গুড ফ্রাইডের দিনে জেনে নেওয়া যাক কলকাতার নানান চার্চের কথা...

Tripoto
Photo of গুড ফ্রাইডের দিনে জেনে নেওয়া যাক কলকাতার নানান চার্চের কথা... 1/1 by Aninda De
ছবি সংগৃহীত

কলকাতা শহরের পরিচয় পাওয়া যায় বৈচিত্রের মধ্যে সমন্বয়ের মেলবন্ধন দিয়ে। নানা ভাষা, নানা জাতি, নানা ধর্মের মানুষ যুগে যুগে আপন করে নিয়েছে আমাদের এই তিলোত্তমাকে। ঐতিহাসিক এবং আধ্যাত্মিক আঙ্গিকেও এই বৈচিত্র আমাদের সুযোগ করে দেয় বিভিন্ন রকম সংস্কৃতিকে কাছ থেকে দেখার। গুড ফ্রাইডের শুভ মুহূর্তে তাই দেখে নেওয়া যাক, কলকাতা শহরের কোন কোন বিশেষ বিশেষ চার্চ বা গির্জা থেকে আপনি ঘুরে আসতে পারেন।

সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল

১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত এই চার্চটি এশিয়ার প্রথম এপিস্কোপাল চার্চ। ইন্দো-গথিক স্থাপত্যকলার এই অনন্য নিদর্শনটি শুধু ভারতের নয়, এশিয়ার গর্ব বলা যায়। এটি কলকাতার উচ্চতম চার্চ ও বটে, চার্চটির টাওয়ারের উচ্চতা প্রায় ২০১ ফিট আর ফ্ল্যাগস্টাফের উচ্চতা প্রায় ১৭৫ ফিট। সুবিশাল এবং ঐতিহ্যবাহী এই চার্চটি কলকাতার কলোনিয়াল ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

কোথায় : ক্যাথেড্রাল রোড, বিড়লা প্ল্যানেটারিয়ামের কাছে

গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ

কালীঘাট ট্রাম ডিপোর ঠিক পাশে, মেট্রো স্টেশন থেকে একটু আগেই রয়েছে বিশালাকায় গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ। সুদূর গ্রিস থেকেও যে এককালে বহু মানুষ কলকাতায় আসতেন, কলকাতাকে তাঁদের বাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, তারই নিদর্শন এই অসাধারণ সুন্দর চার্চটি। চার্চটির বাইরে আছে ৪টি বিশাল বিশাল ডোরিক শৈলীর স্তম্ভ, যা মনে করিয়ে দেয় প্রাচীন গ্রিক স্থাপত্যশৈলী। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এই চার্চের মাস এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান আজও পরিচালিত হয় কইন গ্রিক উপভাষায়।

কোথায় : ২ এ, লাইব্রেরি রোড, কালীঘাট

চার্চ অফ ক্রাইস্ট দ্য কিং

পার্ক সার্কাসের ৭ মাথার মোড় থেকে অনতিদূরেই অবস্থিত পুরাতন এই চার্চটি। বিশাল এই চার্চটির অন্যতম বিশেষ দিক হল এখানে মাস আয়োজিত হয় শুধু ইংরেজিতে নয়, বাংলা, হিন্দি এবং অন্যান্য ভাষাতেও। যেকোনো খ্রিস্টীয় অনুষ্ঠানের সময়ে পার্ক সার্কাসের গ্যাঞ্জাম পেরিয়ে একবার এই চার্চে ঢুকলে মনে হবে আপনি পাড়ি দিয়েছেন দূরের কোন নিরাকার শান্তির দেশে। খ্রিস্টমাসের মিডনাইট মাসের জন্যেও এই চার্চটি খুব বিখ্যাত।

কোথায় : ৫ সৈয়দ আমির আলি এভিনিউ

আর্মেনিয়ান চার্চ অফ দি হোলি ন্যাজারেথ

কলকাতার ইতিহাসে বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা জনজাতির আবির্ভাব ঘটেছে, শুধু ব্রিটিশরাই নয়, এসেছিলেন আর্মেনিয়ান, ইহুদী, গ্রিকরা। তাঁদের ইতিহাসের লুপ্তপ্রায় অধ্যায় এখনও লুকিয়ে আছে কলকাতার বুকের মধ্যে। ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত কলকাতার আর্মেনিয়ান চার্চটিকে কলকাতার অন্যতম পুরাতন চার্চ হিসাবে গণ্য করা হয়। শ্বেতশুভ্র চার্চটির বাইরে রয়েছে আম, জাম গাছের বাগান। বড়বাজারের ব্যস্ততার মধ্যে এই চার্চের অবস্থান সত্যিই যেন মরুভূমির মাঝে এক টুকরো মরুদ্যানের সন্ধান।

কোথায় : ২, আর্মেনিয়ান স্ট্রিট, বড়বাজার

সেন্ট থমাস চার্চ

রোমান ক্যাথলিক ভাবধারা অনুসরণ করে চলা চার্চগুলির মধ্যে সৌন্দর্য, গুরুত্ব এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকে সেন্ট থমাস চার্চটি অন্যতম। সাবিকে কলোনিয়াল আর্কিটেকচার দেখতে হলে অবশ্যই আসতে হবে এখানে, এবং চার্চটির অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যও নজরকাড়া। উঁচু সিলিং, কাঠের ফ্রেমের বিশাল বিশাল দরজা জানালা, চারিদিকের দেওয়ালে বাইবেলের নানান দৃশ্যের ছবি, সব মিলিয়ে পর্যটকদের জন্য এ এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। মাদার টেরিজার মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ এক সপ্তাহ সেন্ট থমাস চার্চে রাখা হয়েছিল।

কোথায় : ১৩ডি, মির্জা গালিব স্ট্রিট

সেন্ট অ্যান্ড্রুস্ চার্চ

কলকাতা একসময় হয়ে উঠছিল বিশ্বের দরবার। নানা দেশের, নানা জনজাতির চার্চগুলি যেন সেই ইতিহাসেরই প্রতীক। এই চার্চটির স্থাপনা করেছিলেন স্কটল্যান্ডের বাসিন্দারা, ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে। বাইরে থেকে বেশ ছিমছাম দেখতে এই চার্চটির অন্যতম আকর্ষণ হল চার্চের ক্লকটাওয়ারটি, যা বহুদূর হতে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। স্কটিশ স্থাপত্য, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নিদর্শন এই চার্চটি।

কোথায় : ১৫, বিবাদী বাগ

সেন্ট জনস চার্চ

১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে এই চার্চের যাত্রা শুরু হয়েছিল অংলিকান ক্যাথেড্রাল অফ ক্যালকাটা নামে, তৈরি হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায়। সেই সময়ে চার্চটিকে ডাকা হত পাথুরে গির্জা নামে। বয়সের নিরিখে এটি কলকাতার তৃতীয় প্রবীণতম চার্চ। কালক্রমে এই চার্চটি বর্তমানে পরিচিত সেন্ট জনস চার্চ হিসাবে। চার্চ চত্বরের ভিতরে রয়েছে জোব চার্নকের কবর, ব্ল্যাক হোল মনুমেন্ট এবং দ্বিতীয় রোহিল্লা যুদ্ধের স্মৃতিসৌধ।

কোথায় : ২/২, কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট, লাল দীঘির কাছে

সেন্ট জেমস চার্চ

সেন্ট জেমস চার্চকে বোধহয় আমরা আরো ভালো করে চিনি অন্য একটি নামে, জোড়া গির্জা। চার্চটির সামনে পাশাপাশি দুটি একই রকম দেখতে গম্বুজাকৃতি স্পায়ার থাকার জন্যে লোকমুখে জোড়া গির্জা নামটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, আদতে যদিও চার্চ আছে একটিমাত্রই। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত নিও-গথিক আর্কিটেকচারের এই বিশাল প্রাচীন গির্জাটি ব্রিটিশ শাসনকাল ও প্রভাবের আরেক মূর্ত নিদর্শন। চার্চটির ভিতরের অঙ্গসজ্জা এবং শান্তিপূর্ণ আবহাওয়া পর্যটকদের খুবই প্রিয়।

কোথায় : ১৬৫ এ, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস রোড

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads