রাজস্থানের অসীমসুন্দর উদয়পুরের কথা তো আমরা সবাই জানি, কিন্তু ত্রিপুরার উদয়পুর শহরের নাম শুনেছেন কি? হ্যাঁ, ভারতবর্ষের ম্যাপের উপর এই দ্বিতীয় উদয়পুর রয়েছে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে। আর ত্রিপুরার এই উদয়পুরের বিশেষত্ব? শহরের মাঝ বরাবর চলে গেছে গুমতি নদী আর শহর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক মন্দির, সুন্দর সুন্দর লেক আর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
উদয়পুর কেন যাবেন?
এই উদয়পুরে রয়েছে অসংখ্য লেক এবং মন্দির, যা ত্রিপুরা পর্যটনের এক অন্যতম আঙ্গিক। আসুন, দেখে নি এখানে কী কী আপনি ঘুরে দেখে নিতে পারেন :
মাতাবাড়ি
ত্রিপুরার বিখ্যাত মাতাবাড়ি মন্দির বা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের অবস্থান উদয়পুরে, যা তৈরি হয়েছিল আজ থেকে ৫০০ বছর আগে। মহারাজা ধন্য মানিক্য দেবের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি এই মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল।
নীরমহল
১৯৩৯ সালে, মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর তৈরি করেছিলেন এই প্যালেসটি, রুদ্রসাগর লেকের জলাভূমির উপরে। মুঘল ও প্রাচীন স্থাপত্যকলার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এই প্যালেসের ২৪টি ঘর তৈরি হয়েছিল রাজপরিবাবরের সদস্যদের প্রমোদ বিহারের জন্যে। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা অবধি দর্শকদের জন্যে খুলে দেওয়া হয়। মাত্র ৫০টাকা দিয়ে এই লেকের জলে বোটিং করতে ভুলবেন না যেন।
বিজয় সাগর
লেকের শহরে কি আর লেক থেকে দূরে থাকা যায়? এই শহরের বৃহত্তম লেক বিজয় সাগর লেক, লোকমুখে যা পরিচিত মহাদেব দীঘি নামে, কিন্তু তৈরি হয়েছিল জনসাধারণের দৈনন্দিন জলের প্রয়োজন মেটাতে। চারিদিকে বিস্তৃত ঘন সবুজ পরিবেশের ঠিক মাঝে অবস্থিত বিজয় সাগর লেক প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে যেন স্বর্গসম।
তৃষ্ণা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
উদয়পুর থেকে মাত্র এক ঘণ্টা দূরত্বে রয়েছে তৃষ্ণা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র। বহু বিরল প্রজাতির পাখিদের দেখা যায় এখানে। পক্ষীবিদ বা বন্য প্রাণিপ্রেমীদের জন্যে জায়গাটি আদর্শ। মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া যায় চিতাবাঘের। হাতে আধ ঘণ্টা সময় থাকলে করতে পারেন তৃষ্ণা লেকের উপর বোট রাইড। দর্শকদের জন্যে প্রবেশকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে অবধি। সাধারণ টিকিটমূল্য এখানে ৬টাকা।
পিলাক প্যালেস
যদি ইতিহাস হয়ে থাকে আপনার পছন্দের বিষয়, তাহলে একদিন কাটিয়ে যেতে পারেন পিলাকে। অষ্টম শতাব্দীর টেরাকোটা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গুপ্তধনের এক অমূল্য সন্ধান পাওয়া গেছে পিলাকে।
কী কী খাবেন
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে পছন্দের ডিশগুলি হচ্ছে মুইয়া আওয়ান্ড্রু, মুইয়া বাই ওয়াহান আর গুডক। মূলত ভাত, শূকর মাংস আর কচি বাঁশ এখানকার কুইজিনের প্রধান উপকরণ। চাইনিজ খাবারও এখানে বেশ জনপ্রিয়।
কখন যাবেন
ত্রিপুরার উদয়পুর যাওয়ার সবথেকে ভাল সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে মে মাসের মধ্যে। ভাল করে ঘুরে দেখবার জন্যে এই সময়ের আবহাওয়াই এখানে সবথেকে ভাল।
কীভাবে যাবেন
উদয়পুর, ত্রিপুরার তৃতীয় বৃহত্তম শহর, যার ফলে সড়ক বা রেলপথে আগরতলা থেকে সহজেই এখানে চলে আসা যায়। বিমানপথে নামতে পারেন আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম এয়ারপোর্টে।
উদয়পুরের মধ্যে যাতায়াত
শহরের মধ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যাওয়ার জন্যে রিকশা বা অটো করতে পারেন, বেশ কমদামে যাতায়াত করতে পারবেন। তা ছাড়া লোকাল বাস বা ভাড়া করা গাড়িও চড়তে পারেন।
কোথায় থাকবেন
যদি বাজেট ট্র্যাভেলার হন, তাহলে গুণাবতী যাত্রী নিবাসে রাত কাটাতে পারেন, এক দিনের ঘর ভাড়া ৯০০ টাকা। আর যদি একটু লাক্সারি দরকার হয়, তাহলে চলে আসতে পারেন দ্য ইম্পেরিয়াল হোটেলে। এখানে ঘরের জন্যে দিন প্রতি দিতে হবে ২০০০ টাকা।