ইতিহাসের শহর মুর্শিদাবাদ। একসময় সমস্ত বাংলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের নবাবী মসনদ থেকে। শুধু মাত্র নবাবরাই নন, বর্ধিষ্ণু এই অঞ্চলে ছিল বহু জমিদার বংশের প্রভাব ও প্রতিপত্তি। অনতিদূরের কাশিমবাজার রাজবাড়ি সেই ইতিহাসেরই মূর্ত প্রতীক। ইতিহাসের ঘাত প্রতিঘাতে একসময় এই রাজবাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে উঠলেও, বিগত কয়েক বছরে নতুন রঙে সেজে উঠে বর্তমানে তা হয়ে উঠেছে হেরিটেজ গেস্ট হাউস। কলকাতা থেকে একটু দূরে মুর্শিদাবাদের কাছের এই রাজবাড়ি হয়ে উঠেছে আদর্শ উইকেন্ড ডেস্টিনেশন।
কাশিমবাজার অঞ্চলের ইতিহাস
ভাগিরথী নদীর তীরে অবস্থিত কাশিমবাজার একসময় ছিল ছোট্ট একটি দ্বীপ। মুর্শিদাবাদের নিকটে হওয়ায়, এবং নবাবী ও ব্রিটিশ আমলে নিয়মিত বাণিজ্যের মাধ্যমে কাশিমবাজার এলাকা হয়ে ওঠে জনবহুল এবং হয় প্রভূত উন্নতি। কিন্তু বর্তমানে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এককালে এটি একটি দ্বীপ ছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ভাগিরথী নদী গতিপথ পাল্টানোর ফলে নদী সরে যায় প্রায় ৩ মাইল। পরে থাকে অনেকটা জলাজমি। কাশিমবাজারের ভাগ্যেও নেমে আসে বহু বছরের জন্যে অন্ধকার।
তবে বর্তমানে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কাশিমবাজার পুনরায় পরিণত হয়েছে জনবসতিতে। শুধু তাই নয়, হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ লাগোয়া অন্যতম ট্যুরিস্ট স্পট এর-ই মাঝে দেখতে পাবেন কাশিমবাজার প্যালেস বা কাশিমবাজার রাজবাড়ি।
কাশিমবাজারে কী কী দেখার আছে
সর্বপ্রথম দ্রষ্টব্য হিসাবে থাকবে কাশিমবাজার প্যালেস এবং শ্রীপুর প্যালেস। ইদানিংকালে এই রাজবাড়িগুলির পর্যবেক্ষণে জোর দেওয়া হয়েছে এবং ফলত জায়গাগুলি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের পর্যটকদের জন্যে তৈরি করা হচ্ছে।
আশেপাশে রয়েছে প্রচুর মন্দির, যার অধিকাংশই বেশ কয়েক শতাব্দী পুরনো। নিকটবর্তী ছোট রাজবাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখে নিতে পারেন সুসংরক্ষিত মিউজিয়াম এবং ওয়াচ টাওয়ারটি। হেঁটে ঘুরে আসতে পারেন নিকটবর্তী ব্রিটিশ এবং ডাচ কবরখানা থেকে। বহুপ্রভাব প্রতিপত্তিশালী ব্রিটিশ এবং ড্যানিশ ব্যক্তিত্বের শেষ শয়নভূমি আজও পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেই।
কলকাপুরের ডাচ কারখানা, ফরাসডাঙ্গার ফ্রেঞ্চ দের কারখানা, আর্মেনিয়ান পাড়ার লাল ইঁটের গির্জা এখনো মনে করিয়ে দেয় কাশিমবাজারের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব।
কাশিমবাজার রাজবাড়িতে কিছুদিন
ছুটি কাটানোর জন্যে রায় বংশের এই রাজবাড়ির জুড়ি মেলা ভার। আসুন দেখেনি কিভাবে এখানে কিছুদিন কাটিয়ে নিতে পারেন।
কলকাতা থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে দুপুর নাগাদ চলে আসুন রাজবাড়িতে। বনেদি আমেজে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে হয়ে যাক কাশিমবাজারের সাইটসিইয়িং। বিকেলে হোক কাশিমবাজার রাজবাড়ির নানা অংশে ভ্রমণ এবং জানুন রাজবাড়ির ইতিহাস। সন্ধ্যেবেলা আয়োজন করা যেতে পারে মতিঝিলে লাইট ও সাউন্ড শো-এর।
হাতে সময় থাকলে পরের দিন ঘুরে আসুন মুর্শিদাবাদ থেকে। ঘুরে দেখে নিন হাজারদুয়ারী সহ মুর্শিদাবাদের নবাবী আমলের বিভিন্ন প্রাসাদ, সৌধ এবং মনুমেন্ট।
পরের দিন চলুন বেরিয়ে আসি জিয়াগঞ্জ হয়ে গঙ্গা পেরিয়ে। দেখে নেবেন ১৭৫০ ক্রিস্টাব্দ নাগাদ স্থাপিত নাটোরের রানী ভবানীর টেরাকোটার মন্দিরগুলি। দেখতে পারেন কিরিটেশ্বড়ী কালী মন্দির, যা কালী পিঠগুলির মধ্যে অন্যতম। খোশবাগে দেখতে পাবেন সিরাজউদ্দৌলা এবং তার পরিবারের কবরগুলি। গঙ্গা পেরিয়ে রাজবাড়ি ফিরে এসে করুন দুপুরের খাওয়াদাওয়া। দুপুরে বা বিকেলে ঘুরে দেখতে পারেন আর্মেনিয়ান গির্জা এবং জাহানকোশা কামান।
পরের দিন সকালে প্রাতরাশ সেরে ফিরে আসতে পারেন কলকাতার দিকে।
কাশিমবাজার রাজবাড়ি কীভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে সড়কপথে কাশিমবাজার প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত। লং ড্রাইভে গাড়ি করে যেতে পারেন। অথবা ট্রেনপথে চলে আসতে পারেন বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে। সেখান থেকে স্থানীয় গাড়ি করে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন কাশিমবাজার প্যালেসে।
মোটামুটি খরচ
কাশিমবাজার রাজবাড়িতে আপনি প্যাকেজ ট্যুরে যেতে পারেন অথবা যেতে পারেন উইকেন্ডে ঘর বুক করে ছুটি কাটাতে। সাধারণত ৩ দিনের প্যাকেজ গুলিতে জনপ্রতি ১১,০০০/- করে চার্জ নেওয়া হয়। অন্যদিকে দুজনের জন্যে এখানকার বিভিন্ন রুমগুলির একরাতের ভাড়া শুরু হয় ৯০০০/- থেকে ১০০০/- এর মধ্যে। এনাদের রূপকথা বুটিক থেকে আপনি মুর্শিদাবাদের সিল্ক শাড়ি এবং অন্যান্য হস্তশিল্পের জিনিসও কেনাকাটা করতে পারেন।