ভারতবর্ষের মধ্যে প্রসিদ্ধ ভৌতিক স্থান হল ভাণগড় ফোর্ট। আমরা সকলেই জানি অনেক অতিপ্রাকৃত বা সুপারন্যাচারাল ঘটনার সাক্ষী এই ফোর্ট । এই ফোর্টকে কেন্দ্র করে বহু ভৌতিক কাহিনির উল্লেখও পাওয়া যায়, আর তাই এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী তথা ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় ভ্রমণস্থান হিসেবেও পরিচিত ।
কিছু কিছু ভ্রমণকারীর কাছে এই ফোর্ট ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা বেশ রোমাঞ্চকর মনে হয়েছে আবার কিছু পর্যটকরা তেমন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হতে পেরে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন । তবে এই ফোর্ট-এর কাহিনিকে ঘিরে সকলের মনের মধ্যেই রহস্যের সঞ্চার ঘটে । তাই ভূতের অস্তিত্ব বিষয়ে বাস্তব যৌক্তিকতা ঠিক কতটা সেই প্রসঙ্গে জানার কৌতূহল থাকলে আপনিও একবার এই ফোর্ট থেকে ঘুরে আসতে পারেন ।
সত্যি সত্যিই কি ভাণগড় ফোর্ট ভৌতিক? সেই প্রসঙ্গে রইল কয়েকটি কাহিনি -
বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস এই ফোর্টটি সত্যিই ভৌতিক । এই ফোর্ট এমন কিছু ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে তা সত্যি রহস্যজনক । সূর্যাস্তের পর এই ফোর্টটিতে প্যারানরমাল কার্যকলাপ দেখে সাহসী পর্যটকরাও ভয় পেয়েছেন । আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াও রাতে এই ফোর্ট দর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ।
লৌকিক কাহিনি অনুসারে জানা যায়, একসময় মহারাজ মাধো সিং এই অঞ্চলে ফোর্ট নির্মাণ এবং শহরের উন্নতির জন্য গুরু বালু নাথ-এর অনুমতি চান, কারণ গুরু এই অঞ্চলেই ধ্যানস্থ থাকতেন । গুরু এই ফোর্ট নির্মাণের অনুমতি দিলেও সেটি ছিল শর্তসাপেক্ষ । এই শর্তটি হল, গুরুর গমন পথে কখনওই এই ফোর্ট এর ছায়া পড়বে না । নির্মাণ কার্য সম্পন্ন হওয়ার পর যদি কখনও গুরুর গমনপথে ছায়া পড়ে, তৎক্ষণাৎ ফোর্টটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে ।
রাজা এই শর্ত মেনে নিলেন এবং ফোর্ট নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হল। দুর্ভাগ্যবশত কিছুদিন পর গুরুর যাত্রাপথে ফোর্টের ছায়া পড়ায় ফোর্টটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং সম্পূর্ণ ভাণগড় অঞ্চল অভিশপ্ত হয়ে পড়ে । এমনকি ভবিষ্যতেও এই ফোর্ট-এর পুনঃগঠন করা সম্ভব হয়নি । আর অদ্ভুত ব্যাপার হল গুরু বালু নাথ-এর কবর আজও এই ধ্বংসস্তূপে খুঁজে পাওয়া যায়।
ভাণগড় ফোর্টের অপর একটি কিংবদন্তী কাহিনি -
এই কাহিনিটি রাজকুমারী রত্নাবতীকে কেন্দ্র করে প্রচলিত। এই রাজকুমারীর সৌন্দর্য সম্পর্কে রাজ্যবাসী এমনকি সীমান্তবাসীরাও জানতেন । তাঁর ১৮তম জন্মবার্ষিকীর পর বিবাহের জন্য বহু রাজ্য থেকে উপযুক্ত পাত্র এলেন রাজকুমারীকে দেখতে । এই পাত্রদের মধ্যে সিংহিয়া নামে এক জাদুকরও এসেছিলেন । তিনি নিজে জানতেন তিনি রাজকুমারীর উপযুক্ত নন, তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের জাদুকরী ক্ষমতার সাহায্যে রাজকুমারীকে বিবাহ করবেন ।
