দৈনন্দিন জীবনের শৃঙ্খল ছাড়িয়ে একটু মুক্তির স্বাদ সবারই চাই। সংসার, দায়িত্বের ঘেরাটোপ পার করে কিছুদিন একা একা নিজের মনের মতো করে কোনও জায়গা থেকে ঘুরে আসা সকল মহিলাদেরই স্বপ্ন। তাই আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের ঠিক আগে আগে চলুন দেখেনি কীভাবে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন স্বয়ংসিদ্ধা! নিচের টিপসগুলো মেনে চলুন, তাতে আপনার সোলো ট্রিপ হয়ে উঠবে নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ করবে আপনার জীবনদর্শনকে।
১. কোথায় যেতে চান তা ঠিক করুন
যে কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে প্রথম কাজ হল আগে থেকে ভাল করে প্ল্যান করে নেওয়া। ভেবে দেখুন, কোথায় যেতে চান, আর নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন যেতে চান। আপনি কি শ্বেতশুভ্র হিমালয়ের পাদদেশে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেতে চান, নাকি সুন্দর কোনও সমুদ্র উপকূলে করতে চান একটু বিশ্রাম। নিজেকে বোঝার মাধ্যমে শুরু হোক ভ্রমণের পথ। যে রকম অভিজ্ঞতা খুঁজছেন, সেইভাবে বেছে নিন আপনার ডেস্টিনেশন। এতে আপনার ট্রিপ হয়ে উঠবে আরও আকর্ষণীয় এবং মানসিকভাবে আপনাকে আরও পরিপূর্ণ করে তুলবে।
২. প্রথম রাত্রির থাকার প্ল্যান করা থাকুক আগে থেকে
আপনার ট্রিপে আপনি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে পারেন বা কোনও সার্কিটের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানে কয়েকদিন করে থাকতে পারেন। তবে যে সকল জায়গায় থাকবেন, অন্তত প্রথম রাত্রির হোটেল বুকিং আগে থেকে করে রাখা ভাল। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করে হোটেলের রেটিং ও রিভিউ আগে থেকে দেখে নিন। আর হোটেলে পৌঁছে যান দিনের বেলা সময় থাকতে থাকতে। কোনও কারণে হোটেল বদলানোর প্রয়োজন হলে আপনার হাতে থাকবে যথেষ্ট সময়।
৩. যাত্রা শুরুর আগে একবার মনে মনে গোটা ট্রিপটি ভেবে নিন
নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার খাতিরে আমাদের উচিত শুরু থেকে সমস্ত রকম প্ল্যান করে নেওয়া। কিন্তু অত্যধিক প্ল্যান করলে বা সারাক্ষণ সেই নিয়ে চিন্তা করলে বেড়ানোর আনন্দ মাটি হতে আর কতক্ষণ? তাই বেড়াতে যাওয়ার আগেই ভেবে নিন আপনি কোথায় কীভাবে থাকবেন, কোথায় কোনদিন কী কী করবেন। ভেবে নিন খাওয়াদাওয়া, পোশাক, যাতায়াত, খরচাপাতির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো। তাহলে আপনি থাকবেন সদাপ্রস্তুত এবং কোনও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে অনেকটাই।
৪. বেশি প্যাকিং করবেন না
এমনভাবে প্যাকিং করুন যাতে আপনার সঙ্গে বেশি লাগেজ না থাকে। এতে চলাফেরা করার সময় বা এক ডেস্টিনেশন থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার সময় অসুবিধে কম হবে। প্লেনে ভ্রমণ করলে অতিরিক্ত খরচও হবে না। আর তাছাড়া, নতুন যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার জিনিসও তো শপিং করে বাড়ি নিয়ে আসতে হবে!
