শকুনি থেকে দুর্যোধন, সুসজ্জিত মন্দিরে নায়কের সাথে সমমর্যাদায় পূজিত হন খলনায়কেরাও...

Tripoto
Photo of শকুনি থেকে দুর্যোধন, সুসজ্জিত মন্দিরে নায়কের সাথে সমমর্যাদায় পূজিত হন খলনায়কেরাও... 1/2 by Doyel Banerjee

আমাদের দেশে পুরাণে নায়কের কমতি নেই। ধর্ম থেকে রাজনীতি, সব জায়গাতেই এঁরা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন। কিন্তু নায়ক তখনই নায়ক হয়ে ওঠেন যখন তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার মতো খলনায়ক থাকেন। বিশ্বাস করুন বা না করুন এই দেশেই রয়েছে অগুন্তি খলনায়কদের উদ্দেশ্যে নির্মিত মন্দির। দেখা না থাকলে এখনি তালিকা তৈরি করে নিন।

শকুনি মন্দির

Photo of শকুনি থেকে দুর্যোধন, সুসজ্জিত মন্দিরে নায়কের সাথে সমমর্যাদায় পূজিত হন খলনায়কেরাও... 2/2 by Doyel Banerjee

কোল্লাম

মহাভারতের যুদ্ধের অন্যতম সূত্রধার হলেন শকুনি। মূলত তাঁর চালেই কাবু হয়ে পড়েন পাণ্ডবরা। তবে শকুনি ছিলেন মহা পণ্ডিত, মহাজ্ঞানী গান্ধার রাজপুত্র। তিনি যা করেছিলেন তাঁর বোনের কথা ভেবে করেছিলেন। তাই তিনি হলেন এক আদর্শ ভাই। কেরালার এক গোষ্ঠী শকুনির মধ্যে স্বাত্বিক ভাব খুঁজে পেয়েছেন। তাই তাঁরা পবিত্রেশ্বরমে একটি মন্দির তৈরি করেছেন। মন্দিরের মধ্যে একটি সিংহাসন রাখা আছে। মনে করা হয় শকুনি এখানেই বসতেন। এই মন্দিরে কোনও রকম পুজোপাঠ হয় না। তবে দর্শনার্থীরা নারকেল, রেশম বস্ত্র, তালের রস ইত্যাদি ভেট দেন। স্থানীয় কুরাভার গোষ্ঠী এই মন্দিরের দেখাশোনা করেন।

স্থানীয় মানুষ বিশ্বাস করেন মহাভারতের যুদ্ধের সময় কৌরব ও শকুনি এখানে এসেছিলেন। এখানেই সেনার মধ্যে অস্ত্র বিতরণ করা হয়। কুরাভার গোষ্ঠী মনে করেন যে মহাভারতের পরাজয়ের পর ভগ্ন হৃদয় শকুনি এখানে চলে আসেন এবং শিবের আরাধনায় দিন যাপন করেন। শকুনির প্রিয় ভাগ্নে রাজপুত্র দুর্যোধনের মন্দিরও আছে অনতিদূরে।

দুর্যোধনের মন্দির

Photo of Kollam, Kerala, India by Doyel Banerjee

কেরালা

শকুনির প্রিয়পাত্র ছিলেন রাজপুত্র দুর্যোধন। কোল্লামের পোরুভাজি অঞ্চলের মালানাদা মন্দির উৎসর্গ করা হয়েছে দুর্যোধনকে। মন্দিরের মধ্যে কোনও মূর্তি নেই। শুধু একটি উঁচু মঞ্চ আছে। এখানে ভক্তরা এসে এক বিশেষ রকমের ধ্যান করেন যার নাম সংকল্প। যদিও ভারতে দুর্যোধনের আরও অনেক মন্দির আছে কিন্তু এই মন্দিরটি খুব জনপ্রিয়। ভক্তরা সুপারি, মদ, মুরগি, লাল কাপড় এইসব দিয়ে পুজো দিত আসেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি এখানে মালাক্কুরা বলে একটি বার্ষিক উতসব পালিত হয়। মজার বিষয় হল এই জমি এবং মন্দিরের জন্য যে কর দিতে হয় তার রসিদ তৈরি হয় দুর্যোধনের নামে!

