কলকাতা শহরে থেকে আপনি কখনও খোলা আকাশের হাজার হাজার তারাদের সঙ্গে আলাপচারিতা করে রাত কাটিয়েছেন? কিংবা সূর্যমামার গুডমর্নিং অভিবাদনে একটা নতুন দিনের সূচনা করেছেন? আমরা সকলেই জানি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেই রয়েছে পাহাড় থেকে সমতল, আবার সমুদ্র থেকে মোহনা দিয়ে তৈরি একটা দ্বীপ। আর আজ আমাদের গন্তব্যস্থল হল নদী মোহনা দিয়ে পরিবেষ্টিত দ্বীপের উদ্দেশ্যে। কলকাতার খুব কাছেই অবস্থিত এই মৌসুনি দ্বীপটি সপ্তাহান্তে ভ্রমণের জন্য এক্কেবারে পারফেক্ট। নদীমাতৃক বাংলার সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে এবং প্রকৃতির কোমলতাকে একান্তে উপভোগ করার জন্য এই ট্রিপটা আপনার জন্য জমজমাট হতে চলেছে।
মৌসুনি দ্বীপটি পশ্চিমবঙ্গের এক্কেবারে দক্ষিণে মুড়িগঙ্গা নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত। চিনাই নদী দ্বারা পৃথকীকরণ হওয়ায় মৌসুনি একটি দ্বীপে পরিণত হয়েছে। মৌসুনি দ্বীপের পশ্চিমে জম্মু দ্বীপ, পূর্বে চিনাই নদী, উত্তর-পূর্বে বকখালি ফ্রেজারগঞ্জ, এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে গঙ্গাসাগর। প্রকৃত পক্ষে, এই দ্বীপটি নদীকেন্দ্রিক দ্বীপ।
প্রথম দিন
কলকাতা থেকে পাঁচ ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান মৌসুনি দ্বীপে। ক্যাম্পে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ওয়েকাম ড্রিঙ্কস হিসেবে পরিবেশন করা হবে ডাবের জল। তারপর ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ সেরে পৌঁছে যান মোহনায়। নদীর ঢেউ-এর মূর্ছনা শুনতে শুনতে সম্পূর্ণ তট পায়ে হেঁটে ঘুরে আসতে পারেন। কিংবা তটে বসে মৎসজীবীদের কর্মব্যস্ততাকে উপভোগ করতে পারেন। এছাড়াও পাশের গ্রামটিও পরিদর্শন করে নিতে পারেন। দিনের শেষে সূর্যের অস্তাগমণকে ক্যামেরাবন্দি করে ফিরে আসুন ক্যাম্পে। সন্ধেবেলায় চা সহযোগে চপ মুড়ি খেতে খেতে আপনার বনফায়ার-এর আয়োজন করে ফেলা হয়ে যাবে। খোলা আকাশের নিচে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খোশমেজাজে ছেলেবেলার স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। রাতের ডিনার সেরে নদীর ঢেউ এর মূর্ছনা শুনতে শুনতে আর চাঁদনী রাতের ঝলমলে তারাদের সঙ্গে কথোপকথন করতে করতে প্রথম দিনটি শেষ করতে পারেন।
দ্বিতীয় দিন
পাখিদের কলকাকলি শুনতে শুনতে দিনের শুরু করুন। ভোরের মলিন আলো মেখে প্রকৃতির সিন্গ্ধতাকে উপভোগ করার জন্য আবারও পৌঁছে যান মোহনায়। রাতের নির্জনতার পর নতুন ঝলমলে দিনের সূচনার প্রত্যক্ষদর্শী থাকতে পারেন। এরপর টেন্ট-এ ফিরে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পড়ুন জম্মু দ্বীপের উদ্দেশ্যে। পায়ে হেঁটে খানিকটা নদী পার করে উঠে পড়ুন লঞ্চে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ছোট বোটে জম্মু দ্বীপ ভ্রমণের প্ল্যান করাটা কিন্তু বিপজ্জনক। প্রায় ঘণ্টা খানেক বোট রাইড করে পৌঁছে যান জম্মু দ্বীপ। হাতে কিছুটা সময় থাকলে বকখালি, হেনরি আইল্যান্ড, লাটিন দ্বীপ এমনকি গঙ্গাসাগরও ঘুরে আসতে পারেন। কাছাকাছি ভ্রমণ স্থানগুলো পরিদর্শন করার পর ক্যাম্পে ফিরে লাঞ্চ সেরে বেড়িয়ে পড়ুন কলকাতার উদ্দেশ্যে।
