কলকাতার পরেশনাথ মন্দির : কলকাতার জৈন সম্প্রদায়ের ১৫০ বছর পুরনো পীঠস্থান...

Tripoto
Photo of কলকাতার পরেশনাথ মন্দির : কলকাতার জৈন সম্প্রদায়ের ১৫০ বছর পুরনো পীঠস্থান... 1/2 by Aninda De
স্থাপত্য এবং গঠনশৈলীর বিশেষত্ব নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ (ছবি সংগৃহীত)

মানিকতলা থেকে একটু এগিয়ে গৌরীবাড়ির দিকে গেলেই পথে পড়বে বদ্রীদাস মন্দির স্ট্রিট, আর এই পথের উপরেই পড়বে কলকাতার জৈন সম্প্রদায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় পীঠস্থান, পরেশনাথ মন্দির। শুধু জৈন নয়, দেশ বিদেশের নানান ধর্মের মানুষদের কাছেই পরেশনাথ মন্দির অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন স্থল। আসুন, আজ জেনে নেই কলকাতার এই প্রাচীন জৈন মন্দিরটির খুঁটিনাটি।

পরেশনাথ মন্দিরের স্থাপনা

পরেশনাথ মন্দিরের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হল এই মন্দিরের বয়স। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে, রাই বদ্রীদাস বাহাদুর মুকিম নামক এক প্রভাবশালী জৈন ব্যক্তি মন্দিরটির স্থাপনা করেন। মন্দির প্রতিষ্ঠার দায়িত্ত্বে ছিলেন শ্রী কল্যাণসুরেশ্বর জি মহারাজ।

পরেশনাথ মন্দিরের খুঁটিনাটি

ভগবান পরেশনাথের উৎসর্গে স্থাপিত এই মন্দিরটিতে জৈনরা পূজা করেন ২৩তম জৈন তীর্থঙ্কর পরেশনাথের। কলকাতার, তথা সমগ্র পশ্চিম ভারতের জৈন সম্প্রদায়ের কাছেই এই মন্দিরটির গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁদের প্রধান তীর্থস্থল হিসেবে এই মন্দিরটিই বিখ্যাত।

সমগ্র মন্দিরটি ভিতরে বিভাজিত চারটি মূল ভাগে। শীতলনাথ মন্দিরের মুলনায়ক হলেন ভগবান শীতলনাথ। চন্দ্রপ্রভু মন্দিরের মুলনায়ক হলেন ভগবান চন্দ্রপ্রভূস্বামী। মহাবীর এবং দাদাওয়াদি মন্দিরের পূজ্য মুলনায়ক হলেন যথাক্রমে ভগবান মহাবীরস্বামী এবং জৈন আচার্য জিন দত্ত কুশল সুরির পদযুগলের চিহ্ন।

মন্দিরের গর্ভগৃহে ভক্তরা দেখতে পান ভগবান শীতলনাথের হীরকখচিত কপালমূর্তি। দাদাওয়াদি মন্দিরটি উৎসর্গ করা হয়েছে শেষ জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীরের পুণ্যনামে।

পরেশনাথ মন্দিরের স্থাপথ্যভাবনা

পরেশনাথ মন্দিরের আরেক বিশেষত্ব হল মন্দিরপ্রাঙ্গনের ভিতরের অসামান্য কারুকার্য এবং শতবর্ষ প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন, যা ভক্তদের কাছে আজও বিস্ময়ের কারণ। মন্দিরের গায়ে গায়ে রয়েছে সূক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন, রয়েছে আয়না-খচিত স্তম্ভ এবং স্টেইন্ড গ্লাস বা রঙিন ঘষা কাচ দিয়ে সাজানো জানলা।

Photo of কলকাতার পরেশনাথ মন্দির : কলকাতার জৈন সম্প্রদায়ের ১৫০ বছর পুরনো পীঠস্থান... 2/2 by Aninda De
মন্দিরের বাহারি কারুকার্য (ছবি সংগৃহীত)

মন্দির চত্বরের ভিতরে এবং বাইরে, সমস্ত অঞ্চলটি জুড়েই রয়েছে অনেকগুলি ফুলের বাগান এবং পুরনো ফোয়ারা। সবে মিলে আরাধনার মাঝে নিয়ে আসে এক অপূর্ব প্রশান্তির আমেজ। পরেশনাথ মন্দিরের ভিতরের পুকুরটিও কিন্তু বেশ বিখ্যাত, তার জলে রয়েছে রঙ বেরঙের নানান মাছ। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে আপনি মাছেদের খাবার কিনে পুকুরে ছড়িয়ে দিতে পারেন। বহু ভক্ত মনে করেন পরেশনাথ মন্দিরের মাছেদের খাবার খাওয়ালে পুণ্যসঞ্চয় হয় বিপুল পরিমাণে। মন্দিরগুলির ভিতরের দেওয়ালে খুঁজে পাবেন চিত্রশিল্পী গণেশ মুসকারের আঁকা নানান পৌরাণিক চিত্রকলা।

পরেশনাথ মন্দির ও জৈন পূজা পার্বণ

প্রতি বছর ভাদ্র মাসে জৈনরা অহিংসা পালন করেন এবং এই সময়ে পরেশনাথ মন্দিরে পূজা দেওয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নানান জৈন মিছিল এবং পালা পার্বণ এই পরেশনাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করেই আয়োজিত হয়।

আপনি পড়তে পছন্দ করতে পারেন: আট্টুকাল মন্দির

কথিত আছে পরেশনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহের ভিতরে আছে একটি ঘিয়ের পিদিম, যা একটানা ১৮৬৭ সাল থেকে জলে আসছে এবং আজ পর্যন্ত কখনক নিভে যায়নি। অহিংসা এবং শান্তির প্রতীক হিসেবে এই পুণ্যশিখা চিরতরে জ্বলমান থাকবে, তাই কাম্য।

পরেশনাথ মন্দিরের ঠিকানা

বদ্রিদাস মন্দির স্ট্রীট, মানিকতলা, খান্না, কলকাতা ৭০০ ০০৬

পরেশনাথ মন্দির দর্শনের সময়

সপ্তাহের ৭ দিনই দর্শকরা এখানে স্বাগত। সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১টা অথবা বিকেল ৪টে থেকে রাত ৯.৩০টা অবধি আপনি মন্দির দর্শন করতে পারেন। মাঝে অল্প কিছু সময় মন্দির বন্ধ করা থাকে। কোভিড পরিস্থিতিতে দর্শনের সময়কালের উপর অতিরিক্ত বাধ্য বাধকতা থাকতে পারে।

আপনাকে অবশ্যই এই নিবন্ধটি পড়তে হবে: রণকপুর জৈন মন্দির

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads