বিশ্বের প্রত্যেকটা দেশের আলাদা আলাদা সংস্কৃতি লক্ষ করা যায়। আর তাই প্রত্যেক দেশে বিশেষ কিছু উৎসব সেই নির্দিষ্টকে দেশকে বিশেষত্বের মর্যাদা দিয়েছে ।তবে এই দেশগুলিতেই এমন কিছু উৎসবের প্রচলন আছে যা সত্যিই অবাক করে দেওয়ার মতো । চলুন বিশ্বের এই উদ্ভট উৎসবগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক …
১. ভারত /মালয়েশিয়ার থাইপুসাম -
এই উৎসবের উৎপত্তি ভারতের হাত ধরে হলেও মালয়েশিয়াতে এই উৎসবটি বেশ জনপ্রিয়। এই দেশের প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান বটু কেভ। ধর্মপ্রাণ মানুষরা বিশেষ ব্রত পালন করে, একটি বিশাল কাঠামো ( কাভাদি ) সহযোগে প্রায় ১০০টি সিঁড়ি অতিক্রম করে ভগবানকে তুষ্ঠ করেন ।এক্ষেত্রে তীর্থযাত্রীর মুখগহ্বরে বিদ্ধ করে কঠিন বাঁধনে কাঠামোটি সংযুক্ত করা হয়। তবে তীর্থযাত্রীদের বিশ্বাস এই নিয়ম পালনের ফলে তাদের মধ্যে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কোনওরকম যন্ত্রণাও উপলব্ধি করা যায় না ।
২. ইতালির ব্যাটেল অফ অরেঞ্জস -
ইতালির ইভারিয়া অঞ্চলের মানুষরা প্রায় ৯টি টিমে দ্বারা বিভাজিত হয়ে একে অপরের উদ্দেশ্যে কমলালেবু ছোড়েন ।লোকগাঁথা অনুসারে এই বার্ষিক উৎসবটি পালনের প্রধান কারণ হল বিবাহের দিন সদ্য বিবাহিতা নারীর সঙ্গে এই দেশের নৃপতি ডিউকেকে সহবাস করার জন্য বাধ্য করা হত । আর সেই কাহিনি অনুসরণ করেই এই উৎসবের প্রচলন। স্থানীয় মানুষরা মধ্যযুগীয় সময়ের পরিধান এবং বেলজিয়ন পরে এই উৎসব পালন করেন ।
৩. ভারতের উরস উৎসব -
সুফী সাধক খাজা গরিব নাওয়াজ এর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর আজমীরে একটি বিশেষ উৎসব পালিত হয় । প্রায় ছয়দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানে সুফী অনুগামীরা একটি সকেট এর সাহায্যে তাদের চোখ এর কর্নিয়াটি মূল স্থান উপড়ে অতিপ্রাকৃত শক্তির সাহায্যে বাইরে নিয়ে আসেন ।
৪. জাপানের কানামারা মাতসুরি উৎসব -
জাপানের এই উৎসবটি মূলত যৌনতাকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী একসময় এক দৈত্য একজন মহিলার প্রেমে মুগ্ধ হন । পরবর্তীকালে যখন সে জানল সেই মহিলার বিবাহের দিন আসন্ন, তখন দৈত্যটি হিংসার বশবর্তী হয়ে তার স্বামীর পুরুষাঙ্গ কামড়ে ছিঁড়ে দেন। পরবর্তী কালে স্থানীয় মহিলারা কৃত্রিমভাবে একটি লোহার পুরুষাঙ্গ তৈরি করেন এবং প্রাচীন বিধি অনুসারে এটিকে পূজা করেন। এই সময় ভ্রমণকারীদের পুরুষাঙ্গর আকারে খাবার এবং ক্যান্ডিও পরিবেশন করা হয় ।
৫. ভারতের অগ্নি কেলি -
মাঙ্গালোরের এই উৎসবটি ভগবানদের যুদ্ধ নামে পরিচিত। কাতিল দূর্গা পরমেশ্বরী দেবীর ভক্তরা জ্বলন্ত লাঠির সাহায্যে একে অপরকে আঘাত করেন । প্রায় ১৫মিনিট যুদ্ধের পর সমগ্র অঞ্চলটি অগ্নিদগ্ধ হয়ে যায় ।
৬. মঙ্গোলিয়ার নাদাম উৎসব -
