"চিতল মাছের মুইঠ্যা গরম ভাতে দুইটা" আর তারসঙ্গে "চিংড়ির মালাইকারি" জম্পেশ জুটি... 

Tripoto
Photo of "চিতল মাছের মুইঠ্যা
গরম ভাতে দুইটা" আর তারসঙ্গে "চিংড়ির মালাইকারি" জম্পেশ জুটি...  1/1 by Aninda De
এমন সুস্বাদু খাবার আর কোথায় মেলে? (ছবি সংগৃহীত)

বাঙালি মানে বলুন তো? বাঙালি মানে হল কচি পাঁঠার ঝোল থেকে শুরু করে চিকেন টেংরি কাবাবের প্রতি আজন্মলালিত ভালোবাসা। শুক্ত হোক বা আলুপোস্ত, রবিবারের দুপুর হোক বা রেস্টুরেন্টের সন্ধে, সপরিবারে হামলে পড়ে একসঙ্গে হোক বা লুকিয়ে লুকিয়ে একলা একলা পাড়ার মিষ্টির দোকানে ঢুঁ দেওয়া, বাঙালি মানেই কিন্তু খাবারের প্রতি অনুরাগ আর অধ্যবসায়।

দেশে বিদেশে, ভৌগোলিক আর রাজনৈতিক বেড়াজালের এপারে ওপারে যেখানেই বাঙালিরা বসবাস করছেন, সেখানেই কিন্তু বাঙালি রন্ধনশৈলী বা বাঙালি কুইজিনের প্রসার এবং রমরমা দেখা গেছে। আর সেই রন্ধনশৈলীর তারতম্যের মধ্যেই কিন্তু ধুন্ধুমার যুদ্ধ লেগেছে ঘটি আর বাঙালের। কোন কুইজিন শ্রেষ্ঠ, আর কোন কুইজিন সবার প্রিয়, এই ধন্ধের যে কোনও একটা উত্তরেই সবাইকে খুশি করার প্রচেষ্টা বৃথা। তাই আজ সমস্ত তর্ক বিতর্ক কে সঙ্গে রেখে দেখে নেওয়া যাক বাঙাল আর ঘটি কুইজিনের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

ঘটি বা আদি কলকাতার বাসিন্দাদের রন্ধনশৈলীর রয়েছে নিজস্ব গুণ আর তা পরিপূর্ণতা পেয়েছে নবাবী আমল এবং ব্রিটিশ শাসনকালের পারিপার্শ্বিক প্রভাব থেকে। একদিকে যেমন এর ফলে আমরা পেয়েছি জগতবিখ্যাত আলু দেওয়া কলকাতা বিরিয়ানি, অন্যদিকে হয়েছে চপ, কাটলেট, ফিশ ফ্রাইয়ের আগমন। অপরদিকে দেশভাগ এবং কঠিনতর রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে অধুনা বাংলাদেশ থেকে আগত বাঙালি পরিবারবর্গের হাত ধরে আমরা পেয়েছি অত্যন্ত সুস্বাদু বাঙাল কুইজিন, যা আমাদের দিয়েছে ইলিশের প্রতি অকৃত্রিম আবেগ, আর লটে শুঁটকি বা চিতল মাছের মুইঠ্যা মতো কালজয়ী রেসিপি।

যদিও পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক দূরত্ব সেরকম বেশি নয়, তাও এই দুই রন্ধনশৈলীর ফারাক বিস্তর। এই ব্যাপারটা সবথেকে ভাল উপলব্ধি করা যায় কোন কুইজিনে কীরকম মশলা ব্যবহার হয় তা লক্ষ্য করলে। বাঙাল রান্নায় থাকে তেল ঝালের জম্পেশ মেলবন্ধন, আর মরিচ বাটা আর ফোরণের অভিজ্ঞ ব্যবহার। অপরদিকে ঘটিবাড়ির রান্নায় কিন্তু দেখা যায় চিনি বা গুড়ের ব্যবহার, ঝোলে তরকারিতে একটা হালকা মিষ্টির আহ্বান। পোস্ত দিয়ে আলু পোস্ত, ডিম পোস্ত বা ঝিঙ্গে পোস্তর প্রচলনও কিন্তু পেয়েছি আমরা ঘটি রান্নাঘরগুলি থেকেই।

আর ঘটি বনাম বাঙালের লড়াই অন্য মাত্রা পায় কিন্তু ডার্বি ম্যাচের আশেপাশে। ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের দ্বন্দ্ব মাঠ পেরিয়ে নেমে আসে মাছের বাজারে। চিংড়ি না ইলিশ। মালাইকারি, নাকি সর্ষে লঙ্কা দিয়ে ঝোল, এই লড়াই বর্তমানে পৌঁছেছে কিংবদন্তীর পর্যায়ে। তবে লক্ষণীয় কীভাবে মাছের প্রজাতি নিয়ে মতভেদ থাকলেও, ঘটি আর বাঙাল কিন্তু একে অপরের সঙ্গে মিশে যায় মাছ মাংসের প্রতি এই ভালোবাসায়। আসলে, তারতম্য থাকতেই পারে, কিন্তু জাতি হিসাবে যেখানে বাঙালির উৎস আর গন্তব্য একই সূত্রে বাঁধা, সেখানে ভেদাভেদটুকু শুধুই আলংকারিক।

তবে এ কথা ঠিক যে ঘটি পরিবারগুলিতে আমরা দেখতে পাই একটু চিংড়ি বা কাঁকড়ার প্রতি একটু বেশি প্রশ্রয়, অপরদিকে বাঙাল বাড়িতে পাবদা, কাতলা, চিতল জাতীয় মাছের প্রতি দুর্বলতা। বাঙাল পরিবারে তিন বেলা ভাত খাওয়া খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু অপরদিকে ঘটি বাড়িতে সাদা ময়দার লুচি পরোটার জন্যে রয়েছে আলাদা জায়গা।

তবে এটিও উল্লেখযোগ্য যে বিগত বেশ কিছু দশকে এই বিভাজন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। বাঙাল ও ঘটি পরিবারের একসঙ্গে সহাবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেও দেখা দিয়েছে নতুন সম্প্রীতি। আর একবিংশ শতাব্দীতে কিন্তু খাদ্যরসিক বাঙালি কিন্তু নিজেকে একটা কুইজিনে আটকে রাখেনি। সে যেমন এখন ঘরে বসেই ইতালিয়ান, মেক্সিকান, বা কন্টিনেন্টাল কুইজিনের সঙ্গে পরিচিত, তেমনই বাঙাল বা ঘটি কুইজিনের ভেদাভেদের মধ্যেও আর নিজেকে আটকে রাখেনি। যা সুস্বাদু, যা স্বাদে গন্ধে বর্ণে চিরস্বরণীয়, বাঙালীর নোলা জাত পাতের বিভেদ ভুলে তাই আপন করে নিয়েছে।

তাই শেষ পাতে পায়েস হোক বা চাটনি পাপড়, রসগোল্লা বা বিলিতি আইসক্রিম, বিবিধের মাঝে ভাল জিনিসগুলিকে আপন করে নেওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে প্রশান্তি আর উদরপূর্তির উভয় সুযোগ। সাবধানে থাকুন, ভাল খান, ঘটি বাঙাল সবাইকে আপন করে নিন, আর সবশেষে আপন করে নিন ভরপেট খাওয়ার পর বাঙালির প্রিয় ভাতঘুম!

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads