বাংলা ও বাঙালি এই দু’টি শব্দ যখন জোড়শব্দ হয়ে দাঁড়ায় তখন এর সঙ্গে সমার্থক শব্দরূপে যুক্ত হয় বাঙালির প্রিয় দুর্গাপুজো। দেবীর বোধন থেকে বিসর্জন, বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন ভাবে এই পূজা সম্পন্ন করা হয়। দুর্গাপুজো নিয়ে নানারকমের ঐতিহাসিক কাহিনি বর্ণিত থাকলেও শরৎকালের রামচন্দ্রের সৃষ্ট এই পুজোকে আমরা ‘অকালবোধন’ রূপে চিহ্নিত করে থাকি। ষষ্ঠীতে আমন্ত্রণ ও অধিবাস পর্ব দিয়ে শুরু করে সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান, অষ্টমীতে কুমারীপুজো, সন্ধিপুজো এবং নবমীতে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে দশমীতে সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের প্রথা আজও চলে আসছে।
দুর্গাপুজো পালনের ক্ষেত্রে মহানগরী কলকাতা সকল পুজোপ্রেমিকের নয়নের মণি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত সময় এগোচ্ছে এই পুজো তত তার রঙের প্রকাশ ঘটাচ্ছে। এখনও কলকাতায় বেশ কিছু বনেদি বাড়ি রয়েছে যেখানে দুর্গাপুজো প্রায় ২০০ বছর কিংবা তার থেকেও বেশি পুরনো। আভিজাত্য অহংকারে, সাবেকিয়ানার গরিমায় এই সমস্ত বনেদি বাড়ির পুজোগুলি হয়ে উঠেছে প্রাচীন সভ্যতার এক একটি নিদর্শন। এই বাড়িগুলির অন্দরমহলের ঠাকুরদালান থেকে শুরু করে নাচঘর এবং দেওয়ান খানায় লুকিয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস।আর সেই ইতিহাস খুঁজতে এবং এই সমস্ত বাড়ির পুজোর নিয়ম-আচার জেনে নিতে আজ আমরা প্রবেশ করব কলকাতার জনপ্রিয় পাঁচটি বনেদি বাড়ির অন্দরমহলে।
শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো:
ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানা ভরপুর রাজা নবকৃষ্ণ দেব এই শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজদের জয় ঘোষিত হলে লর্ড ক্লাইভকে খুশি করতে রাজা নবকৃষ্ণ দেব এই দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। তবে এই বাড়িটির প্রথম মালিক ছিলেন শোভারাম বসাক। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে রাজা এই বাড়িতে কিনে নিজের মতো করে নাচঘর, দেওয়ানখানা, নৈশভোজখানা সাজিয়ে তোলেন। শোনা যায়, লর্ড ক্লাইভ হাতির পিঠে চেপে এই বাড়ির পুজো দেখতে আসতেন। শুধু ইংরেজরাই নন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রী রামকৃষ্ণ, বিদ্যাসাগর, গান্ধীজীর মত মানুষজনের যাতায়াত ছিল এই বাড়িতে। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের ৭রানী নিঃসন্তান থাকায় তিনি তাঁর দাদার ছেলে গোপীমোহনকে দত্তক নেন। পরবর্তীতে ১৭৮২ সালে রাজার সপ্তম স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয় রাজকৃষ্ণ দেব এবং এরপরই রাজার সম্পত্তি দু-ভাগ হয়ে যায়।
রাজবাড়ির পুজোর কিছু কথা:
• বহু পুরনো প্রথা মেনে আজও পুজো করা হয় সাবেকি একচালা মূর্তিতে।
• দেবীর বোধন কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে।
• রথের দিন হয় কাঠামো পুজো।
• পৌরাণিক ঘোটক আকৃতির সিংহ দেখতে পাওয়া যায়।
• রাজবাড়ির পুজোয় অন্নভোগ হয় না। শুধু মিষ্টি ভোগ উৎসর্গ করা হয়।
• নারকেল ও ক্ষীর দিয়ে এক রকমের মিষ্টি এই বাড়িতে তৈরি করা হয়, যার নাম আদা।
• প্রাচীনকাল থেকে ব্রিটিশদের মনোরঞ্জনের জন্য পুজোর ৩ দিন গভীর রাত পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা চলত, যা আজও বর্তমান।
• রাজা নবকৃষ্ণ দেবের আমলে বাঙালিদের জন্য যাত্রাপালা এবং তরজা, কবিগান-এর সুবন্দোবস্ত থাকলেও বর্তমানে তা লোপ পেয়েছে।
• এই রাজবাড়ির পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল ভোরের মঙ্গল আরতি এবং সন্ধ্যায় মাখন মিষ্টি ভোগ এবং দশমীতে কনকাঞ্জলি।
• কথিত আছে, নীলকন্ঠ পাখি নাকি কৈলাসে মহাদেবকে মায়ের রওনা বার্তা পৌঁছে দেয়, তাই আরামবাগ থেকে নীলকণ্ঠ পাখি এনে বিসর্জনের দিন এই শোভাবাজার রাজবাড়িতে ওড়ানোর প্রচলন ছিল। তবে বর্তমানে সোলার নীলকণ্ঠ পাখি তৈরি করে ওড়ানো হয়।
• এই বাড়ির শুধু প্রতিমা আগমন বা পুজোর সাবেকিয়ানা নয়, প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থাও বেশ অভূতপূর্ব ।
পথনির্দেশ:
শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিট ধরে মাত্র দুই মিনিটের পথ অতিক্রম করলে এই রাজবাড়িতে পৌঁছনো যায়।
চোরবাগান চ্যাটার্জ্জী বাড়ির দুর্গাপুজো:
কলকাতার বেশ কিছু বনেদি বাড়ির প্রাচীন দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এই বাড়িতে প্রবেশ করলেই খুঁজে পাবেন প্রতিটি থামের মধ্যে লুকিয়ে আছে এই বাড়ির ইতিহাস। বাড়ির প্রবীণদের কাছ থেকে এই বাড়ি দুর্গাপুজো সম্বন্ধে বেশকিছু তথ্য জানা যায়।
এই বাড়ির দুর্গাপুজো প্রচলনের পর প্রথমদিকে ঠাকুরদালানে মূর্তি তৈরি করা হত। কিন্তু তার বেশ কিছু বছর পর থেকে ঠাকুর কুমারটুলিতে তৈরি হয়।
• জন্মাষ্টমী দিন হয় কাঠামো পুজো।
• মহালয়া দিন হয় দেবী মায়ের চক্ষুদান।
• দ্বিতীয়ার দিন ঠাকুর দালানে বসানো হয়।
• পুজো করা হয় সেই প্রাচীন রীতি মেনেই।
• ঠাকুর তৈরি করা থেকে শুরু করে প্যান্ডেল এবং পুজোর আনুষঙ্গিক সমস্ত কাজ করানো হয় বংশ-পরম্পরা ক্রমিক।
• পূর্বে এই বাড়িতে দুর্গাপুজোর সময় নাটক অনুষ্ঠিত হত।
• এই বাড়ির পুজোর বিশেষ আকর্ষণ হল ভোগ নিবেদন।
• পূর্ব-পুরুষদের নির্দেশ অনুসারে উপনয়ন হওয়া বাড়ির ছেলে এবং ভাগ্নেরা মায়ের ভোগ রান্না করে থাকেন।
• ভাত, খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা, মাছ, পায়েস, মিষ্টি, চাটনি সমস্ত কিছুই মায়ের সামনে ভোগে দেওয়া হয়।
• বিশেষ করে সপ্তমীর দিন লাউ চিংড়ি, অষ্টমীর দিন শাকের ঘণ্ট, নবমীর দিন ভেটকি ঘণ্ট, চিংড়ি মাছের মালাইকারি নিবেদন করা হয়।
• আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে হল এই চ্যাটার্জ্জী বাড়ির পুজোতে তাদের নিজস্ব একটি গান দশমীর দিন গাওয়া হয় এবং সেই গানের সুরে সুরে মায়ের নিরঞ্জন ঘণ্টা বেজে ওঠে ।
• দ্বিতীয়ার দিন ঠাকুরদালানে মাকে প্রতিষ্ঠা করার পর তাঁকে অস্ত্র এবং সোনার গয়নায় সুসজ্জিত করে তোলা হয়।
• দুর্গা মায়ের সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রত্যেককে বেনারসি পরানোর নিয়ম এ বাড়িতে রয়েছে।
• তবে সেটি আগের থেকে কুমারটুলিতে দিয়ে আসা হয়।
• পুরাণ অনুযায়ী, ষষ্ঠীর দিন বেলতলায় মা দুর্গা বিশ্রাম নেন। তাই এই বাড়িতে একটি ছোট্ট বেলতলা তৈরি করা হয় এবং মাঝরাতে অলঙ্কার পরে সেই বেলতলা থেকে ঠাকুরকে বরণ করে নিয়ে আসা হয়। বাড়ির পুরুষেরা সেই সময় ঢাক বাজান। আর এই দৃশ্য দেখবার সাক্ষী একমাত্র এই চ্যাটার্জ্জী বাড়িতেই সম্ভব।
পথনির্দেশ:
চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ের রামমন্দির বাস স্ট্যান্ড থেকে এসপ্ল্যানেডের দিকে এগোলে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট। সেখান দিয়ে সামান্য হেঁটে গেলে ডান দিকে পরবে রামচন্দ্র ভবন। ১২০ নং মুক্তারাম বাবু স্ট্রীটের এই বাড়িতেই হয় চ্যাটার্জ্জী আদি বনেদি পুজো।
রানী রাসমণির বাড়ির দুর্গাপুজো
রাণীমার শ্বশুরমশাইয়ের আমলে পাঁচ খিলানের দুই দালান বিশিষ্ট আভিজাত্যের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা এই বাড়ির পুজোর বেশ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দাস-এর মৃত্যুর পর রানী রাসমণি এই পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনি সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই খুবই নিষ্ঠা সহযোগে এই পুজো সাড়ম্বরে পালন করতেন, যা বর্তমানেও তার কোনও ত্রুটি হয়নি। এই বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল-
• অন্যান্য প্রতিমার থেকে প্রতিমা আকারে বড় হয় এবং প্রতিমার চক্ষু যথেষ্ট বড় আকারে অঙ্কন করা হয়।
• মায়ের গায়ের রং শিউলি ফুলের বোঁটার রঙের।
• সুদূর বীরভূম থেকে শিল্পী এনে এই মূর্তি তৈরি করানো হয়।
• মায়ের দেহ অলংকৃত সোলার সাজ আসে বর্ধমান থেকে।
• চালচিত্রে চন্ডী ও পুরাণের বিভিন্ন কাহিনি এবং রামায়ণ কৃষ্ণলীলার বিশেষ বিশেষ দৃশ্য অঙ্কন করা হয়।
• কুমারীপুজো ও সিঁদুর খেলা এই বাড়ির পুজো অন্যতম আকর্ষণ।
• সাজ ও পুরানরীতি মেনে ঠাকুরদালানে মহিলারা প্রতিমার বাঁদিকে এবং পুরুষের ডান দিকে দাঁড়ান।
• রানী রাসমনির আমলে যাত্রা এবং কবিগান অনুষ্ঠিত হত। তখন সেইসময়ের বিখ্যাত কবিগান শিল্পী ভোলাময়রা এবং এন্টনি ফিরিঙ্গি এই আসরে আসতেন।