কোথায় থাকবেন
মৌসুনি দ্বীপ বিচ সন্নিকটে কোনও রকম কন্ট্রাকশন-এর অনুমতি পাওয়া যায় না, তাই এখানে কোনো হোটেল নেই। এখানে রাত্রিবাসের জন্য টেন্ট এবং কটেজ উপলব্ধ আছে। টেন্টগুলোর জন্য একটি কমন টয়লেট এর ব্যাবস্থা আছে, অন্যদিকে কটেজগুলোতে কোমর সমান পাঁচিল তুলে বাঁশ এবং ত্রিপল এর কম্বিনেশনে দেওয়াল বানানো হয়েছে, আর খড়ের ছাওনি দিয়ে কটেজের ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি কটেজে অ্যাটাচ টয়লেট, টেবল ফ্যান এবং ফোনে চার্জ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বন্দোবস্ত আছে। তবে বিলাসী সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা এখানে নেই।
১. ডোম টেন্ট (শুধুমাত্র ২জন মানুষের জন্য উপযুক্ত )- রাত্রিবাস এবং ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার, সন্ধেবেলার স্ন্যাক্স সহযোগে মাথাপিছু খরচ ১০০০ টাকা ।
২. ফ্যামিলি টেন্ট ( শুধুমাত্র ৩ জন মানুষের জন্য উপযুক্ত)- রাত্রিবাস এবং সমস্ত রকম আহারাদি সহ মাথাপিছু খরচ ১২০০ টাকা ।
৩.কটেজ ( শুধুমাত্র ৩ জন মানুষের জন্য উপযুক্ত)- রাত্রিবাস এবং সমস্ত রকম আহারাদি সহ মাথাপিছু খরচ ১৪০০ টাকা ।
৪. বোনফায়ার এর খরচ উপরিউক্ত খরচের অন্তর্ভূক্ত নয় এবং এই খরচটি পরিবর্তনশীল ।
কী কী করবেন
১. বিভিন্ন ধরণের পাখিদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে নিতে পারেন।
২. সমস্ত বিচ পায়ে হেঁটে পরিদর্শন করে নিন।
৩. গ্রাম্য সারল্যকে উপভোগ করতে পারিপার্শ্বিক গ্রামগুলো ঘুরে আসতে পারেন।
৪. টেন্ট-এ তাজা মাছ কিনে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ গরম গরম মাছ ভাজার স্বাদ আহরণ করে নিতে পারেন।
৫. বোট রাইড করে কাছাকাছি পর্যটন স্থানগুলো ভ্রমণ করে আসতে পারেন।
৬. মোহনার তট থেকে রং বেরঙের ঝিনুক মৌসুনির স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংগ্রহ করে আনতে পারেন।
কখন যাবেন
বর্ষাকাল ছাড়া বছরের যে কোনো সময় মৌসুনি দ্বীপ ঘুরে আসতে পারেন । যদি ঝড় সংক্রান্ত আপডেট থাকে তাহলে ভ্রমণের প্ল্যান পরিত্যাগ করুন। তাই দ্বীপ ভ্রমণের আগে আবহাওয়া সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জেনে নিয়ে যাওয়াই ভাল। এয়ার কন্ডিশনার-এর ব্যবস্থা না থাকার কারণে তীব্র গরমে ভ্রমণ করা তেমন সুখকর হবে না। তবে শীতকালীন সময়টা মৌসুনি দ্বীপ ভ্রমণের জন্য বেছে নিতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন
ট্রেনে
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেন চেপে পৌঁছে যান নামখানা। স্টেশন থেকে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদী নৌকার সাহায্যে কিংবা ম্যাজিক গাড়ি সহযোগে ব্রিজ পেড়িয়ে পৌঁছে যান বাগডাঙ্গা ফেরি ঘাট। নদী পেড়িয়ে টোটো ভাড়া করে পৌঁছে যান ক্যাম্পে।
সড়কপথে
গাড়ি করে নামখানা হয়ে পৌঁছে যান বাগডাঙ্গা ফেরি ঘাট। আপনার গাড়িটি একদিনের জন্য পার্কিং এ রেখে নদী পাড় হয়ে পৌঁছে যান গন্তব্যে।