
ভুটান দেশের সঙ্গে একটি শব্দ একাত্ম হয়ে আছে - সাংরী লা, যার অর্থ হল পরম সুখ, প্রসন্নতা এবং শান্তিরময় রাজ্য । এই খুশির রাজ্যে আপনার সুখের মাপকাঠির ভিত্তিতে সম্পদকে মাপা হয় । গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস অনুযায়ী ভুটান বিশ্বের দরবারে সবচেয়ে সুখি দেশ হিসেবে পরিচিত। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যিটা হল এই দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে সুখী এবং উৎফুল্ল থাকা ।
পাহাড়বেষ্টিত এই দেশেটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সাক্ষীবহ । ভুটানের মানুষরা যেমন দেশের পর্বতশৃঙ্গকে ভালবাসে, তাদের জং-এর প্রশংসা করেন, ঠিক তেমনই লক্ষশকে শ্রদ্ধা করেন। ভুটানীয় খাবারও খাদ্যরসিক মানুষকে এক অনাবিল তৃপ্তি এনে দেয় । হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই দেশটি রীতিনীতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন । ভুটানের ল্যান্ডস্কেপের বৈচিত্র অনেকটা ক্যালাইডোস্কোপ-এর মতো; সেরেনি সামদ্রুপ (ভুটানের প্রাচীনতম শহর ) থেকে বিস্ময়কর বুমথাং হয়ে ফব্জিকা, কিংবা থিম্পু শহর হয়ে প্রশান্ত পারো থেকে হা (মানুষের সারল্য এবং নম্রতা সত্যিই প্রশংসনীয়) পর্যন্ত বিস্তৃত।
ভুটানের সংস্কৃতির মূল আধার হলেন বুদ্ধ। এই দেশের উৎফুল্লতার রহস্য সন্ধান করতে এবং সম্পূর্ণ দেশটাকে অন্বেষণ করতে নিঃসন্দেহে আপনিও যোগদান করতে পারেন।
ভ্রমণ সম্পর্কে বিশদে জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
দর্শনীয় স্থান -
১. সামদ্রুপ ইয়ংকার
২. ট্রাশিগ্যাং
৩. মঙ্গার
৪. বুমথাং
৫. ফব্জিকা
৬.পুনাখা
৭. চিম্মিলাখাং
৮. থিম্পু
৯. পারো
১০. হা
১১. ফুয়েটশোলিং
গুয়াহাটি -
বিমানবন্দর পৌঁছে গাড়িতে চেপে ভুটানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হবে দুপুর ১২টায়।
সামদ্রুপ জঙ্গখার -
সামদ্রুপ জঙ্গখার স্থানটি ভুটানের পূর্বে অবস্থিত এবং এটি আসামের বর্ডার-এরও একটি অংশ । এছাড়াও এটি পূর্ব ভুটানের বৃহত্তম শহর হিসেবে পরিচিত। জঙ্গখার শহরটি আজও ভুটানের প্রাচীনত্বের সাক্ষীবাহী । বর্ডার অঞ্চলটি বিভিন্ন বিপণি এবং হকারদের কোলাহলে মুখরিত। জঙ্গখার অঞ্চলের জং স্থানটির নিজস্ব ঐতিহ্যমণ্ডিত গুরুত্ব রয়েছে ।
ট্রাশিগ্যাং-

ট্রাশিগ্যাং অঞ্চলটি দৃশ্যময় শৈলশহর হিসেবে পরিচিত । একসময় বণিকরা তিব্বতীয় জিনিসপত্র আমদানি রপ্তানির সময় এই পথটিকে বেছে নিয়েছিলেন । এটি জায়গাটিকে পূর্ব এবং পশ্চিম ভুটানের যোগসূত্র বলা যায় । আর এখান থেকেই সামদ্রুপ হয়ে সরাসরি আসাম তথা ভারতে পৌঁছে যাওয়া যায় । মেরাক এবং সাকতেং অঞ্চলের যাযাবরবৃত্ত মানুষের কাছে ট্রাশিগ্যাং প্রধান বাজার হিসেবে পরিচিত । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই যাযাবর মানুষদের পরিধান ভুটানের ঘো এবং কিরার থেকে এক্কেবারে আলাদা ।
মঙ্গার -

