করোনা আবহে প্রায় কেটে গেল একটি গোটা বছর। আর এই এক বছরে আমরা হয়তো অনেকেই আটকে পড়েছি চার দেওয়ালের গণ্ডিতে, ওয়ার্ক ফ্রম হোমের চক্করে। কিন্তু ভাবুন তো, কী রকম হতো, যদি সকালে উঠে কফির কাপ হাতে ওয়ার্কস্টেশনের সামনে বসে জানলাটা খুলে দিলেই দেখতে পেতেন অনতিদূরে শ্বেতশুভ্র হিমালয় বা নীচ দিয়ে ভেসে যাচ্ছে নাম না জানা কোনও অচেনা পাহাড়ি নদী। গরমের জাঁতাকলে আটকে না পড়ে তাই চলুন বেরিয়ে আসি দূরে কোথাও থেকে, তড়িঘড়ি না করে থেকে আসুন কোনও নতুন ডেস্টিনেশন। ভ্যাকেশন আর ওয়ার্ক ফ্রম মিলে মিশে হয়ে উঠুক জীবনকে দিক নতুন ডাক।
ওয়ার্কেশনের সুবিধা
১) নিজের বাড়িতে এক জায়গায় আটকে না থেকে, স্বাদবদল হোক ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে। আর থাকুক শুধু আপনার ল্যাপটপ। নতুনভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাওয়ার এই সেরা উপায়।
২) আর করতে হবে না লং উইকেন্ডের অপেক্ষা। তিন দিনের তাড়াহুড়ো করে করা ট্রিপের বদলে, ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিশ্চিন্তে মাসখানেক কাজ করতে পারেন নির্জন কোনও সুন্দর জায়গা থেকে। কোনও জায়গা অনুভব করার, জানার, চেনার, এর থেকে ভাল উপায় আর কোথায় পাবেন।
৩) পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতবর্ষের নানান হোমস্টে কিন্তু করোনা কালের পর পর্যটকদের থাকার সুব্যবস্থা করার জন্যে নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই লং-স্টে করলে আপনি পাবেন থাকার ভাড়ার উপর বেশ আকর্ষণীয় ছাড়। নেই ওয়াই ফাই বা ইন্টারনেটের কোনও অভাব। দৈনন্দিন খাওয়া দাওয়া, রান্না বান্না, কাপড় কাচার চিন্তাও তাই চাইলে নামিয়ে দিতে পারেন নিজের ঘাড় থেকে।
৪) যতদিন না অফিসের চেনা ছকে ফিরে যেতে হচ্ছে, নতুন নতুন জায়গা ঘোরার জন্যে এই পদ্ধতি সবথেকে ভাল। ভাবুন, নিতে হচ্ছে না কোনও অতিরিক্ত ছুটি। কিন্তু চাইলেই আপনার অফিসস্পেস বদলে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে নান্দনিক কোনও অনির্বচনীয় সুন্দর জায়গা।
তাহলে আর অপেক্ষা কীসের - দেখে নিন ওয়ার্কেশনের জন্যে শ্রেষ্ঠ ডেস্টিনেশনগুলি কোথায় কোথায়
দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ
পাহাড়ের রানি নামে পরিচিত দার্জিলিং যে প্রতি পর্যটকদের ড্রিম ডেস্টিনেশন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চা - বাগান, টয় ট্রেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কেভেন্টার্স - সব মিলিয়ে রোমাঞ্চকর আর প্রাণ জুড়িয়ে দেওয়া একটা ব্যাপার। সমস্ত রকম আধুনিক সুযোগ সুবিধাও আপনি পেয়ে যাবেন এখানে, তাই হাতের কাছে ওয়ার্কেশন করার অন্যতম জায়গা এখানেই।
যখন কাজ থাকবে না, কী কী করতে পারবেন : ঘুরে আসুন টাইগার হিলের সানরাইস দেখতে, ম্যালে দেখুন শেষ বিকেলের সূর্যোদয়, খেয়ে দেখুন কুঙ্গা, কেভেন্টার্স, সোনমস কিচেনের অসামান্য খাবার।
পশ্চিম সিকিম