৫. কোথায় থাকবেন সে কথা বাড়ির লোকজন ছাড়া কাউকে জানাবেন না
নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় কাউকে আপনি কোথায় থাকছেন বা কোথায় ঘুরতে যাচ্ছেন জানাবেন না। সম্ভব হলে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার ভ্রমণকাহিনি পোস্ট করুন বেড়ানো হয়ে গেলে। তবে অবশ্যই নিজের বাড়ির লোকেদের বা বিশ্বস্ত বন্ধুবান্ধবদের আপনার দৈনিক লোকেশন বা প্ল্যান আগে থেকে জানিয়ে রাখতে পারেন। কোনও কারণে সাহায্যের প্রয়োজন হলে তারা সহজেই আপনাকে খুঁজে পাবে।
৬. পাসপোর্ট, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড এবং ক্যাশ সুরক্ষিত রাখুন
সবসময় আপনার টাকাপয়সা, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, আই.ডি কার্ড, পাসপোর্ট, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড সুরক্ষিত রাখবেন। কোনও পাসওয়ার্ড বা পিন কারওর সাথে শেয়ার করবেন না। সম্ভব হলে প্রতি ডকুমেন্টের ব্যাকআপ কপি রেখে দিন বাড়িতে আগে থেকেই।
৭. বিরতি নিন টেকনোলজি থেকে
বর্তমান সময়ে ঘরে বাইরে মহিলারা কাটান ব্যস্ত জীবন, সঙ্গে থাকে হাজার দায়িত্ব। তাই এই কয়েকদিন ছুটির সময় হোক নির্ভেজাল ছুটির জন্যেই। ল্যাপটপ, মোবাইল স্ক্রিন থেকে চোখ আর মন দুই থাকুক অনেক দূরে। দায়িত্বের বদলে আপনার সোলো ট্রিপ আপনাকে এনে দিক প্রশান্তি এবং আনন্দ।
৮. অন্য সোলো ফিমেল ট্র্যাভেলারদের সঙ্গে আলাপ করুন
আপনার যাত্রাপথে হয়তো আপনি দেখা পাবেন আপনার মতনই সাহসী অন্য মহিলা পর্যটকদের সঙ্গে। গড়ে তুলতে পারেন তাঁদের সঙ্গে আলাপ পরিচয়, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে পারেন আপনাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে। অনলাইনেও আছে বিভিন্ন মহিলা ট্র্যাভেলারদের কমিউনিটি, সেখানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে হয়ে উঠবেন আরও বেশি পরিমাণে ওয়াকিবহাল।
৯. প্রথম সোলো ট্রিপের জন্যে বেছে নিন কাছের কোনও জায়গা
আপনি যদি প্রথমবারের জন্যে কোনও সোলো ট্রিপে বেরোচ্ছেন, তাহলে অজানা অচেনা কোনও নতুন জায়গায় একলা যাওয়ার থেকে শুরু করুন নিকটবর্তী কোনও পরিচিত জায়গা থেকে। কিছুটা পরিচিত হওয়ার কারণে কোনও অসুবিধা হলেও আপনার স্থানীয় অঞ্চলের জ্ঞান আপনাকে আরও আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলবে এবং সহজেই আপনি প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবেন। আসতে আসতে আপনি যত বেশি নিজে নিজে ট্রিপ করবেন, তত আপনি নিজে থেকেই দূর দূরান্তের দেশে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পাবেন নিজের মধ্যেই।
১০. এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাত্রা করার সময় সঙ্গী থাকুক আপনার স্মার্টফোন
ট্রিপের মধ্যে যখন আপনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছেন, তখন সঙ্গে থাকুক আপনার স্মার্টফোন আর স্মার্টফোনে সবসময় চালু থাকুক গুগল ম্যাপস, ওয়েদার এবং ফাইন্ড ইওর ফোনের মতো অ্যাপ্লিকেশন। ফোনের মাধ্যমেই আপনি করতে পারবেন টর্চ বা কম্পাসের ব্যবহার। আর ব্যাঙ্কিং অ্যাপ্লিকেশনগুলিও ফোনে থাকুক তৈরি, যে কোনও প্রয়োজনে যাতে আপনি তা ব্যবহার করতে পারেন।