• প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখেরা এই বাড়ির ঠাকুর দর্শন এসেছেন বলে জানা যায়
• বাড়ির প্রবীনদের কাছ থেকে শোনা যায়, একবার এই বাড়িতে সখীবেশে চামড় দুলিয়ে একজন প্রতিমাকে বাতাস করছিলেন। রানীমার জামাতা মথুর মোহন তাঁকে চিনতে না পেরে তাঁর স্ত্রী জগদম্বাকে জিজ্ঞেস করে
• জানতে পারেন তিনি আর কেউ নন, তিনি ছিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব। যিনি প্রায়শই এই পুজোতে থাকতেন।
পথনির্দেশ:
মধ্য কলকাতার জানবাজারে ১৩ নম্বর রানী রাসমণি রোডে এই বাড়িটি অবস্থিত।
মিত্র পরিবারের দুর্গাপুজো:
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা আদিসুর কনৌজ থেকে পাঁচজন ব্রাহ্মণ ও পাঁচজন কায়স্থকে নিয়ে আসেন। সেই পাঁচ জনের মধ্যে একজন ছিলেন এই বংশের আদিপুরুষ, যাঁর নাম কালিদাস মিত্র। তাঁরই সপ্তদশ প্রজন্ম নরসিংহ মিত্র করগোবিন্দপুর থেকে এসে জঙ্গল কেটে ভবানীপুরে বসতি স্থাপন করেন। ১৮৯২ সালে এই পরিবারের এক সদস্য সুভাষচন্দ্র মিত্র ১৩ নম্বর পদ্মপুকুর রোডে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। তারপর তিনি এই দুর্গাপুজোর প্রথম প্রচলন করেন। পুজো সম্বন্ধে জানা যায়-
এই বাড়ির একজন সদস্য প্রথমে দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ পান এবং তারপর থেকেই এই পুজো শুরু হয়।
• পরবর্তীতে দেবী তাঁর কাছে স্বপ্নে গহনা চান।
• সেই সদস্য তাঁর একটা সাধ্যমত মায়ের হাতে একজোড়া
• সোনার বালা তৈরি করে দেন।
• দেবী খুশি হয়ে আবার স্বপ্নে বলেন তিনি এই দুই হাতের বালা পেয়ে সন্তুষ্ট।
• এরপর থেকে দেবীমুর্তির ১০টি হাত তৈরী করা হলেও আটটি হাত চুল দিয়ে ঢেকে রাখা হয় এবং যে দুটি হাতে বালা পড়ানো হয় সেই দুটি হাত উন্মুক্ত করা হয়।
• জানা যায়, পরিবারের রীতি অনুযায়ী কাঠামো কখনওই বিসর্জন দেওয়া হয় না।
• মায়ের বাহন সিংহের আকৃতি পৌরাণিক ঘোটকের মতো।
• কন্যারূপে দেবীকে পূজা করা হয়।
• ঠাকুরদালানে নবপত্রিকা স্নান করানো হয়।
• নবপত্রিকা স্নানের সময় বাড়ির মহিলারা তাকে কাপড় দিয়ে আবৃত করে রাখেন।
• সরস্বতী লক্ষ্মী দেবীর কোনও বাহন থাকে না।
• অতীতে প্রতিপদে দেবীর বোধন হয়ে থাকলেও, বর্তমানে পঞ্চমীতে দেবীর বোধন হয়।
• এই বাড়ির পুজোর বিশেষ আকর্ষণ হল অষ্টমীতে করা হয় কুমারী পুজো, নবমীতে সধবা পুজো এবং দশমীতে অনুষ্ঠিত হয় অপরাজিতা পুজো।
• সপ্তমী থেকে দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে পর্যন্ত মায়ের সামনে একটি ঘিয়ের বড় প্রদীপ জ্বালানো হয়।
• প্রদীপটি একটি পাত্রে জল দিয়ে বসানো হয় এবং সেই পাত্রটির জলে মায়ের পা এবং মুখের ছাপ দেখে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
• আগে এই বাড়িতে পুজোর সময় যাত্রাগান করতে অহীন্দ্র
