প্রবল ব্যস্ত জীবনে কাজের ফাঁকে প্রত্যেকেই চায় সপ্তাহান্তে শহরের বাইরে একটু অবসর সময় কাটাতে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। সপ্তাহান্তে কিছু জনপ্রিয় জায়গা ভ্রমণের আশায় কলকাতা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়।
ভ্রমণপিপাসু মানুষ হওয়ার কারণে আমি আমার বাংলা সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। তাই এবার আবার গন্তব্যস্থল হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত ঝাড়গ্রাম।
ঝাড়গ্রামে আপনি ট্রেন করে অথবা নিজস্ব গাড়ি ভাড়া করা সড়কপথে অনায়াসে পৌঁছতে পারবেন। পৌঁছতে প্রায় ৩.৩০ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে এটি রেল এবং সড়কপথের সঙ্গে খুব ভালভাবে যুক্ত।
ঝাড়গ্রাম
মাওবাদী কার্যকলাপের জন্য বর্তমানে যে জায়গাটি বেশ পরিচিতি লাভ করেছে, সেটি হল ঝাড়গ্রাম জঙ্গলমহল । কিন্তু তারপরেও বলব, গুজবে কান না দিয়ে এখানে আপনি খুব নিরাপত্তার সাথে বিনা সংশয়ে ঘুরে আসতে পারেন।
দুলুং নদীর ধারে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক জায়গা, যেখানে প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো একটি রাজপ্রাসাদ দেখতে পাবেন। এর সঙ্গে বহু পুরনো দুর্গা মন্দির এবং বাংলার গ্রামীণ ধারার ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা উপজাতি গ্রামের দর্শন পাবেন।
প্রকৃতির স্পর্শে বেঁচে থাকা মানুষ এবং বন্যজীবনের সাক্ষাৎ দর্শনের জন্য আপনার ব্যস্ততম জীবন থেকে ছুটি নিয়ে মাত্র দু'দিনের জন্য এই স্থানে এসে ঘুরে যেতেই পারেন। এখানকার বিশুদ্ধ হাওয়া এবং মনোরম প্রকৃতির যুগলবন্দি আপনার মনে অদ্ভুত এক স্মৃতিচারণা করবে।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি টুরিস্ট কমপ্লেক্স:
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির পাশে ডাবলুবিটিডিসি-র খুব সুন্দর একটি রিসোর্ট রয়েছে। মাত্র ৮০০ টাকায় আপনি এখানে থাকবার জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর পেয়ে যাবেন। শুধু তাই নয় এখানকার খাবার-দাবারও খুব সুস্বাদু।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিজম-এর ওয়েবসাইট থেকে আপনি এখানে থাকবার জন্য ঘর ভাড়া নিতে পারেন। তবে আমরা আগের থেকে এখানে একদিনের জন্য কোন ঘর ভাড়া করিনি। পৌঁছনোর পরে যে ঘরটি ফাঁকা ছিল, সেটি আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু যদি ছুটির দিন এখানে যান, তাহলে আগের থেকে ঘরের সন্ধান করে নেওয়া প্রয়োজন।
রাজবাড়ির এক অংশে একটি হোটেল রয়েছে, যেখানে আপনি চাইলে ঘর ভাড়া করতে পারেন। বর্তমানে এই রাজবাড়িতে রাজার বংশধরেরা রয়েছেন।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি:
১৫৭০ খ্রিস্টাব্দের মুঘল সম্রাট আকবরের সময় রাজা সর্বেশ্বর সিং চৌহান এই স্থানে এসে এটি জয় করেন এবং তারপর তিনি এখানে একটি রাজবাড়ি স্থাপন করেন, যার নাম দেন ঝাড়গ্রাম। তখন থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত এই রাজবাড়ি নিয়মমাফিক সুন্দর করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, যার ফলে এটি বর্তমান যুগে শিল্প প্রসারে পরিণত হয়েছে। এখানে গেলে আপনি খুঁজে পাবেন পাশ্চাত্য এবং মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের কারুকার্যের সমন্বয়।
রাজবাড়ির অন্দরমহলের ছবি তোলা নিষিদ্ধ। তাই আমি কোন ছবি তুলতে পারিনি। তবে যদি আপনি আগের থেকে এখানে থাকাবার জন্য কোন ঘর ভাড়া করেন, তাহলে এই রাজবাড়ির একটি ক্ষুদ্রতম অংশ আপনি দর্শন করতে পারবেন।
ছিলকিগড় কনক-দুর্গা মন্দির:-
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে মাত্র ২০ মিনিটের অতিক্রম করলেই পৌঁছে যাবেন কনক দুর্গা মন্দিরে।
ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতি অবিশ্বাসী হলেও এখানকার ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আপনি একবার ঘুরে আসতে পারেন এই স্থানে।
এই অতি প্রাচীন ভগ্নপ্রায় মন্দিরটি তৈরি করা হয় ১৩৪৮ খ্রিস্টাব্দে। বলা হয়, দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশে পেয়ে তখনকার রাজা এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন তার পূজার্চ্চনার জন্য। তারপর স্থানীয় ব্যক্তিরা দুলুং নদীর ধারে অবস্থিত এক জঙ্গলের ভেতর থেকে একটি দেবীমূর্তি খুঁজে পান। এরপর থেকেই এই মন্দিরের মা দুর্গার পুজো শুরু হয়। তাই এই স্বর্ণ মুদ্রিত মূর্তি দেখেই এই মন্দিরের নাম দেওয়া হয় কনক দুর্গা মন্দির।
কারুকার্য খোদাই করা এই স্বর্ণ মুদ্রিত দুর্গা মায়ের মূর্তি থেকেই এই জায়গার নাম দেওয়া হয় কনক-দুর্গা মন্দির। মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে প্রচুর হনুমান। তাই একটু সাবধানতা অবলম্বন করে এখানে প্রবেশ করাই শ্রেয়।
মন্দির থেকে বেরিয়ে আপনি দুলুং নদীর ধার দিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন। চাইলে এই নদীতে আপনি নৌকাবিহারের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
ছিলকিগড় রাজবাড়ি:-
ঝাড়গ্রাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ছিলকিগড় অবস্থিত। পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এখানে রয়েছে একটি ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ি। যেহেতু আমাদের একদিনের মধ্যে সমস্ত ঝাড়গ্রাম ঘুরে দেখার পরিকল্পনা ছিল, তাই আমরা এখানে গিয়ে আর সময় নষ্ট করি। তবে আপনারা যদি চান অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন।
ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানা
দুপুরের মধ্যাহ্নভোজের পর সময় হাতে থাকলে ঘুরে আসা যায় এই ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায়। এই চিড়িয়াখানা সম্পূর্ণভাবে পরিদর্শন করতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টাখানেক। আপনার সঙ্গে যদি কোন শিশুকে নিয়ে যান তাহলে সে হয়তো এই জায়গাটির ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে তেমন একটা আগ্রহী হবে না। তবে এখানকার পরিবেশ তাকে অত্যন্ত আনন্দ দেবে।
আপনাদেরকে আমার একটি অনুরোধ, আপনার শিশুকে ছোট থেকেই বন্যপ্রাণী এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করে রাখার শিক্ষা প্রদান করবেন। যাতে এই সমস্ত জায়গায় এসে পশু পাখিদের অযথা শব্দ করে বিব্রত না করে। ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানা প্রবেশ করে আমি এটি দেখে কিছুটা হতাশ হয়েছি যে, ছোটরা প্রবল শব্দ করে পশুপাখিগুলোকে বিরক্ত করছে এবং তাদের অভিভাবকরা এই কাজে তাদের উৎসাহ দিচ্ছে।
এই চিড়িয়াখানায় আপনি দেখতে পাবেন মনিটর লিজার্ড, ষ্টার কচ্ছপ, হরিণ, নীলগাই, হাতি, ভাল্লুক, শিয়াল, হায়না, চিতাবাঘ, সজারু প্রভৃতি প্রাণীকে । এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন পাখি যেমন- ময়ূর, শকুন, বাজপাখি, তোতাপাখি, বদ্রিপাখি, সারস, হাঁস, ইমু ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রজাতির সাপও এই চিড়িয়াখানায় দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও এখানে আহত বিভিন্ন পশু এবং পাখিদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে চিকিৎসায় সুস্থ করে তোলা হয় এবং পরবর্তীতে বন্য পরিবেশে তাদের মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আইআইটি খড়গপুর:-
সৌভাগ্যবশত আমার কিছু আত্মীয়স্বজন খড়গপুর থাকেন। তাই আমি একটি সম্পূর্ণ দিন ঝাড়গ্রাম ঘুরে দেখার জন্য সময় পাই। তবে আপনি যদি এই খড়গপুর থাকবার মত কোন জায়গা খুঁজে না পান তাহলে বলব অবশ্যই ফিরে আসার পথে খড়গপুর আইআইটি ঘুরে দেখে আসবেন। সড়কপথের অবস্থা অনুযায়ী ঝাড়গ্রাম থেকে খড়গপুর দূরত্ব মাত্র ১ ঘন্টা।
এছাড়াও খড়গপুর রেলস্টেশন সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় ভারতীয় খেলোয়াড় মহেন্দ্র সিং ধোনি তাঁর জীবনের প্রথম চাকরি সূত্রপাত ঘটায় এই খড়গপুর রেলওয়েস্টেশন থেকে।
ভ্রমণের আদর্শ সময়:-
অক্টোবর থেকে এপ্রিল।
সবথেকে ভালো হয় যদি শীতকালে আপনি এখানে আসেন। সেই সময় অনেক পরিযায়ী পাখি দেখতে পাবেন আর এখানকার আবহাওয়া তখন খুব সুন্দর এবং মনোরম থাকে।
এখানে এসে সতেজ সবজি এবং এখানকার মাছ ও মাংস ভক্ষণ করে প্রকৃতির কোলে একটি নিরিবিলি রাত্রি যাপন করতে পারবেন।
ঝাড়গ্রামে থাকাবার জন্য ডব্লিউবিটিডিসি-র রাজবাড়ি টুরিস্ট কমপ্লেক্স একবার উপযুক্ত জায়গা। এছাড়াও চিড়িয়াখানার পাশে হোটেল রয়েছে যেখানে আপনারা অনায়াসে থাকতে পারেন।
প্রকৃতি আমাদের প্রাণরক্ষা কর্তা। তাই অযথা জঞ্জাল ফেলে প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করবেন না।
আর আপনাদের কাছে ভাল ছবি দিতে না পারার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। কারণ তাড়াহুড়োর জন্য আমার ক্যামেরাটা নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই সমস্ত ছবি আমি নিজস্ব মোবাইল ফোনে তুলি।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)