
নারী দিবসে সেই সব মেয়েদের কাহিনিই সবাই পড়তে বা জানতে ভালোবাসে যারা অন্যদের উদ্বুদ্ধ করে, তাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগায়। মেয়েরা এখন ফাইটার জেট চালাচ্ছে, বিয়ের মণ্ডপে অস্বীকার করছে কনকাঞ্জলি দিতে, পুলিশ, গোয়েন্দা, পরিচালক এমনকি দমকলেও তাঁরা চাকরি করছেন। আজ যার কথা বলব সেই কাজি আসমা আজমেরি হলেন একজন ভূ-পর্যটক। মেয়েরা যেখানে একা একা ঘরের বাইরে বেরতে ভয় পায় সেখানে আসমা বহু বাধা বিপত্তি পার করে একাই ঘুরে এসেছেন ১১৫টি দেশে। তিনি বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা।

২০০৭ সালের আশেপাশের কথা। আসমা তখন ছাত্রী। পড়াশোনা করছেন ঢাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা করতে করতেই প্রথমবার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ এল। প্রথম দেশ তাইল্যান্ড। তাইল্যান্ড ঘুরে আসমা পৌঁছলেন ভারতে। তারপর নেপাল। ব্যাস, সারা পৃথিবী ঘোরার নেশা চেপে বসল মেয়ের মাথায়। একসময় তাঁকে অতি সাধারণ হওয়ার জন্য নানা কথা শুনতে হয়েছে। তাঁর বান্ধবীর মায়েরা মাঝে মধ্যেই বলতেন যে আসমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না।

কিন্তু এত দেশ ঘুরতে গেলে তো পয়সা লাগে অনেক। ২০০৯ সালে নিজের সমস্ত গয়না বিক্রি করে দেন আসমা! কারণ তার বাবা তাকে অর্থসাহায্য করতে অস্বীকার করেন। মোটা রকমের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট না দেখালে ভিসা পাবেন না। তাই গয়না বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি।

এতগুলো দেশ ঘোরার কথা বারবার বলছি বলে এটা ভাবা ঠিক নয় যে বিষয়টা খুব সহজ ছিল। ভিয়েতনামে ২৩ ঘণ্টা ইমিগ্রেশান জেলে আটকে রাখা হয়েছিল তাঁকে! তুরস্ক থেকে সাইপ্রাসে ঢুকতে বাধা পেয়েছিলেন কারণ তার পাসপোর্ট ছিল বাংলাদেশের। কলম্বিয়ার বোগোটায় টাকা পয়সা সর্বস্ব খোয়া যায় আসমার। এদিকে আসমার পকেটে তখন মাত্র ১৮০ ডলার। তাই দিয়েই ১৭ দিন কাটিয়েছিলেন তিনি। পরে ব্যাঙ্কের সহায়তায় তাঁর কার্ড এসে পৌঁছয়। কিন্তু কলম্বিয়ার মানুষের সাহায্যের কথা কোনওদিন ভুলবেন না তিনি। তবে এত দেশ ঘুরেও তাঁর হৃদয় বাংলাদেশের। তিনি আজও বাংলাদেশের নাগরিক। ইউরোপের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিয়েছেন আসমা।

এত দেশ যিনি ঘুরেছেন তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি যে কানায় কানায় পরিপূর্ণ সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ট্রাক, মোটরগাড়ি চড়ে অস্ট্রেলিয়া ঘুরেছেন, ব্রাজিল গিয়ে বিশ্বকাপ দেখেছেন, হনডুরাস গেছেন, ১২ মাইল ধুলো মাখা পথ হেঁটে গেছেন সেই গ্রামে যেখানে চে গুয়েভারাকে হত্যা করা হয়। হ্যাঁ, বলিভিয়ার ভালেগ্রান্দেতেও উপস্থিত হয়েছেন আসমা। ফিজি থেকে গেলেন নিউজিল্যান্ড। মূলত এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি দেশ ঘুরেছেন তিনি। কারণ এখানেই তিনি রেড ক্রসে চাকরি পান।তবে আসমার প্রিয় জায়গা মনটেনেগ্রো। ঘুরে এসেছেন তানজানিয়া, কেনিয়া আর ইথিওপিয়া।

তবে কলকাতা শহরে এলে ভীষণ আনন্দ পান আসমা। এখানে যে প্রাণ ভরে বাংলা বলা যায়। বাবা মাকে তিনি বলেছিলেন যে ৫০ টি দেশ ঘুরলেই বাবা মায়ের কথা মতো বিয়ে করবেন তিনি। ২০১৮ সালেই ব্রাজিল ঘুরে ৫০ টি দেশের টার্গেট পূর্ণ হয়েছে তাঁর। পরে বললেন ১০০ টি দেশ ঘুরে বিয়ে করবেন। তুর্কমেনিস্তান ঘুরে ১০০ দেশের টার্গেটও শেষ। সেটাকে ছাপিয়ে আসমা ঘুরেছেন ১১৫টি দেশ। ঘোড়ার মাংসের তরকারি, কুমিরের ডালনা, হাঁসের বরফি সব খেয়েছেন তিনি!! বেড়াতে গিয়ে কত কী যে খেয়েছেন তিনি তার ইয়ত্তা নেই।

শুধু পায়ের তলায় সর্ষে নিয়ে ঘুরে বেড়ান না তিনি। অবৈধ দেশান্তরের বিপদ নিয়ে তিনি প্রচার করেন। আর দেশের লোকেদের বলেন চরৈবেতি! বেরিয়ে পড়ো, ঘুরে দেখো সারা বিশ্ব।

বিয়ে করলে নেদারল্যান্ড আর সুইতজারল্যান্ড যাওয়ার ইচ্ছে আছে। আর সেইজন্যই ওই দুটো দেশে একলা যাননি আসমা!

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।