যাত্রার পূর্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
ভারতীয় রেল টিকিট বুকিং:
ভারতীয় রেল টিকিট কাউন্টার অথবা অনলাইনের মাধ্যমে আপনি টিকিট কাটতে পারবেন। এখানে অনলাইনের লিংকটি দিয়ে দেওয়া হল- www.irctc.co.in
বিস্তারিত ট্রেনের সময়সূচি :
• ১৩১১৩- হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস (ট্রেনের নাম ও নম্বর)।
কেওএএ-এমবিবি (স্টেশনের নাম)
• ৬.৫০ - ১০.৪২ (প্রস্থান এবং প্রবেশ সময়)।
আমি কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার জন্য এই ট্রেনটি নির্বাচন করেছিলাম।
• ৫৩১৭৮- লালগোলা শিয়ালদা প্যাসেঞ্জার (ট্রেনের নাম ও নম্বর)।
এমবিবি-সিডিএএইচ (স্টেশনের নাম )।
• ০৯.৩৫ - ১৫.১৫ (প্রস্থান এবং প্রবেশ সময়)।
মুর্শিদাবাদ থেকে আমি এই ট্রেনটি করে বাড়ি ফিরেছিলাম।
থাকবার বন্দোবস্ত :
হোটেল ইন্দ্রজিৎ
যোগাযোগ নম্বর- ০৩৪৮২-২৭১৮৫৮/২৭০৫৬৪/+৯১৯৪৭৪৩২২৯৩২
www.hotelindrajit.in
মুর্শিদাবাদে অবস্থিত হোটেলগুলির মধ্যে এই হোটেলটি অন্যতম। এখানে বার এবং রেস্টুরেন্টের সুবিধা একসঙ্গে রয়েছে। এছাড়াও এখানে আইএমএফএল নামক পানীয় মাদকের দোকানও রয়েছে। মুর্শিদাবাদ থেকে বহরমপুরের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। তাই আমি বলব থাকবার জন্য মুর্শিদাবাদে থাকাটাই শ্রেয়।
আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থান:
মসজিদ এবং সমাধি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই পার্কটি। এখানে একটি ছোট জলাশয় রয়েছে, যেটি দেখতে অনেকটা ঘোড়ার খুরের নালের মত।
জাহান কোশা কামান
বাঙালি লৌহকার জনার্দন কর্মকারের তৈরি এই ১৭ ফুট দৈর্ঘ্যের কামানটির ওজন প্রায় ৭ টন ।
১৭২৩-২৪ সালে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তাই এই সৌন্দর্যকে চাক্ষুষ উপভোগের জন্য আপনাকে অবশ্যই একবার এই স্থানে ভ্রমণ জন্য আসতে হবে। হাজারদুয়ারি প্রাসাদ ছাড়াও এই মসজিদটি মুর্শিদাবাদের আইকনিক স্থাপত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১৭৪০ সালে এক রাতের মধ্যে গড়ে ওঠা অসম্পূর্ণ একটি মসজিদ। যেহেতু এটি নির্মাণের জন্য সময় মাত্র একটি রাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল, তাই রাজমিস্ত্রিরা এই মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে নির্মাণ করতে অসফল হন। ফলত তারপর থেকেই মসজিদটি সেইভাবেই রয়ে গিয়েছে।
এই জায়গাটি বিভিন্ন চলচ্চিত্রের শুটিং এবং চিত্রনাট্যে জন্য বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি মুক্তি প্রাপ্ত যিশু সেনগুপ্ত অভিনীত সিনেমা ‘এক যে ছিল রাজা’-র কিছুটা অংশ এই স্থানে শুটিং করা হয়। প্রায় ৩০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা প্রাসাদটিকে ঘিরে রয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান এবং একটি জৈন মন্দির। এছাড়াও এখানে পক্ষী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। প্রাসাদের সামনে রয়েছে একটি ছোট্ট জলাশয়, যেখানে বিভিন্ন রংবেরঙের মাছ দেখতে পাওয়া যায়।
জগৎশেঠের বাড়ির ন্যায় ছোট্টো প্রাসাদটি বর্তমানে প্রদর্শনশালায় পরিণত হয়েছে।
এক নিষ্ঠুর কর সংগ্রাহক দেবী সিংহের তৈরি এই রাজবাড়িটি হাজারদুয়ারি প্রাসাদের প্রতিলিপি। এটিও পরবর্তী সময়ে প্রদর্শনশালায় পরিণত হয়েছে।
নসিপুর আখড়া
নসিপুর রাজবাড়ির কাছে অবস্থিত এই জায়গাটিতে রয়েছে একটি প্রাসাদ এবং কৃষ্ণ মন্দির। প্রতিবছর এখানে ঝুলন যাত্রা উৎসব পালন করা হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে বেশকিছু পুরনো বাসনপত্র, একটি সুপ্রাচীন গাড়ি এবং রৌপ নির্মিত রথ।
আজিম-উন-নিসা বেগমের সমাধি
নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-এর কন্যা আজিমুন্নিসাকে জীবন্ত সমাধি দেওয়া এই স্থানে। তাই এই সমাধি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত লোক আসতে থাকে। কথিত আছে, বেগম এক ধরনের ওষুধ পান করতেন, যা তৈরি হতো ছোট ছোট বাচ্চাদের কলিজা থেকে। তাই তিনি সেই নেশায় ছোট ছোট বাচ্চাদের এনে হত্যা করতেন। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ সেই কথা জানতে পেরে নিজের হাতে তাঁর মেয়েকে জীবন্ত সমাধিস্থ করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই মসজিদের এখন ভগ্নপ্রায় অবস্থা। নমুনা হিসেবে পড়ে রয়েছে শুধুমাত্র একটি দেওয়াল।
জাফরগঞ্জ কবরস্থান / মীরজাফরের পরিবারে সমাধিক্ষেত্র /১০০০ সমাধিস্থল
এটি মীরজাফর পরিবারের নিজস্ব সমাধিস্থল। এই কবরস্থানে ১০০০ সমাধি রয়েছে। এখানে আপনি মীরজাফর এবং বাংলার শেষ নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জার সমাধি দেখতে পাবেন।
হাজারদুয়ারি প্রাসাদ এবং ইমামবাড়া -
প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প কার্যের দ্বারা নির্মিত এই হাজারদুয়ারি প্রাসাদে আসল এবং নকল মিলিয়ে ১০০০টি দরজা রয়েছে। বর্তমানে এটিকে প্রদর্শনশালায় পরিণত করা হয়েছে, যা নিয়মিত সংরক্ষণ করে চলেছে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ। এখানে প্রবেশের আগে আপনার মোবাইল ফোন এবং ক্যামেরা সব কিছু জমা রাখতে হয়। প্রবেশের পূর্বে প্রবেশ মূল্য নির্ধারিত টিকিট কাটতে হয়। এই প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন রূপোর তৈরি বাসনপত্র, কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি, গোলাবারুদ এবং বাইরের দু'ধারে রয়েছে কামান।
হাজারদুয়ারি ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত। প্রাসাদের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত নিজামৎ ইমামবাড়া, যা ভারতবর্ষের বৃহত্তম ইমামবাড়া হিসেবে পরিচিত। তবে মহরম ছাড়া এটি প্রায় বন্ধই থাকে।তাই এর আশপাশ দিয়ে আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন।
খাবার-দাবার:
জাফরগঞ্জ কবরস্থান থেকে বেরিয়ে ওয়াসিফ মনজিল যাওয়ার পথে আপনি হোটেল সাগ্নিক খুঁজে পাবেন। যেখানে আপনার মধ্যাহ্নভোজন অনায়াসে সম্পন্ন করতে পারবেন। এখানকার খাবার বেশ সুস্বাদু এবং খরচও স্বল্প।
এছাড়াও হোটেল ইন্দ্রজিতে বার এবং পারিবারিক রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে প্রকৃতপক্ষে মুর্শিদাবাদের নিজস্ব ধারায় তৈরি চিকেন বিরিয়ানি পেয়ে যাবেন।
হোটেল সাগ্নিকে দুর্গাপূজার সময় গেলে আপনি বিরিয়ানি উৎসব দেখতে পাবেন।
হোটেল ইন্দ্রজিৎ আইএমএফএল এর বার রয়েছে যেখানকার খরচ আপনার সাধ্যের মধ্যে।
নৈশ্যপ্রমোদ:
রাত্রিবেলা ঘুরাঘুরির জন্য তেমন কোন জায়গা মুর্শিদাবাদে নেই। তাই কোনো হোটেল ভাড়া করে সন্ধ্যার মধ্যে ঘুরে এসে থেকে যাওয়াই শ্রেয়।
কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য:
• হাজারদুয়ারি প্রাসাদের সামনে মুক্ত বন্য তোতাপাখি দেখতে ভুলবেন না।
• হাজারদুয়ারি প্রাসাদে দুর্বার হলের মধ্যে রয়েছে রানী ভিক্টোরিয়ার উপহার দেওয়া এক বিশাল আকৃতির ঝাড়বাতি।
• ইন্দ্রজিৎ হোটেলের বিরিয়ানি খেতে ভুলবেন না।
• আপনি যদি একাকী অথবা দু-তিনজন সদস্য নিয়ে এই স্থানে ভ্রমণ করতে চান তবে অটো বা কোন গাড়ি ভাড়া করে টাকা খরচ করবেন না। সে ক্ষেত্রে আপনি টোটো বা সাইকেল রিক্সা ভাড়া করতে পারেন, যা সহজলভ্য এবং সস্তা।
• আমি খুব ভাল সাহায্যকারী একজন টোটো চালক কে পেয়েছিলাম। যিনি আমাদের পুরো মুর্শিদাবাদটি খুব সুন্দরভাবে ঘুরিয়ে দেখান। তার নাম হল- তরুণ এবং তার মোবাইল নম্বর +৯১-৮০০১১৬০০৪০। মাত্র ৪০০ টাকায় উনি আমাদের সমস্ত মুর্শিদাবাদ ঘুরিয়ে দেখিয়ে ছিলেন।
• রাত্রিযাপনের জন্য মুর্শিদাবাদে একেবারে থাকা উচিত নয়। দিনের বেলা আপনি সম্পূর্ণ মুর্শিদাবাদ ঘুরে দেখতে পারেন। তবে সেটি আপনার জন্য একটু ব্যস্ততায় পরিণত হবে। বিকেল ৫টায় হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসে চেপে আপনি অনায়াসে ফিরে আসতে পারেন।