একটা জীবনে সম্পূর্ণ ভারতবর্ষ ভ্রমণ করা সত্যিই খুব কঠিন। এই দেশের বিশালত্বের কারণে সমগ্র দেশ অন্বেষণ করার কাজটা বেশ শ্রমসাধ্য এবং অনেকটা সময়েরও প্রয়োজন । তবে ভারত দর্শনের এই যাত্রাটি আপনার সারাজীবনের স্মরণীয় ট্রিপ হয়ে রয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
তাই ভ্রমণবিলাসী মানুষের ভারতের এই ২৬ টি স্থান ভ্রমণ করার সুযোগ মিস করাটা এক্কেবারেই উচিত হবে না ।
১. লাদাখে লেকের চাকচিক্য:
লাদাখে লেকের বৈচিত্রপূর্ণ শোভার প্রত্যক্ষদর্শী থাকাটা জীবনের একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে । বিশেষত দিনের শেষে সূর্যের ম্লান আলোয় উজ্জ্বল প্যাগং টস লেকের শোভার দৃশ্যটা কিন্তু অসাধারণ।
২. মানালির বরফে ঢাকা পর্বত:
ভারতের হিমাচল প্রদেশ অঞ্চলটি স্কি এবং শীতকালীন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসগুলির জন্য বিখ্যাত । এছাড়াও এখানকার বরফে আবৃত স্পিতি ভ্যালি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় ।
৩. কোদাইকানালের পাহাড়:
তামিলনাড়ুর দিণ্ডিগুল জেলার পালানি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কোদাইকানাল অঞ্চলটি মাশরুমের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও শান্ত খাড়াই পাহাড়কে কেন্দ্র করে ঘন জঙ্গল এবং বাগানের সমাহার পর্যটকদের মনে প্রশান্তি জাগায় ।
৪. পূর্বঘাট পর্বতমালার আরাকু ভ্যালি:
বিশাখাপত্তনম শহর থেকে ১২০ কিমি দূরে অবস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশের শৈল শহর আরাকু। পাহাড়বেষ্টিত এই স্থানটি কফি চাষের জন্য বিখ্যাত।যেহেতু এটি ভ্রমণকারীদের কাছে এখনও সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি, তাই আরাকু ভ্যালি ভ্রমণপ্রেমী পর্যটকদের কাছে বেশ রোমাঞ্চকর হয়ে উঠবে ।
৫. কাশ্মীর:
কাশ্মীরের সৌন্দর্য সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি । এই কাশ্মীরের 'ভুস্বর্গ' আখ্যাটি সত্যিই যথাযথ। আর জীবনে একবার এই স্বর্গে ভ্রমণ করা কোনও ভাবেই মিস করা যায় না ।
৬. লাক্ষাদ্বীপের দ্বীপপুঞ্জ:
ভারতের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল লাক্ষাদ্বীপ। এই দ্বীপের বিখ্যাত ওয়াটার স্পোর্টসগুলি হলো স্নোর্কেলিং এবং স্কুবা ডাইভিং।
৮. শিলং-এর জলপ্রপাত:
ভারতে সর্বাধিক বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা শিলং-এ রয়েছে জঙ্গলে ঘেরা পাহাড় এবং জলপ্রপাত। মেঘালয় রাজ্যের উত্তর পূর্বে অবস্থিত খাসি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত মওসিনরাম গ্রাম এখানকার সবচেয়ে সুন্দর স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়।
৯. থর মরুভূমির রাতের সৌন্দর্য:
আরাবল্লি পাহাড় এবং কচ্ছের রণের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত রাজস্থানের থর মরুভূমি। মরুভূমির কোলে শুয়ে হাজার তারার সাক্ষী থাকার অভিজ্ঞতা, আপনার ছুটির দিনকে মধুময় করে তুলতে পারে ।
১০. গোয়ার সমুদ্র সৈকত:
গোয়া রাজ্যটি শুধুমাত্র ভ্রমণ ছাড়াও সংস্কৃতি, সুস্বাদু খাদ্য, রসনা এবং সুসজ্জিত সমুদ্র সৈকতের জন্য বেশ সমৃদ্ধ ।
১১. সিকিমের ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স:
রঙিন ফুলে ভরা একটা চারণভূমির প্রত্যক্ষদর্শী থাকতে চাইলে পৌঁছে যেতে পারেন সিকিমে । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫৬৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ইয়ুমথাং ভ্যালি বা ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ।
১২. কন্যাকুমারী:
আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত কন্যাকুমারী থেকে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির উন্মাদনা এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা অভিজ্ঞতা আপনার জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।
১৩. কানহা ন্যাশনাল পার্কের বন্যজীবন দর্শন:
এই অভয়ারণ্যটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, ইন্ডিয়ান লেপার্ড এবং বন্য কুকুরদের বসবাসের জন্য আদৰ্শ স্থান হিসেবে পরিচিত। কানহা ন্যাশনাল পার্কটি প্রাণীকুল ছাড়াও লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদদের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। এই অভয়ারণ্যটি বাঁশ এবং শালের ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ।