এই উৎসবের মধ্য দিয়ে মঙ্গোলিয়ার যোদ্ধারা ঘোড়া চালানো, কুস্তি, তিরন্দাজের সাহায্যে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেন । অনেক সময় যাযাবরীয় সম্প্রদায় বন্য ঘোড়া সহযোগে কিছু অদ্ভুত দক্ষতার প্রদর্শন করেন। এই উৎসবের উৎপত্তিস্থল মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উল্লানবাতার হলেও বর্তমানে এই দেশের সর্বত্রই এই উৎসবটি সাড়ম্বরে পালিত হয় ।
৭. মেক্সিকোর ডে অফ দ্য ডেড -
যে সমস্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে এই উৎসব পালন করা হয়। প্রাচীন প্রথা অনুসারে জীবিতকালে মানুষ যেমন খাদ্য এবং পানীয়র সাহায্যে নিজেদের জীবনটাকে উদযাপন করেন, ঠিক সেই ভাবেই মানুষরা তাদের মৃত প্রিয়জনকে স্মরণ করে এই উৎসবের আয়োজন করেন । মেক্সিকোর মানুষদের বিশ্বাস একমাত্র এই দিনেই তাদের মৃত প্রিয়জনরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । তাই এই দিনে মানুষরা কবর এর স্থানটি পরিশুদ্ধ করে ফুল দিয়ে সাজান। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই উৎসবটি এজটেক এবং ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মিলিত একটি উৎসব ।
৮. হং-কং এর চেউঙ চাও বান উৎসব -
স্থানীয় রীতি অনুসারে একটি ৬০ফুটের টাওয়ারকে বান দ্বারা সজ্জিত করা হয়। একদা হংকং-এর চেউঙ চাও গ্রামে প্লেগ নামক মহামারীর প্রাদূর্ভাব লক্ষ্য করা যায় । তাই এই মহামারী থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ভগবানের উদ্দেশ্যেই বান উৎসব পালন করেন । এই উৎসব দর্শনের জন্য বহু পর্যটকের আগমন হয়। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস যে প্রথম সর্বোচ্চ স্তরের বান খেয়েছেন তিনি সৌভাগ্যের অধিকারী ।
৯. দক্ষিণ কোরিয়ার বরিয়ং মাড উৎসব -
দক্ষিণ কোরিয়ার বরিয়ং অঞ্চলের মাটি মধ্যে রয়েছে নিরাময়ক কিছু পদার্থ, মনে করা হয় এই কারণেই মাটি উৎসব পালন করা হয় ।প্রতি বছর এই উৎসব প্রত্যক্ষ করার জন্য দেশ বিদেশ থেকে বহু পর্যটকের আগমন হয় । এই উৎসবের বিখ্যাত খেলা গুলি হলো - মাড রেসলিং, মাড স্লাইড ইত্যাদি । মূলত পর্যটনের উদ্দেশ্যেই এই উৎসবের আয়োজন করা হয় ।
১০. স্পেন-এর বেবি জাম্পিং ফিস্টা -
খ্রিস্টান বিশ্বাস এবং পাগান রীতি অনুসারে স্পেনের এল কোলাকো উৎসবটি আয়োজন করা হয় ।প্রথা অনুযায়ী প্রতিবছর সদ্য জন্মানো শিশুকে বুর্গস এর রাস্তায় শুইয়ে দেওয়া হয় । স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস এই রীতি উদযাপন করলে শিশুদের আত্মার মধ্যে থাকা অশুভ শক্তি মুক্তি পাবে এবং শিশুটি সৌভাগ্য লাভ করবে ।
বিশ্বজুড়ে এমন নানান অদ্ভুত বিশ্বাস মানুষকে ঘিরে রয়েছে । আপনিও যদি এমন অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকেন কমেন্ট বাক্সে লিখে জানাতে কিন্তু ভুলবেন না ।