কলকাতা! তিলোত্তমা নগরী সবসময় গর্বিত তার সৌন্দর্যের ছটার জৌলুসে। এই গর্বের অন্তরীক্ষে রয়েছে বেশ কিছু অজানা গল্প। আর এই গল্পগুলিকে প্রতিটি পরিচ্ছেদে সাজিয়ে তুলেছে যে জায়গাগুলি সেগুলি ভ্রমণ না করলে কলকাতা জানার আগ্রহ কিন্তু অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। ঠিক সেই রকমই ৮টি জায়গার নাম ও ঠিকানার সম্ভার সাজিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে দেওয়া হল; আপনার অজানা তথ্যগুলিকে জানানোর আশায়।
কবরস্থান শব্দটি শুনলেই কেমন যেন গা ছমছম করে ওঠে। কিন্তু আপনি যদি সাউথ পার্ক স্ট্রিটের এই কবরস্থানে বেড়াতে যান তবে আপনার মন থেকে এই সমস্ত ছামছাম ব্যাপারগুলো একেবারে চলে যাবে।
১৭৬৭ সালে গড়ে ওঠা এই কবরস্থানটি ইতিহাসের পাতায় এক অনন্য স্থান পেয়েছে। ইউরোপ বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের গড়ে ওঠা ঊনবিংশ শতাব্দীর বৃহত্তম খ্রিস্টান কবরস্থান হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানকার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সমাধিগুলি নির্মিত হয়েছে ইন্দো সেরেসনিক শৈলীর দ্বারা।
ঠিকানা:-
মল্লিক বাজার, পার্ক স্ট্রীট কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ- ৭০০০১৭, ভারতবর্ষ।
হাওড়া ব্রিজের ঠিক নিচে অবস্থিত এই ফুল বাজারটি মোটামুটি প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে গভীর রাত অবধি খোলা থাকে। রংবেরঙের সুগন্ধি ফুলের সুবাস গ্রহণ করতে এখানে শুধু কলকাতার লোকজন নয়, দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে ফুল চিনতে এবং তা সংগ্রহ করার জন্য। তবে কিছু কিছু ব্যক্তিরা অমূল্য এসব ফুলের ছবি তোলার জন্যও এখানে আসেন।
ঠিকানা:-
পি২২২, ১ স্ট্র্যান্ড ব্যাংক রোড, ফেয়ারলি প্লেস, বিবাদীবাগ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ- ৭০০০০১, ভারতবর্ষ।
৩. অমিতাভ বচ্চন টেম্পেল:-
আপনি কি বিগ-বির ফ্যান? তাঁর অভিনীত প্রতিটি সিনেমা দেখার জন্য আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিনেমা হলে লাইন দিয়ে টিকিট কাটেন? তাহলে আপনার জন্য এটি অত্যন্ত সুখকর খবর! কলকাতার বুকে তৈরি হয়েছে অমিতাভ বচ্চনকে উৎসর্গ করে একটি মন্দির। যেখানে ঘুরতে গেলে আপনি তাঁর অভিনীত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের পোস্টার এবং তাঁর ছবি দেখতে পাবেন। শুধু তাই নয়, ১৯৯০ সালের অমিতাভ বচ্চনের বিখ্যাত সিনেমা অগ্নিপথ - এ তিনি যে জুতোজোড়া পড়েছেন, সেটিও এখানে রাখা রয়েছে।
ঠিকানা:-
১০ এ কুষ্টিয়া , শ্রী ধর রোড কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ- ৭০০০৩৯।
তেরেট্টি বাজার নামে পরিচিত চায়নাটাউন ভারতের একমাত্র জায়গা, যেখানে ভারতীয় ও চিন সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটেছে। এখানে এসে আপনি বিভিন্ন রকমের প্রাতঃরাশ যেমন- মোমো, রোল, সসেজ ইত্যাদি চিনা খাবারের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন।
ঠিকানা:-
টেংরা, তেরেট্টি।
৫. কলকাতার ট্রাম-
অপু দুর্গা ছোটবেলায় কাশবনের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে পৌঁছে যেত রেল লাইনের ধারে। রেলগাড়ির কু... ঝিক- ঝিক শব্দ তাদেরকে বড্ড বেশি আকর্ষণ করত। চলচ্চিত্র ধারাবাহিকতায় মোড়ে গাথা এই গল্প কথাগুলি আমাদের মনে ট্রেন দেখার ইচ্ছা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ধরল। তবে তার মধ্যেও কলকাতার ট্রাম কিন্তু আমাদের কাছে বেশ একটি অনন্য বিষয়। রাস্তার মাঝখান দিয়ে ছোট ছোট লাইন বরাবর এগিয়ে চলা ঠং ঠং শব্দ করতে করতে পৌঁছে যাওয়া ইলেকট্রিকের এই যানবাহনটি আকারে ছোট হলেও বহু অফিসগামী মানুষের এক-রকমের নিত্যসঙ্গী। ১৯০২ সাল থেকে কলকাতার বুকে প্রথম ইলেকট্রিক ট্রাম চলতে শুরু করে, যা এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো ট্রাম যায় বিবেচিত।
৬. পবিত্র নাজরেথের আর্মেনিয়ান চার্চ-
১৭২৪ সালে গড়ে ওঠা এই আর্মেনিয়ান চার্চটি ভারতবর্ষে আর্মেনিয়ান সম্প্রদায়ের এক অন্যতম মিলনস্থল। এই গির্জাটি প্রথম ১৬৮৮ সালে তৈরি করা হয়, যা পরবর্তীতে আগুন লেগে নষ্ট হয়ে যায়। তারই প্রতিস্থাপনরূপ হিসেবে পরবর্তীতে আবার এই গির্জা নির্মান করা হয়।
ঠিকানা:-
আর্মেনিয়ান স্ট্রিট, বরতলা বড়বাজার মার্কেট কলকাতা।
কলকাতার ইতিহাস সংস্কৃতি এবং চারুকলার সমন্বয় ছাড়াও বিজ্ঞানমনস্ক শহর হিসেবে পরিচিত। আর তার অন্যতম নিদর্শন হল ১৯৬৩ সালে গড়ে ওঠা এই বিড়লা প্ল্যানেটরিয়াম। এটি এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্ল্যানেটরিয়াম হিসাবে নির্বাচিত। এখানে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর ১০০টিরও বেশী জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত প্রকল্প রয়েছে, যেগুলিকে দেখার জন্য করার জন্য মোটামুটি ৭০০ ব্যক্তি একসাথে এখানে প্রবেশ করতে পারে।
ঠিকানা:-
ক্যাথিড্রাল রোড, কলকাতা।
সৃজনশীলতা ও শৈল্পিক কার্যকারিতার এক অনন্য জায়গায় কুমারটুলি। সরু গলির মধ্যে অবস্থিত এই জায়গাটিতে মৃৎশিল্পীরা বিভিন্ন রকমের প্রতিমা তৈরি করে থাকেন। সারাবছরই এখানে প্রতিমা গড়ার কাজ চলে। এসব ছাড়াও ফটোগ্রাফির জন্য স্থানটি আদর্শ। বেশ কিছু ফটোগ্রাফার এবং মডেলরা এই কুমারটুলিতে এসে তাদের কিছু ছবি তোলেন।
ঠিকানা:-
শোভাবাজার সুতানুটি, কলকাতা।