মঙ্গার যাত্রার দৃশ্যটা বেশ রোমহর্ষক - খাড়াই পাহাড়কে কেন্দ্র করে রয়েছে গভীর জঙ্গল এবং সবুজ চারণভূমি । সুযোগ থাকলে আপনি দেখা পেতে পারেন অগণিত রডোডেনড্রন ফুলের এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ আরোহনহীন পর্বতমালা গ্যাংখার পুন্সাম (৭৫৪১ মিটার ) । এই স্থানটি ভুটানের তাঁত শিল্প, ফেব্রিক প্রভৃতি শিল্পকলার জন্য বিখ্যাত ।
বুমথাং-


বুমথাং ভ্যালি অঞ্চলের চারটি প্রধান ভ্যালি হল - উরা, চুমিই, ট্যাং এবং চক্ষর । বিস্তীর্ণ চক্ষর ভ্যালি দর্শনের জন্য প্রতিবছর বহু পর্যটকের আগমন ঘটে। বুমথাং নামকরণের সম্ভাব্য দুই কারণ রয়েছে। প্রথমত, বুম্পা নামকরণের প্রধান কারণ হলো - এই ভ্যালির দৃশ্যটা অনেকটা পবিত্র জলাধারে ভাসা জাহাজের আকারে গঠিত এবং দ্বিতীয়টা হল সুন্দরী কন্যাদের ভ্যালি, অর্থাৎ -ভুটানীয় ভাষায় বুম শব্দের অর্থ হল কন্যা এবং থাং শব্দের অর্থ হল সমান ভুস্থল । এই উর্বর ভ্যালিতে আটা, চাল এবং আলু চাষ করা হয় । এছাড়াও, আর এখানে সর্বত্রই আপেল এবং অর্কিড চাষ করা হয় ।
ফব্জিকা ভ্যালি -


ফব্জিকা অনেকটা বাটির আকৃতির এই ভ্যালিটি ব্ল্যাক মাউন্টেন-এর পশ্চিমাংশে অবস্থিত । এখান থেকে জিগমা সিংয়ে ওয়াঙচুক ন্যাশনাল পার্কও ভ্রমণ করা যায় । যেহেতু শীতে এখানে ব্ল্যাক নেকড ক্রেন দেখা যায়, তাই এটি ভুটানের প্রধান বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত । ক্রেন ছাড়াও মুন্টজাক্স ( একধরণের হরিণ ), সম্বরাস, সেরউস, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার্সও সমস্ত পার্বত্য অঞ্চল জুড়ে দেখা পাওয়া যায় । নাকেই ছু নদী এই ভ্যালি থেকে উৎপত্তি লাভ করে পুনক তসঙ্গ ছু অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছে । শীতকালে সম্পূর্ণ অঞ্চলটা তুষারাবৃত্ত থাকে। তাই এখানকার প্রায় ৪৭০০ অধিবাসী শীতের সময় ওয়াদু ফোদ্রাঙ্গ-এ স্থানান্তরিত হয়ে যান । এখানকার অধিবাসীদের স্থানীয় ভাষায় বলা হয় গ্যাংটেপস এবং তাঁরা যে ভাষায় কথা বলেন তা হল হেনকে উপভাষা ।
পুনাখা জং -


এই স্থানটির সঙ্গে ভুটানের প্রাচীন ইতিহাস জড়িয়ে আছে । ১৬৩৭ থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত সময়ে এই স্থানটি এই দেশের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল এবং ১৯৫৩ সালের প্রথম জাতীয় সভা এখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল । ভুটানে এই দ্বিতীয় প্রাচীন এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম জং-এর সুন্দর কাঠামো পরিলক্ষিত করা যায় । এই ভ্যালির প্রধান নদীগুলি হল ফো ছু এবং মো ছু । সূর্যের আলোকে খরস্রোতা নদীর চাকচিক্য দেখতে কিন্তু বেশ লাগে। এছাড়াও এখানে কিছু কাঠামোগত সৌন্দর্য্য রয়েছে যেমন জহাব্দরুঙ-নাও নামজ্ঞাল যা ভুটানের পবিত্র ধ্বংসাববেশ হিসেবে পরিচিত ।
চিমি হ্যাখাং -

লোবেসা এর নিকটবর্তী একটি বৌদ্ধ মনেস্ট্রি হলো চিমি হ্যাখাং। চারিদিকে পাহাড় বেষ্ঠিত এই মনেস্ট্রিটি ১৪৯৯ সালে ১৪ তম ড্রাখপা হয়ে রার্চ নাও চলেজ্ঞেল নির্মাণ করেন । পরবর্তী কালে গুরু ড্রাখপা কুনলেই ১৪৫৫- ১৫২৯ সালে এখানে একটি চরতেন নির্মাণ করেন ।
চরতেন-এর সমস্ত দেওয়াল জুড়ে ফাল্লুস চিহ্ন অঙ্কন করা রয়েছে । কাঠের তৈরী এই পবিত্র ফাল্লুস চিহ্ন কুনলেই তিব্বত থেকে এনেছিলেন । শুধুমাত্র এই ফাল্লুস চিহ্ন দর্শন করে আশীর্বাদ প্রাপ্তির জন্য দূর দূরান্ত থেকে তীর্থযাত্রীরা ছুটে আসেন, এমনকি মহিলারা সন্তান প্রাপ্তির জন্য এখানে প্রার্থনাও করেন । প্রায় ১০ ইঞ্চি (২৫ সেমি ) এই কাঠ নির্মিত ফাল্লুস এর আকার পুরুষাঙ্গের মতো । স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই ফাল্লুস যা কিছু অশুভ এবং বিদ্বেষ পরায়ণতাকে দূর করে ।
থিম্পু -

আধুনিকতার পরিমন্ডলে গঠিত থিম্পু শহর । বড়ো বড়ো রেস্তোরাঁ থেকে নাইট ক্লাব কিংবা শপিং মল এখানে অবস্থিত ।ভুটানের একমাত্র থিম্পু শহরে ATM উপলব্ধ আছে এবং মুদ্রা বিনিময়েরও যথেষ্ট সুবিধা আছে ।মজার ব্যাপার হলো থিম্পু বিশ্বের একমাত্র রাজধানী শহর যেখানে একটাও ট্রাফিক লাইট নেই । এখানে পরিবহন ব্যবস্থা পুলিশ দ্বারাই পরিচালিত হয় । এই শহরের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার একটা অসাধারণ মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায় ।
হা -


পারো, ছুঁক্ষা এবং সামৎসে জেলার মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় ১৭০৬ স্কোয়ার ফিট অঞ্চল জুড়ে অসাধারণ দৃশ্যপটে গঠিত পার্বত্য অঞ্চল হলো হা ভ্যালি ।
পারো -

টাইগার নেস্ট -


পারো ভ্যালির সমতল অঞ্চল থেকে ৯০০ মিটার উচ্চতায় পাহাড়ের কোলে অবস্থিত । কথিত আছে গুরু রিন্পছে যোগাসাধনার জন্য বাঘিনীর পিঠে চেপে এই মনেস্ট্রি তে আসতেন, সেই অনুসারেই এই স্থানটি টাইগার নেস্ট হিসেবে পরিচিত । ১৬৪৬ সালে শব্দরুঙ নাও নামজ্ঞাল এই মনেস্ট্রি ভ্রমণে এসেছিলেন, তাই আজও এটি ভুটানের পবিত্র স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম । আর সেই কারণেই ভুটানের মানুষ বছরে একবার এই মনেস্ট্রি দর্শন করতে আসেন । ১৯৯৮ সালে ১৯শে এপ্রিলে অগ্নিকাণ্ড হওয়ার ফলে মনেস্ট্রির প্রধান অংশ বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে বর্তমানে ভুটানের এই রত্নটি পুনরায় নিজের জৌলুস খুঁজে পেয়েছে ।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)