মুখে দিতে না দিতেই ভ্যানিশ! এ কেমন কাবাব? ভোজনরসিক মানুষেরা দেখে নিন একবার...

Tripoto

বিভিন্ন সভ্যতা এবং সংস্কৃতির মিশেলের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের মাটিতে বিশেষভাবে চোখে পড়ে খাদ্য-সংস্কৃতির একধরনের মিশ্রণ। ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসে রয়েছে বিভিন্ন জনজাতি এবং সভ্যতার এক সুস্পষ্ট রূপরেখা। আমাদের দেশজ সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গে, বৈদেশিক সংস্কৃতির প্রভাবও লক্ষ করা যায় ভারতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির পর্যালোচনায়। মোঘল বা মুগলাই খাবারের সঙ্গে আমরা প্রত্যেকেই পরিচিত। বিরিয়ানি কিংবা রকমারি কাবারের স্বাদের আস্বাদ আমরা পেয়েছি আদতে ভারতে শাসন এবং সাম্রাজ্য বিস্তারকারী মুসলমান শাসকদের হাত ধরে। মুসলমান বাবুর্চিদের যে এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা ছিল সেকথা বলাই বাহুল্য।

Photo of মুখে দিতে না দিতেই ভ্যানিশ! এ কেমন কাবাব? ভোজনরসিক মানুষেরা দেখে নিন একবার... 1/1 by Never ending footsteps
গলৌতি কাবাবের স্বাদ সত্যিই অসাধারণ (ছবি সংগৃহীত)

মোঘলাইয়ের রকমারি পদ নিয়ে আলোচনা করার প্রসঙ্গে আজকে আলোচনা করা যেতে পারে ইসলামীয় খাদ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত কাবারের কথা। লাচ্ছা পরোটা এবং রেশমি কাবাবের জুটি নিয়ে খাদ্যরসিকদের নতুন করে কিছু বলার নেই। আর গলৌতি কাবারের স্বাদ যে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ আমরা সকলেই জানি। আজকে আমরা গলৌতি কাবারের কথা জানার পাশাপাশি, কলকাতার বিশেষ কিছু গলৌতি কাবাব প্রস্তুতকারী রেস্তোরাঁর নাম দেখে নেব।

গলৌতি কাবারের নাম কোথা থেকে এল

গলৌতি কাবাব নামের সঙ্গেই রয়েছে উর্দূ সংযোগ। উর্দূ শব্দ গলাওয়াত থেকে এসেছে গলৌতি শব্দটি। কথাটার অর্থ হল ফিউশন বা সংমিশ্রণ বা যা নিমেশেই গলে যায়। গলৌতি কাবাব আমরা যারা চেখে দেখেছি, তারা জানি গলৌতি কাবাব আদতে কতখানি নরম এবং তুলতুলে, একইসঙ্গে সুস্বাদু. গলৌতি কাবাব বানানোর ক্ষেত্রে মাংসের টুকরোকে সরাসরি ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত বিভিন্ন মশলার সঙ্গে মাংসকে ভাল করে পেস্ট করে একধরনের মিশ্রণ তৈরি করা হয়, এইভাবেই প্রস্তুত করা হয় গলৌতি কাবাব।

গলৌতি কাবাব প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক জনশ্রুতি

জনশ্রুতি অনুসারে নবাব আসাদ-উদ্-দৌল্লার দাঁত তেমন পোক্ত ছিল না। মাংস খেতে তাঁর যথেষ্টই সমস্যা হচ্ছিল, অথচ মাংস খাবারের তালিকাতে না থাকলে নিতান্তই সমস্যাজনক, কাজেই সেই সমস্যারও একপ্রকার সমাধান পাওয়া গেল শেফের উদ্যোগে। তিনিই প্রথম কাবার তৈরির মাংস দিয়ে কিমা প্রস্তুত করলেন, প্রায় ১৫০ রকমের মশলা এবং কাঁচা পেঁপের রস মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করলেন নতুন একধরনের নরম, সুস্বাদু কাবাব- যা মুখে দিলে অনায়াসেই গলে যায়… এই থেকেই এর নাম হয়ে গেল গলৌটি কাবাব। নবাব বাবুর্চির রন্ধনশিল্পে রীতিমতো মুগ্ধ হন। প্রতিদিনের খাবারের তালিকাতে জুড়ে যায় এই পদটির নাম। পরে অবশ্য ওয়াজেদ আলি শাহও এই কাবাবের ভক্ত ছিলেন।

কলকাতার বিখ্যাত কিছু গলৌতি কাবারের সন্ধান

আমিনিয়া রেস্টুরেন্ট

দশটিরও বেশি আউটলেট রয়েছে আমিনিয়ার। সুস্বাদু এবং নানা স্বাদের বিরিয়ানির পাশাপাশি এইখানে পাওয়া যায় রকমারি বিভিন্ন কাবাব। রেশমি কাবাব, চেলো কাবাবের পাশাপাশি, এখানকার গলৌতি কাবাব বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

ঠিকানা- ৫৭, বালিগঞ্জ গার্ডেন্স, গোলপার্ক, কলকাতা।

দিল্লি-৬

হ্যাঁ.. কলকাতাতেই পাবেন দিল্লি-৬-এর আস্বাদ। জাকারিয়া স্ট্রিটের এই দোকানে পাবেন মনের মতো রকমারি বিভিন্ন কাবাব, আর গলৌতি কাবাব তো বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

ঠিকানা- ১৬, জাকারিয়া স্ট্রিট, কলকাতা।

আরসালান

কলকাতাবাসী অথচ আরসালানের নাম শোনেনি এমন লোক খুব কমই রয়েছে। আরসালানের বিরিয়ানি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই, গলৌতি কাবাব এক্ষেত্রে বিশেষভাবে জনপ্রিয় বলতেই হবে।

ঠিকানা- ২৮, সার্কাস অ্যাভেনিউ, লোয়ার রেঞ্জ রোড, বেকবাগান, কলকাতা।

রং দে বসন্তী ধাবা

এইখানকার প্রতিটি পদের মধ্যেই রয়েছে পাঞ্জাবি ধাবার টেস্ট। গলৌতি কাবাবের টেস্ট নিতে নিতে আপনি লস্যির স্বাদ নিতেই পারেন।

ঠিকানা- ডি এন- ৩৭, ডি এন ব্লক, সল্টলেক, কলকাতা।

ওয়ধ ১৫৯০

মোঘলাই প্রেমী মানুষদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় এই রেস্টুরেন্ট। ওয়ধ ১৫৯০-এর গলৌতি কাবাব এবং রান বিরিয়ানি বিশেষভাবে জনপ্রিয়, এই বিষয়ে অনেকেই ওয়াকিবহল।

ঠিকানা- দেশপ্রিয় পার্ক, কলকাতা।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads