কি, ব্লগের শিরোনাম দেখে কিছুটা আশ্চর্য হচ্ছেন? বসন্তের পূর্বাভাসে ভারতের প্রায় সর্বত্রই মানুষ অপেক্ষায় থাকেন হোলির খেলার উৎসবে মেতে ওঠার জন্য। ভারতে হোলি খেলার ইতিহাসটা রাধা কৃষ্ণের প্রেমকে কেন্দ্র করে শুরু হলেও, হোলি শুধুমাত্র প্রেমকেন্দ্রিক নয় । হিন্দুশাস্ত্র মতে, হোলি খেলার অর্থ হলো শুভ শক্তির বিকাশ। এই হোলির দিনটাকে বিশেষভাবে পালন করার জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে হোলি কেন্দ্রিক নানান প্রথা রয়েছে । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় -মথুরার বর্ষানা শহরের লাঠমার হোলি, মহারাষ্ট্রের মাটকি ফোড়, বৃন্দাবনের বিধবাদের হোলি খেলা, শিখ সম্প্রদায়ের হোলা মহাল্লা, এবং উত্তরপ্রদেশের রীতি রয়েছে মহিলারা তাদের 'শ্রী রাধে বা শ্রী কৃষ্ণ ' মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে স্বামীদের লাঠির সাহায্যে আঘাত করেন ইত্যাদি।
সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে যখন বিভিন্ন রীতিনীতির মাধ্যমে হোলি উৎসব পালন করা হয়,তখন ভারতের কিছু অংশ এই হোলি খেলা থেকে বিরত থাকেন ।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ভারতের আপামর মানুষের কাছে এই রঙের খেলা শুভ হিসেবে মান্যতা পায়, সেখানে ভারতের এই অঞ্চলগুলির কাছে রঙের খেলা অশুভ বলে মনে করা হয়। হোলি খেলা তাদের জীবনে অনেকটা অভিশাপের মতো, যা তাদের জীবনকে বেরঙিন করে তোলে। ভারতের এই অঞ্চলগুলির পবিত্র হোলি না খেলার কারণগুলি চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১.ঝাড়খণ্ডের দুর্গাপুর গ্রাম -
ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার দুর্গাপুর গ্রাম রঙের উৎসব থেকে নিজেদের বঞ্চিত রাখেন । কেন? স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস এই গ্রামের নির্মাণকার রাজা দূর্গাদেব তাঁর রাজত্ব চলাকালীন সমস্ত উৎসব বেশ আড়ম্বরের সাথে পালন করতেন । কিন্তু এক হোলির উৎসবের দিন কোনও অজানা কারণবশত রাজপুত্রের মৃত্যু হয় । শুধু তাই নয়, হোলির বিশেষ তিথিতে রাজা দূর্গাদেব শত্রুর আক্রমণে নিহত হন । এরপর স্বামী ও পুত্র শোকে রানী ও আত্মহত্যার পথ বেছে নেন । তাই গ্রামবাসীদের ধারণা, যে বছর তারা রঙের খেলায় মত্ত হয়েছে সেই বছরই খরা বা মহামারীর মতো দুর্ঘটনাগুলি তাদের জীবনে ফিরে ফিরে এসেছে ।এই ঘটনাগুলির পর গ্রামবাসীদের কাছে হোলির দিনটি অশুভই রয়ে গিয়েছে ।
২. উত্তরপ্রদেশের খাজুরি গ্রাম -
উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য যাকে ভারতের হোলিখেলার মূল পীঠস্থানের আখ্যা দেওয়া হয়, সেই উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি শহরের ডালমাউ অঞ্চলের খাজুরি গ্রামে হোলি খেলা নিষিদ্ধ । কারণ এই হোলির বিশেষ দিনেই, মোগল আক্রমণের ফলে খাজুরির রাজা মারা যান ।স্থানীয় মানুষের মতে রাজার রং খেলার সুযোগ নিয়েই বিনা যুদ্ধে রাজাকে পরাস্ত এবং হত্যা করেন মোঘল সেনারা । অত্যাচারী মুঘলরা শুধুমাত্র রাজাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা খাজুরির বিখ্যাত দুর্গটিকেও ধ্বংসাবশেষে পরিণত করেন ।
৩. রাজস্থানের চৌতিয়া জোশি সম্প্রদায় -
ভারতে হোলি খেলা মূলত হিন্দুদের প্রধান রীতি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু রাজস্থানের এই ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কাছে হোলি খেলা অভিশাপস্বরূপ । চৌতিয়া জোশি সম্প্রদায়ের মতানুসারে একসময় হোলির আগের দিন রাতে হোলিকা দহন উৎসবে এক শিশু আচমকাই আগুনে পড়ে যায় এবং তাকে বাঁচানোর জন্য তার মা ও অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দেন। মৃত্যুর পূর্বে আগুনে দগ্ধ সেই মহিলার আর্জি ছিল ভবিষ্যতে এই সম্প্রদায়ের কোনও মানুষ যেন হোলির উৎসব পালন না করেন । এই ঘটনার পর চৌতিয়া জোশি সম্প্রদায়ের মানুষজন রঙের খেলায় রঞ্জিত হওয়ার থেকে বিরত থাকেন ।
৪. উত্তরাখন্ডের কুইলি, কুরঝান এবং জাউনদালি গ্রাম -
উত্তরাখন্ডের রুদ্রপ্রয়াগ অঞ্চলে অবস্থিত এই গ্রামগুলি বিগত ১৫০ বছর যাবৎ হোলি খেলা থেকে নিজেদের দূরে রেখেছেন । এই হোলি না খেলার সম্ভবত কারণ হল এই গ্রামগুলির প্রধান দেবী ত্রিপুরা সুন্দরী শান্তিপ্রিয় দেবী হিসেবে পরিচিত । এই দেবীর কোলাহল এক্কেবারেই নাপসন্দ । গ্রামবাসীদের মতে যে বছর তারা সাড়ম্বরে হোলি খেলেছেন, সেই বছরেই একই সঙ্গে তিনটি গ্রামেই তারা কলেরা রোগের প্রকোপ লক্ষ্য করেছেন। আর তাই গ্রামবাসীরা নিজেদের স্বার্থে তাদের আরাধ্য দেবীকে তুষ্ট করতে হোলি খেলা থেকে বিরত থাকেন ।
ভারতের এই অঞ্চলগুলির হোলি না খেলার অজানা কাহিনিগুলি আপনাদের কেমন লাগল আমাদের লিখে জানাতে কিন্তু অবশ্যই ভুলবেন না ।