করোনার আবহে আজ আমরা সবাই ঘরবন্দি। হঠাৎ করে বেরিয়ে পরে হিল্লি দিল্লি যাওয়ার আনন্দে আজ বাধা বসিয়েছে সংক্রমণের আতঙ্ক। কিন্তু আমরা কি পারি না নিজেদের ঘরের মধ্যে বাড়ির মধ্যে সুরক্ষিত রেখে মানস ভ্রমণ করে বেরিয়ে আসতে পৃথিবীর নানান প্রান্তে? আর যখন কল্পনাকে আশ্রয় করেই আমাদের উড়ান ডানা মেলবে, তাহলে আর আমাদের কল্পনা পার্থিব জগতে আটকে থাকে কেন। আসুন দেখে নি এমন কিছু দর্শনীয় এবং কল্পনীয় স্থান, যা আমরা হয়তো ছোটবেলা থেকেই চিনি, চেয়েছি বারবার ঘুরে আসতে, যাদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে সিনেমার পর্দায় বা গল্পের পাতায়। আসুন, সঙ্গী হন আমাদের কল্পনার উড়ানে।
১. সোনার কেল্লা
সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী উপন্যাস সোনার কেল্লা-য় অন্যতম রহস্য ছিল সোনার তৈরি এক কেল্লার অবস্থান নিয়ে। রাজস্থানের ইতিহাস হয়তো সোনার তৈরি আস্ত এক কেল্লা নাই থাকতে পারে, কিন্তু আপামর বাঙালির মননে মানসে মুকুলের কল্পনার সোনার কেল্লার ছবি এখনো স্পষ্ট। দুর্গপ্রধান রাজস্থানের দুর্ধর্ষ ইতিহাসের রোমান্টিকতায় হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম উপাদান এই সোনার কেল্লার হাতছানি।
২. এল ডোরাডো
সোনায় মোড়া ঘর বাড়ি বলতেই কিন্তু মাথায় আসে স্প্যানিশ রূপকথার এল ডোরাডো শহরের কথা। এমন এক শহর যার বাড়ি ঘর, দোকান বাজার, মানুষের পরিধেয় বস্ত্র, সবেতে খাঁটি সোনার ব্যবহার। যার সন্ধানে একের পর এক ঔপনিবেশিক শক্তির আঘাতে জর্জরিত হয়েছিল কলম্বিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশ। প্রফেসর শঙ্কুর গল্পে অথবা ড্রিমওয়ার্কস এনিমেশন স্টুডিওর "দ্য রোড টু এল ডোরাডো" সিনেমায় আমরা দেখতে পাই এই স্বর্ণ শহরের ঝলক। বহু শতাব্দী ধরে এই শহরের মিথ আর রহস্য ক্রমে বেড়েই চলছে এবং হয়ে উঠেছে সকলের স্বপ্নগন্তব্য।
৩. হোগওয়ার্টস ক্যাসল
হ্যারিপটারের গল্পে, আর তারপর সিনেমার পর্দায় হোগওয়ার্টস ক্যাসলের অপরূপ সৌন্দর্য আমাদের বারে বারে মুগ্ধ করেছে। যেখানে মাঠে হয় কুইডিচ খেলা, ছবির ফ্রেমের ভেতরে লোকজন করে নড়াচড়া, যেখানে সিঁড়িগুলি নিজের ইচ্ছেমতো দিক পরিবর্তন করে। কেমন হত যদি আমরাও পৌঁছে যেতে পারতাম এই যাদুরাজ্যে, যেখানে হ্যারি, রন আর হারমাইনির পাশাপাশি রমরমিয়ে চলত আমাদের নিজস্ব রূপকথা!
৪. বাঙ্গালার জঙ্গল
আনন্দমেলার পাতায় অরণ্যদেবের কমিক স্ট্রিপগুলির কথা মনে পড়ে? বেতাল, ফ্যান্টম, বা অরণ্যদেব, যে নামেই ডাকি, অরণ্যদেবের বাসস্থান কিন্তু আফ্রিকার গহীন অরণ্যের ভিতরে, বাঙ্গালা নামক কাল্পনিক এক দেশের জঙ্গলে। পোষা নেকড়ে ডেভিল আর ঘোড়া হিরোকে নিয়ে দুষ্টের দমনে সঙ্গী হতে চাইলে মনে মনে চলে যেতেই হবে অরণ্যদেবের খুলি গুহার আলো-আঁধারে।
৫. তেপান্তরের মাঠ
বিদেশী রূপকথার গণ্ডি কাটিয়ে ফিরে আসি স্বদেশী গল্পের আধারে। লালকমল নীলকমলের দেশে, ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর গ্রামে। ঠাকুমার ঝুলির পাতায় পাতায় রয়েছে একের পর এক অসাধারণ জায়গার বর্ণনা। তেমনি এক অতিপরিচিত নাম, তেপান্তরের মাঠ বা তিন ভুবনের মাঠ। দিগন্তবিস্তৃত এই মাঠ পেরিয়ে অপেক্ষা করত রাক্ষস খোক্কসদের রাজ্য, রাজকুমারীদের উদ্ধার করতে যেখানে ছুটে যেত আমাদের রূপকথার নায়করা।
৬. সাংগরী লা
দার্জিলিং বা উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় হয়তো সাংগরী লা নামক হোটেলের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছে। কিন্তু এই সাংগরী লা কথাটির মানে কি। সাংগরী লা বলতে বোঝানো হয় হিমালয় পর্বতমালা অঞ্চলের এক আনন্দের রূপকথার সব পেয়েছির দেশকে, যেখানের অধিবাসীরা লাভ করেছেন অমরত্ব। তিব্বতী রূপকথা বা লেপচা উপকথায় রয়েছে এরম স্বর্গোদ্যানের বর্ণনা। বহু বিদেশী লেখকদের লেখাতেও রয়েছে সাংগরী লা খুঁজে পাওয়ার কামনা।
৭. আটলান্টিস
গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর রচিত বিভিন্ন বইতে প্রথম দেখা পাওয়া যায় আটলান্টিসের কথা। গ্রীসের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল আটলান্টিস। কিন্তু দেব দেবীর রোষে পরে আটলান্টিস তলিয়ে যায় আটলান্টিক মহাসাগরের জলের তলায়। কিন্তু আটলান্টিসের মিথ বা লেজেন্ড কিন্তু সেই সময় থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে জনমানসে। বহু গল্পে, রচনায় বা সিনেমায় আমরা দেখেছি নিমজ্জিত আটলান্টিসের সৌন্দর্য। মানস ভ্রমণের জন্যে কিন্তু প্রাচীন এই জলনগরীর কাহিনি একেবারেই আদর্শ।