সৌভাগ্যক্রমে জাদুকর রাজকন্যা রত্নাবতীর দাসীকে দেখেন বাজারে তেল কিনতে। তিনি সেই সুযোগে কালো জাদুর সাহায্যে তেলটি মন্ত্রমুগ্ধ করে দেন । তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এই তেল রাজকুমারীর শরীরে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জাদুকরের কাছে নিজেকে অর্পণ করবেন । কিন্তু রাজকুমারী, জাদুকরের এই উদ্দেশ্যটা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সম্পূর্ণ তেল মাটিতে ফেলে দেন । তৎক্ষণাৎ সম্পূর্ণ মেঝেটি পাথরে পরিণত হয় এবং পাথরটা গড়িয়ে জাদুকরের কাছে পৌঁছয়। রাজকুমারী সমস্ত ঘটনা জানার পর জাদুকরকে প্রহৃত করেন।
জাদুকরের মনে এই ঘটনাকে ঘিরে একটা ক্ষোভ জন্ম নেয়, এবং তিনি মৃত্যুর আগে ভাণগড় শহরকে অভিশাপ দেন। আর এই অভিশাপের কারণেই এখানে কারওর জন্মের শুভ সংবাদ পাওয়া যায় না । পরবর্তী কালে, আজবগড় এবং ভাণগড় এর যুদ্ধে রাজকন্যা রত্নাবতীর মৃত্যু হয়। স্থানীয় মানুষদের বিশ্বাস, ভাণগড়-এর অভিশাপ মুক্তির আশায় এই রাজকন্যা আবারও ফিরে এসেছেন অন্য কোনও রূপধারণ করে।
ভাণগড় ফোর্ট-এর অদ্ভুত ক্রিয়াকলাপ যে কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্যকে নস্যাৎ করে দেয় । এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ভাণগড় ভূতেদের প্রধান আস্তানা । এখানকার মানুষরা প্রায়ই কোনও মহিলার কান্নার শব্দ, চুড়ি ভাঙার শব্দ কিংবা অদ্ভুত গানবাজনার শব্দ শুনতে পান। এছাড়াও, মাঝে মাঝে এই ফোর্ট থেকে সুগন্ধি সৌরভ অনুভব করা যায় এবং এই সময় অবর্ণনীয় আলোকে কিছু ছায়ামূর্তিও দেখতে পাওয়া যায়। কিছু মানুষ এই ছায়া অনুসরণ করার ফলে আচমকা থাপ্পড়ও খেয়েছেন । স্থানীয় বিশ্বাস অনুসারে, যে মানুষ সূর্যাস্তের পর এই ফোর্ট দর্শন করতে গিয়েছেন, সে আর ফেরেনি । তবে ভাণগড় ফোর্ট সত্যিই ভৌতিক স্থান কি না এটা এখনও জানা সম্ভব হয়নি ।
কীভাবে যাবেন:
সড়কপথে
ভাণগড় ফোর্ট বা ভাণগড় কি কিলা দিল্লি থেকে ৩০০কিমি দূরে অবস্থিত। সকাল সকাল বেড়িয়ে ফোর্ট দর্শন করে বিকেলের আগে ফিরে আসাই ভাল। এছাড়াও সারীক্ষা /জয়পুর /আলোয়ার/ নীমরানা অঞ্চল থেকে গাড়ি ভাড়া করেও পৌঁছে যেতে পারেন গন্তব্যে। সম্পূর্ণ যাত্রার জন্য খরচ পড়বে ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা।
ট্রেনে
নিউ দিল্লি থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেস চেপে পৌঁছে যেতে পারেন আলোয়ার। স্টেশন থেকে ট্যাক্সি নিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন ভাণগড় কি কিলা । ভাণগড় অঞ্চলে কোনও হোটেল এবং রেস্তোরাঁ নেই, রাত্রিবাসের জন্য এই অঞ্চল থেকে দূরের কোনও হোটেলে থাকতে হবে । তাই এই ফোর্ট ভ্রমণের সময় খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভাল। এছাড়াও যাত্রাপথে বেশ অনেকগুলি ধাবা রয়েছে ।