পশ্চিমবঙ্গের থেকে একটু উত্তরে অবস্থিত সিকিম রাজ্যের পশ্চিম দিকের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটগুলি কিন্তু ওয়ার্কেশন করার পক্ষে একেবারে আদর্শ। পেলিং, রিনছেনপঙ, কালুক, মারতাম, ইউকসম, দারাপ ইত্যাদি বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামের বিভিন্ন হোটেল, রিসর্ট, গেস্ট হাউসে আপনি অনেকদিন ধরে থেকে কাজ করতে পারবেন। স্বাদবদলের জন্যে উইকেন্ডে ঘুরে আসতে পারবেন নর্থ সিকিম বা গ্যাংটকের মতন ডেস্টিনেশন থেকেও।
যখন কাজ থাকবে না, কী কী করবেন : ছোট ছোট ট্রেকে ঘুরে আসুন আপনার পাশের বিভিন্ন সানরাইজ বা সানসেট পয়েন্ট থেকে। খান সিকিমের অর্গানিক ফসল দিয়ে তৈরি খাঁটি খাবার। গাড়ি ভাড়া করে ঘুরেও আসতে পারেন গোটা সিকিমের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পট থেকে।
শিলং, মেঘালয়
মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে আছে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে, শিলং পরিচিত স্কটল্যান্ড অফ দি ইস্ট নামে। ঘন সবুজ বন জঙ্গলে পরিবেষ্টিত বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির রূপ দেখতে চাইলে ওয়ার্কেশনের পাট শুরু হোক শিলং থেকেই। পুলিশ বাজার চত্বরে পেয়ে যাবেন নানান বাজেটের হোটেল, যেখানে আপনি লং টার্ম স্টে করতে পারবেন সহজেই।
যখন কাজ থাকবে না, কী কী করবেন : ঘুরে আসুন শিলংয়ের অগুনতি জলপ্রপাতগুলি দেখতে, দেখে আসুন শিলংয়ের বিখ্যাত রুট ব্রিজগুলি, ঘুরে আসুন ডন বস্কো মিউজিয়াম আর উমিয়াম লেক থেকে। খেয়ে দেখুন খাসি, নর্থ ইস্ট আর চাইনিজ কুইজিনের সেরা সম্ভার।
ডুয়ার্স, পশ্চিমবঙ্গ
দার্জিলিং কালিম্পংয়ের পাহাড় বাদে উত্তর পশ্চিমবঙ্গের আর এক আকর্ষণ হল জলপাইগুড়ি ডুয়ার্সের বনাঞ্চলের নানান ট্যুরিস্ট স্পট। ওয়াইল্ডলাইফ ট্যুরিজমের অন্যতম সেরা জায়গা ডুয়ার্সের নানান স্পট। পক্ষী বা পশুপ্রেমীদের জন্য বন্য আদিম পরিবেশের মধ্যে বসবাস করে কাজ করতে পারার সুযোগ পাওয়া বেশ সৌভাগ্যের ব্যাপার।
যখন কাজ থাকবে না, কী কী করবেন : অবসর সময়ে করতে পারেন এখানকার নানান ওয়াইল্ড লাইফ সাফারী, বন্য প্রাণীদের নিজস্ব বাসস্থানে দেখার এ এক অনন্য সুযোগ। বার্ড ওয়াচিং করার জন্যেও এক এক আদর্শ সুযোগ। ঘুরে আসতে পারেন তিস্তা, জলঢাকা নদীর পাড় থেকে বা জলদাপাড়া অভয়ারণ্য থেকেও।
মন্দারমণি, পশ্চিমবঙ্গ
আর যদি আপনার মন পাহাড় পর্বতের বদলে চায় ফেনিল সমুদ্রের আশ্বাস? তাহলে ল্যাপটপ সঙ্গে করে চলে যেতে পারেন সরাসরি মন্দারমণি। একের পর এক নানা বাজেটের হোটেলে করে নিতে পারেন লং স্টের আয়োজন, আর প্রতিদিন বিকেল পড়লেই আপনার সঙ্গী একেবারে বঙ্গোপসাগর। সমুদ্রের মিঠে হওয়া গায়ে লাগিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বালুচর বেয়ে বহুদূর থেকে।
যখন কাজ থাকবে না, কী কী করবেন : ঘুরে আসতে পারেন কাছাকাছির অন্যান্য বিচগুলো থেকে, হাতের কাছেই পাবেন দীঘা, শংকরপুর, তাজপুর। খেতে পারেন টাটকা চিংড়ি, স্কুইড, কাঁকড়া এবং নানা রকম সি ফুড। আর ইচ্ছে করলেই টুক করে হয়ে যাবে এক পশলা সমুদ্রস্নান।