১৪. ব্রহ্মপুত্র নদের সূর্যাস্ত:
ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের প্রধান নদী হল ব্রহ্মপুত্র । এই নদীটি তিব্বত থেকে উৎপত্তি লাভ করে হিমালয়ের গিরিখাত গুলির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে । সূর্যাস্তের সময় নদীর জলরাশির মধ্যে এক মোহনীয় বিচ্ছুরণের সৃষ্টি হয় । এই মহাজাগতিক দৃশ্যটি আপনাকেও মুগ্ধ করবে ।
১৫. সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য:
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত । তাই এই অঞ্চলটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের আখ্যায় ভূষিত । এছাড়াও এই সুন্দরবন সর্বাধিক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের প্রধান আস্তানা।
১৬. কেরালার ব্যাকওয়াটার:
কেরালা রাজ্যটি ব্যাকওয়াটারের জন্য বিখ্যাত । এখানে ন্যাশনাল জলপরিবহণ পরিষদ দ্বারা ব্যাকওয়াটার ক্রুজের ব্যাবস্থা আছে যার সাহায্যে এই রাজ্যের বেশ কিছু শহর পরিক্রমণ করা যায়।
১৭. ভুবনেশ্বরের মন্দির:
ওড়িশার রাজধানী শহর ভুবনেশ্বরে প্রায় ৬০০ ও বেশি মন্দির লক্ষ করা যায় । এছাড়াও ভুবনেশ্বর শহরটি 'কলিঙ্গ নগরী' হিসেবেও পরিচিত ।
১৮. দার্জিলিং-এর চা বাগান:
পূর্বভারতের হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দার্জিলিং। তবে পাহাড় ছাড়াও দার্জিলিং-এর মূল আকর্ষণ চা এবং চা বাগান । এছাড়াও দার্জিলিং কিছু অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস যেমন রাফটিং, ট্রেকিং, হাইকিং এর জন্য পর্যটকদের নজরবন্দি হয়েছে।
১৯. পশ্চিমঘাট পর্বতমালা:
পশ্চিমঘাট পর্বতমালা গুজরাট থেকে কন্যাকুমারী অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও সহ্যদ্রি অঞ্চলটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার প্রধান বায়োডাইভার্সিটি স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এখানে অনেক লুপ্তপ্রায় প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায় তাই এটিও ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের আখ্যা পেয়েছে ।
২০. উত্তর -পূর্ব অঞ্চলের অরণ্য:
ভারতের প্রায় ২৫% অঞ্চল জঙ্গলে পরিপূর্ণ আর বর্তমানে এই অরণ্য পরিমণ্ডিত অঞ্চলটি ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত । এখানে প্রায় ৫১ ধরণের অরণ্যের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পর্ণমোচী, সিক্ত চিরহরিৎ, আল্পইন, নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য দ্বারা শ্রেণিবিভাজন করা যায় ।
২১. আসামের মাজুলি দ্বীপ:
আসামের ব্রহ্মপুত্র নদীকে কেন্দ্র করে গঠিত দ্বীপ হল মাজুলি। এক কথায় এই দ্বীপের সৌন্দর্য বর্ণনা করা অসম্ভব । এই দ্বীপটি এখনও সেভাবে পর্যটকদের নজরাভুক্ত হতে পারেনি, তাই দ্বীপের সৌন্দর্য পরিলক্ষণের জন্য এই স্থানটি আদর্শ।
২২. কচ্ছের রণ:
এই লবনাক্ত অঞ্চলটি কচ্ছ উপসাগর থেকে পাকিস্তানের দক্ষিণের সিন্ধু নদীর মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় ১০,০০০ বর্গ মাইল অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গঠিত। এই রণ অঞ্চলটি ম্যানগ্রোভ এবং মরুভূমি অঞ্চলের উদ্ভিদের অন্যতম প্রধান বাসস্থান ।
২৩. মুন্নারের চা বাগান:
কেরালার অপর একটি সুন্দর পর্যটন স্থান হলো মুন্নার । এছাড়াও কেরালার এই অঞ্চল চা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে ও প্রসিদ্ধ ।
২৪. আগ্রার তাজমহল:
আগ্রার তাজমহল ছাড়া বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের ট্রিপটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় । ভালবাসার প্রতীক এই স্মৃতিসৌধটি দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনস্থান হিসেবে পরিচিত।
২৫. লাদাখের স্টক রেঞ্জ:
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০,১৮২ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত স্টক রেঞ্জ-এর স্টক কাঙড়ি পর্বতারোহি এবং পর্বতপ্রেমী মানুষের কাছে আকর্ষণীয় স্থান । পর্বতারোহিরা এভারেস্ট আরোহন করার আগে এখান থেকে অনুশীলনও করেন ।
২৬. মহারাষ্ট্রের লোনার সরোবর:
মহারাষ্ট্রের বুলদানা জেলার লোনার-এ অবস্থিত লোনার লেকটি লবনাক্ত জলের লেক হিসেবে পরিচিত। এই সরোবরটি মূলত উল্কার প্রভাব রক্ষার স্বার্থে নির্মাণ করা হয়েছে ।
তাহলে আর দেরী কেন? চটপট এই বছরে আপনার ভ্রমণের তালিকাটি তৈরি করে নিন।