রাবণের মন্দির

Photo of Kerala, India by Doyel Banerjee

অন্ধ্রপ্রদেশ

রাবণ পরস্ত্রীকে হরণ করেছিলেন। তাই তাঁর মন্দির থাকাটা একটু অদ্ভুত। যদিও ভারতে রাবণকে উৎসর্গ করে সাতটি মন্দির আছে। পুরাণ বলছে রাবণ হলেন প্রজাপিতা ব্রহ্মার নাতি এবং কুবেরের ছোট ভাই। রাবণের বাবার নাম হল ঋষি বিশ্রভা। ছোট থেকেই রাবণ ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। বেদ ও পুরাণ ছিল তাঁর নখদর্পণে। তিনি পরম শিবভক্ত ছিলেন এবং ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত অসংখ্য শিবের মন্দির স্থাপন করেন।

এই মন্দির অবস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনারায়। মনে করা হয় রাবণ এখানেই জন্মেছিলেন। এখানকার দাভে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় নিজেদেরকে রাবণের বংশধর বলে মনে করেন। তাঁরা বলেন রাবণ হচ্ছেন ত্রিলোকের অধীশ্বর এবং একজন মহান ব্যক্তি। এই মন্দিরটি ছাড়াও দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, কানপুর ইত্যাদি জায়গাতেও রাবণের মন্দির আছে।

কর্ণের মন্দির

Photo of Andhra Pradesh, India by Doyel Banerjee

উত্তরাখণ্ড

উত্তরকাশীর দেওরাতে রয়েছে কর্ণের মন্দির। মহাভারতে তিনি পরিচিত ছিলেন দাতা কর্ণ হিসেবে। তবে তাঁর ভাগ্য কখনও তাঁর সহায় হয়নি। বলা হয় এই অঞ্চলেই সূর্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কর্ণ তপস্যা করেছিলেন। তাই এই অঞ্চলকে কর্ণপ্রয়াগ বলা হয়। অন্য একটি জনশ্রুতি বলে যে কর্ণের মৃত্যুর পর কৃষ্ণের আদেশে অর্জুন তাঁকে এখানেই সমাধিস্থ করেন।

নিজের নীতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল ছিলেন কর্ণ। স্বয়ং ধর্মের দেবী তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রে আগলে রাখতেন। শ্রী কৃষ্ণ ছলনা করে অর্জুনকে দিয়ে তাঁকে হত্যা করান। কর্ণের মন্দির বর্গাকার এবং কাঠের তৈরি। এটি অন্যান্য মন্দিরের চেয়ে আলাদা। ইচ্ছা পূর্ণ হলে মন্দিরের দেওয়ালে পয়সা ছুঁড়ে দেওয়ার রীতি আছে এখানে।

গান্ধারীর মন্দির

Photo of Uttarakhand, India by Doyel Banerjee

মাইসোর

কৌরবদের মা গান্ধারের রাজকন্যা গান্ধারীর মন্দিরও আছে। গান্ধারী তাঁর স্বামী ও সন্তানদের জন্য লড়াই করেছেন। স্বামী অন্ধ ছিলেন বলে তিনিও চোখে কাপড় বেঁধে নেন। মাইসোরের এক গোষ্ঠী গান্ধারীর চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে ২০০৮ সালে একটি মন্দির নির্মাণ করে দেন। ২.৫ কোটি টাকায় এই মন্দির তৈরি হয়েছিল।

পিতামহ ভীষ্মের মন্দির

Photo of Mysore, Karnataka, India by Doyel Banerjee

প্রয়াগরাজ

কৌরব সেনাদের মাথার উপরে ছিলেন ভীষ্ম। তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা আজীবন রেখেছিলেন। প্রয়াগরাজে তীরের বিছানার উপর শুয়ে থাকা ভীষ্মের মন্দির রয়েছে। কুরুক্ষেত্রেও ভীষ্মের আরেকটি মন্দির আছে। এই মন্দিরটি দারাগঞ্জে নাগবাসুকির মন্দিরের কাছে অবস্থিত।

এই পৌরাণিক চরিত্রের মন্দিরগুলি প্রমাণ করে যে সবারই কিছু না কিছু ভালো দিক আছে। তাহলে কী ভাবছেন? এই মন্দিরগুলো একবার অন্তত দেখে নিতে ভুলবেন না।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

(এটি একটি অনুবাদ করা আর্টিকেল। মূল প্রবন্ধ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।)

Further Reads