ভাণগড় ফোর্ট দর্শনের সময়সীমা:
ভাণগড় ফোর্ট প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত এবং রাত ১১.১৫ থেকে ভোর ৩টে পর্যন্ত দর্শণার্থীদের জন্য খোলা থাকে ।
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময়:
ভাণগড় ফোর্ট ভ্রমণের জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হল শীতকালীন সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত ।
পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ভ্রমণস্থান:
১. সারীক্ষা ন্যাশনাল পার্ক
ভাণগড় ফোর্ট থেকে মাত্র ৪০কিমি দূরে অবস্থিত এই ন্যাশনাল পার্কটি বন্যপ্রাণপ্রেমী মানুষদের জন্য আদর্শ । সবুজে মোড়া গভীর অরণ্য পরিবেষ্টিত এই অঞ্চলটিতে আপনি শিয়াল, ময়ূর, বাঁদর দেখতে পাবেন। এই ন্যাশনাল পার্কটি রাজস্থানের বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। তাই ভাগ্য প্রসন্ন হলে দক্ষিণরায়েরও দেখা পেতে পারেন ।
২. জয়পুর
রাজস্থান রাজ্যের রাজধানী শহর জয়পুর ভাণগড় থেকে ৮৫ কিমি অদূরে অবস্থিত । সৌন্দর্যের কারণে সমস্ত ভারতবাসী এবং বিদেশী পর্যটকদের কাছেও এই শহরটি বেশ জনপ্রিয় । বিভিন্ন ফোর্ট, প্যালেস ছাড়াও খাদ্য এবং শপিং-এর জন্য জয়পুর বিশেষভাবে বিখ্যাত ।
রাজস্থান অঞ্চলের চা প্রেমী মানুষদের কাছে বিখ্যাত স্থান হল তাপরী । এখানে চা সহযোগে কিছু স্ন্যাক্সস ট্রাই করে দেখতে পারেন ।
রাজস্থান রাজ্যের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী হল আলোয়ার । তৎকালীন রাজাদের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় এখানকার ফোর্ট এবং প্যালেসগুলিতে । এই প্রাচীন নগরীটি এখনও তেমনভাবে পর্যটকদের নজরবন্দি হতে পারেনি। ভাণগড় থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৯০কিমি ।
• প্রেম পবিত্র ভোজনলয় ( আলোয়ার )
এই রেস্তোরাঁটিতে সম্পূর্ণরূপে নিরামিষ খাদ্য পরিবেশন করা হলেও প্রতিটি খাদ্য বেশ সুস্বাদু এবং খাবারের খরচও বেশ কম ।
পর্যটকদের কাছে নীমরানা একটি বিখ্যাত স্থান হিসেবে পরিচিত। এই স্থানটির খ্যাতির মূল কারণ হল নীমরানা ফোর্ট প্যালেস, যা রাজস্থানের অন্যতম প্রাচীন লাক্সরি হোটেল। এছাড়াও এটি ভারতবর্ষের অন্যতম রোমাঞ্চকর ট্যুর। বর্তমানে এই অঞ্চলটি শিল্প সংক্রান্ত কার্যক্রমের প্রাণকেন্দ্র হলেও প্রাচীন ইতিহাসকে যথাযথরূপে সংরক্ষিত রেখেছে । ভাণগড় থেকে নীমরানার দূরত্ব ১৫০ কিমি ।
ভারতবর্ষের রাজপুত রাজত্ব পরিদর্শন এবং ভৌতিক রহস্যের কিনারা করতে এই ভ্রমণের স্বাদটা জীবনে একবার আস্বাদন করতে আপনি তৈরি তো ?
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)