বাঙালি বললে মানুষ এখন দুটো জিনিস বোঝে। এক মাছ ভাত, দুই এক কাপ গরম চায়ের আড্ডা। গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা পশ্চিমবঙ্গে যে ঋতুই বিরাজমান হোক না কেন, বাড়ির কাপ প্লেটে বা কখনও কখনও রাস্তার মাটির ভাঁড়ে চা খাওয়ার অনুভূতি অর্জন করতে বাঙালিরা কিন্তু বহুদূর গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে পারে। আর এই দেখেই হয়তো কবীর সুমন লিখেছিলেন, “এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই।”
ঠিক তাই, চা! বাঙালির অন্যতম প্রেম। বর্তমানে দুধ চা, লেবু চা, লিকার চা, চকোলেট চা, কেশর চা আজ চা প্রেমীদের চায়ের চাহিদা অনুযায়ী এর ভিন্নতাও বাড়ছে। চায়ের কথা বললে চাহিদার কথা সব থেকে বেশি মনে পড়ে তা হল উত্তরবঙ্গ, যেখানে রয়েছে প্রায় ৪৫০টিরও বেশি চা বাগান। ৮টি জেলা ( দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ) নিয়ে গঠিত উত্তরবঙ্গ রাজ্যটি কিন্তু চায়ের জন্য বিখ্যাত। এখানকার চা বাগানগুলির কোনটি ১০০ বছর আবার কোনটি ১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চা বাগানগুলি দার্জিলিং, তরাই, ডুয়ার্স, শিলিগুড়িতে অবস্থিত। তবে ডুয়ার্সের সামসিং চা বাগান অন্যতম বৃহত্তর চা বাগান, যার আয়তন প্রায় ১২৫৬.৬০ হেক্টর।
উত্তরবঙ্গের চা-বাগানে কীভাবে চা গাছের যত্ন এবং চা পাতা সংরক্ষণ করা হয়:
• যেখানে চা চাষ করা হয় সেই স্থানের তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকা দরকার।
• প্রায় ১৫০সেন্টিমিটার থেকে আর ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন।
• চা চাষের জন্য লৌহ মিশ্রিত দো-আঁশ মাটি এবং পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকার প্রয়োজন।
• চা চাষের জন্য অধিক ঢাল যুক্ত জমির প্রয়োজন,যেখানে বৃষ্টির জল দাঁড়াতে পারবে না এবং ধাপে ধাপে চা চাষ করা হবে, যা পার্বত্য অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
• চা গাছ সরাসরি সূর্যের আলোয় সহ্য করতে পারে
• না, তাই চা বাগানের মাঝে মাঝে কিছু বড় বৃক্ষ রোপন করা হয়, যাতে সূর্যের রশ্মি সরাসরি চা গাছের উপর না পড়ে।
• কুয়াশা অতিরিক্ত বৃষ্টি তুষারপাত শহর এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে চা গাছের ক্ষতি করে।
• চা পাতা তোলা এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচর্যার জন্য প্রচুর দক্ষ কর্মী প্রয়োজন হয়, যেগুলি সাধারণত মেয়েরাই করে থাকে।
• সঠিক সময়ের নারীদের কোমল হস্তের দ্বারা চা গাছ থেকে একটা কুঁড়ি দুটো পাতা তুলে সেগুলিকে সংরক্ষণ করা হয়।
• এরপর সেই চা পাতাগুলিকে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন চা তৈরির ফ্যাক্টরিতে যেখান থেকে নানারকম প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় বিভিন্ন স্বাদের চা।
চা পানের বিভিন্ন গুণাবলী:
• হার্টে রক্ত সরবরাহ বাড়ায় হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।
• উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
• শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে
• চায়ে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
• মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে।
• শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করে।
• প্রতিদিন নিয়মিত চা পান করলে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের কোষগুলো পুনর্জীবিত হয়ে ওঠে। ফলে, স্কিন ক্যান্সারে হওয়ার আক্রান্ত পরিমাণ অনেক হ্রাস পায়।
• ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী কারণ এটি কোষ থেকে ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন নিঃসৃত করে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
• কিডনি রোগের জন্য উপকারী।
• রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
উত্তরবঙ্গের কিছু উল্লেখযোগ্য চা বাগান:
উত্তরবঙ্গের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম। এই মনোরম শীতল পরিবেশে এসে এককাপ চা পান করার আনন্দ উপভোগ করতে চান তাহলে আজই এখানে চলে আসুন। কী বলা যায়, হয়তো ওই এক কাপ চা পান করার নেশায় আপনি বারবার আসতে চাইবেন এই সমস্ত জায়গায়।