• চৌধুরী, নরেশ মিত্র প্রমুখ ব্যক্তিবর্গরা আসতেন।
• সাবেকি ঘরানার এই বনেদি বাড়ির পুজোর আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় বিসর্জনের আগে গৃহকর্ত্রী তার মাথার চুল প্রতিমার পায়ে বেঁধে দেন। কারণ তাদের মতে আগামী বছরও যাতে দেবীমা এই গৃহে আসেন। সেই জন্য তাঁকে এই ভাবে বাধা হয়।
পথনির্দেশ:
বিডন স্ট্রীট দর্জি পাড়াতে এই মিত্র বাড়ি অবস্থিত।
দাঁ বাড়ির দুর্গাপুজো:
১৮৫৯ সালের নরসিংহচন্দ্র দাঁ এই দাঁ বাড়ির প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। নিয়ম, নিষ্ঠা উপাচার মেনে আজও অনবদ্য বাড়ির দুর্গাপুজো। শোনা যায়, প্রায় এক মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয় এই পুজোয়। দেবীর কনকাঞ্জলি প্রথা আজও বর্তমান। পুজোর কিছু নিয়ম আচার-
• দেবী বৈষ্ণব মতে কন্যারূপে পূজিত হন।
• তাই অন্নভোগের পরিবর্তে দেওয়া হয় বিভিন্ন মিষ্টান্নভোগ।
• লুচি, চাল, ফল নৈবেদ্য হিসাবে নিবেদন করা হয়।
• বাড়ির পুরুষ সদস্যরা পুজোর জোগাড় করেন।
• রথের দিন কাঠামো পুজো করা হয় এবং সেই কাঠামো দেবীর ডান পায়ে লাগানো থাকে।
• জন্মাষ্টমী দিন মায়ের বিগ্রহে মুখ স্থাপন করা হয়।
• বাড়ির ঠাকুরদালানেই ঠাকুর তৈরি করা হয়।
• প্রতিপদের প্রথম দিন থেকেই পুজো শুরু হয়।
• সেইদিন থেকে বাড়িতে নিরামিষ খাবার খাওয়া শুরু হয়।
• নবমীর দিন হোমের পরে বাড়িতে মাছ খাওয়া হয়।
• পূর্বে ফ্রান্স, জার্মানী থেকে মায়ের অলংকার আনা হত বলে জানা যায়।
• কথিত আছে, মর্তে এসে দেবী প্রথম শিবকৃষ্ণ দাঁ বাড়িতে সাজগোজ করতেন।
• দুর্গামা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ এবং অসুরের পোশাকে রয়েছে ভেলভেটের উপর সোনা ও রুপোর জরি দিয়ে কাজ করা শিল্পের সম্ভার, যা সত্যিই এই পুজোকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।
• জার্মানি থেকে নিয়ে আসা ৮ থেকে ১০ রকমের কলকা দিয়ে দেবীর চাল সাজানো হয়।
• এছাড়াও রয়েছে সুসজ্জিত এক রকমের ছাতা।
• ঠাকুর বরণের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। দাঁ বাড়িতে বাড়ির গৃহিনীরা বরণের সময় মাছ ভাত খেয়ে মুখে পান দিয়ে লাল পাড় সাদা শাড়ি শাঁখা সিঁদুর পরে মাকে বরণ করেন। বরণের সময় প্রত্যেকের মুখে পান থাকা আবশ্যক এবং মাছ না খেয়ে কোনভাবে ঠাকুর বরণ করা যায় না।
পথনির্দেশ:
উত্তর কলকাতা জোড়াসাঁকোর বিবেকানন্দ রোড ফ্লাইওভারের কাছে ১২এ শিবকৃষ্ণ দাঁ লেনে এই বাড়িটি অবস্থিত।
তাহলে এই বছর দুর্গাপুজোয় সমস্ত সর্তকতা বিধি মেনেই এই বনেদি বাড়িগুলির মধ্যে কোন একটি হতেই পারে আপনার অষ্টমীর সকালের অঞ্জলি দেওয়ার জায়গা। শুধু তাই নয়, ফেসবুক, ইনস্টা কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য বেশ কিছু পছন্দের ছবিও এসব বাড়িতে এসে আপনি তুলে রাখতে পারেন।