যেন রোজ আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে কঠিন, ঊর্ধ্বমুখী সংগ্রামের কথা। তবে সব কি শেষ, সব কি ফুরিয়ে যাচ্ছে? না, এর মধ্যেই আমরা পেয়েছি আশার আলো, দুর্গম দুরূহ অবস্থাতেও মানুষের কাছাকাছি আসার দৃষ্টান্ত। চূড়ান্ত দুরূহ পারিপার্শ্বিকতার মধ্যেও ধর্ম, বর্ণ, সংস্কারের বেড়াজাল এড়িয়ে মানুষ এগিয়ে আসছে নিঃস্বার্থভাবে অচেনা, অজানা মানুষদের সাহায্য করার জন্যে। আজ পাঠকদের জন্যে রইল এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, যা প্রতিমুহূর্তে আমাদের যোগাচ্ছে সম্মিলিতভাবে এই মহামারীকে প্রতিহত করার সাহস।

কোভিডের বিরুদ্ধে সমন্বয়ের লড়াই

সামগ্রিকভাবে ভারতবর্ষ চলছে এক টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে, যেখানে কোভিড ছাড়াও ছড়িয়ে পড়েছে সাম্প্রদায়িক বৈরিতা বা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অসুখ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কবলে পড়ে কিন্তু মানুষজন বাধ্য হয়েছেন এই গোঁড়ামির বেড়াগুলি অতিক্রম করতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন রাজ্যের শিখ গুরুদ্বারা গুলি আয়োজন করেছেন লঙ্গরখানার ব্যবস্থা। কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি খাবার পাঠানোর দায়িত্ত্ব তাঁরা গ্রহণ করে নিচ্ছেন। গাজিয়াবাদের ইন্দিরাপুরমে চালু হয়েছে দেশের প্রথম অক্সিজেন লঙ্গর, দৈনিক প্রায় ৭০০ কোভিড পজিটিভ ব্যক্তি প্রয়োজনে এখানে এসে অক্সিজেন পেতে পারেন।

মন্দির-মসজিদ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষরা এগিয়ে আসছেন একে ওপরের পাশে থাকতে। গুজরাটের ভদোদরার, জাহাঙ্গীরপুরা মসজিদের ভিতরে একটি ৫০ বেডের কোভিড সেন্টার খোলা হয়েছে। এরকম নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে ভারতবর্ষ জুড়ে। যখন জনসংখ্যার বিপুল চাপে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম অপ্রতুল হয়ে উঠছে, তখন গ্রামে গঞ্জে শহরে মফস্বলের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি স্থানীয় মানুষদের দেখা শোনা করার জন্যে অঙ্গীকার করছে। অস্থায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়াও ওষুধপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে বা দুঃস্থ মানুষদের চিকিৎসার খরচ তুলে দেওয়া হচ্ছে।

দেশ ও বিদেশ - নেই কাঁটাতারের সীমা

মহানুভবতার এই নিদর্শন শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই সীমিত নেই, বরং ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে বর্ধিষ্ণু ভারতীয় জনগোষ্ঠী বর্তমান। ইংল্যান্ডের কিংসবেরির শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দিরে খোলা হয়েছে ভ্যাক্সিনেশন কেন্দ্র। আমেরিকা, ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, কানাডার অভিবাসীদের তরফ থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থসাহায্য পাঠানো হচ্ছে ভারতবর্ষে; এবং সেই অর্থ সংগৃহিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের আয়োজিত ফান্ডরেজার বা চ্যারিটি উদ্যোগ থেকে। ভাষা, জাতি, গোষ্ঠী, রাজনীতি, এমনকি দেশের ব্যবধান আর বিভেদ ভুলে লক্ষ লক্ষ মানুষ এগিয়ে আসছেন কোটি কোটি মানুষের সাহায্যে, একসাথে।

সোশ্যাল মিডিয়াই নতুন যুগের অগ্রদূত

উল্লেখযোগ্য কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া এগিয়ে এসেছে মানুষদের কাছাকাছি আনতে, কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে অস্ত্র করে দেশজুড়ে যুবক যুবতী তরুণ তরুণীরা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন। ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকের মতো মাধ্যম ব্যবহার করে যাচাই করা হচ্ছে কোন হাসপাতালে বেড খালি আছে, বা কোথায় পাওয়া যাচ্ছে প্রাণদায়ী ওষুধ বা কোথায় এই মুহূর্তে গেলে পাওয়া যাবে অক্সিজেনের সিলিন্ডার। প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে পরিসংখ্যান, কিন্তু একটুও দমে না গিয়ে যুব সমাজ প্রতিনিয়ত ভেরিফাই করে যাচ্ছে সকল তথ্য, আর ছড়িয়ে দিচ্ছে গণমাধ্যমে, যার ফলে লাভবান হচ্ছেন বহু মানুষই।

স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান নিয়ে নিঃসন্দেহেই বলার আর কিছু বাকি নেই, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন হাজার হাজার ডেলিভারি এক্সিকিউটিভ যারা ঝুঁকি নিয়েও আমার আপনার প্রয়োজনীয় নিত্যব্যবহারের জিনিস, শাক সবজি, বা খাবার দাবার পৌঁছে দিচ্ছেন আমাদের হাতে। লকডাউনের আবহে বিগ বাস্কেট, আমাজন, সুইগি জাতীয় সংস্থার ডেলিভারি করেন যাঁরা, তাঁরাও কিন্তু এই লড়াইতে আমাদের সঙ্গে শামিল। নিঃশব্দে নীরবে এনারাও জুগিয়ে যাচ্ছেন আমাদের বেঁচে থাকার রসদ।

এগিয়ে চলার পথে ভারতবর্ষ

ভারতবর্ষের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা দেখতে পাচ্ছি আশার হদিশ। বুঝতে পারছি যে নিজেদের সংস্কার এবং গোঁড়া বিশ্বাসকে পরাজিত করে সকলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে তার উপকার ভোগ করবো আমরাই। একে অপরের মাঝে অশুভ শক্তিকৃত বিভেদ আমাদের ভাল থাকার, বেঁচে থাকার পক্ষে বিপদ্দজনক, যা আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারছি রোজ। তারই মধ্যে মানুষের জন্যে মানুষের এগিয়ে আসার এই উজ্জ্বল দৃষ্টান্তগুলি দেখিয়ে দিচ্ছে আমাদের জন্যে কী ভাল, কী করণীয়।

ট্রিপোটো পরিবারের পক্ষ থেকে আপনার এবং আপনার পরিবারের প্রত্যেকের জন্যে রইল শুভকামনা এবং প্রার্থনা। প্যান্ডেমিককে একসঙ্গে পরাস্ত করে আমরা একসঙ্গে অপেক্ষা করব নতুন দিনের আগমনের প্রতি।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads