ভালবাসা শব্দটা প্রতিটি মানুষের জীবনে এক একটি অর্থ বহন করে আনে। কারওর কাছে ভালবাসার মানে মনের আবেগ অন্তরের টান, আবার কারওর কাছে ভালবাসার মানে শুধুই স্বাধীনতা। তবুও এসব কিছুর মধ্যেই ভালবাসা কিন্তু তার পথটি খুঁজে নেয়। যদিও ভালবাসা প্রকাশের জন্য আলাদা করে কোনওদিন হয় না, তবুও নিয়মমাফিক ক্যালেন্ডারের গতিবিধি মাথায় রেখেই ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহকেই তথাকথিত ভাবে ‘ভালবাসার সপ্তাহ’ হিসেবে ধরা হয়। আর ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালবাসার দিনগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত হতে থাকে।
বলা হয়, বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে সরস্বতী পুজো হলেও ১৪ই ফেব্রুয়ারিও কিন্তু সমানভাবে সেলিব্রেট হয়ে আসছে। তবে এই ভালবাসা পালনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব অভিব্যক্তি থেকেই যায়। ভালবাসা মানেই যে শুধু অন্যকে তা প্রদান করতে হবে এমন নয়; কিছুটা ভালবাসা তো নিজের জন্য রাখা যায়। তাই এই বছর
‘সিঙ্গেল’ মেয়েদের ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন হোক নিজের প্রতি ভালোবাসায়। আর তার সঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী সোমলতার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলে উঠি “নিজেকে ভালবাসো, তুমি এবার”।
‘তুই এখনও সিঙ্গেল’!!!
ভয় নেই,এই কথা থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে রাখার ছোট ছোট কিছু উপায়:-
নিজেকে সময় দেওয়া:
সারাবছর হয়তো আপনি নিজের কাজে এতটাই ব্যস্ত হয়ে থাকেন, যে নিজেকে সময় দেওয়ার কথা মনেই থাকে না। তাতে কী? এই বছর ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে আপনি নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান। নিজের শখ আহ্লাদগুলোকে পূরণ করুন। হারিয়ে যাওয়া অভ্যাসগুলোকে আবার একটা দিনের জন্য ফিরিয়ে আনুন।
সোশ্যাল ডিসটেন্স:
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ আমরাও অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছি। তাই এক মুহূর্ত মুঠোবন্দি ফোন থেকে কেউ কখনও ছুটি পাচ্ছি না। জীবনে যাই ঘটুক, যতটুকু সমস্যা আসুক সবটাই আজ আমার আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরি। তাই এই একটা দিন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ডিসটেন্স মেনে নিজের মধ্যে নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করার আনন্দটা নিতেই পারি।
ভোজন রসিক বাঙালি:
মনের মতো খাবার খাওয়া কিন্তু মন ভাল রাখার একটি অন্যতম পন্থা। আর আপনি যদি সেই খাদ্যরসিক বাঙালির একজন হয়ে থাকেন, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। গায়ে উঠুক অ্যাপ্রন, হাতে তুলুন খুন্তি, লেগে পরুন মনের মতো খাবার রান্না তৈরি করার কাজে। আর যদি দিনের শেষে একটু ক্লান্তি লাগে, তাহলে জোম্যাটো, সুইগি তো আছেই। চিন্তা কীসের?
উপহার:
কী ভেবেছিলেন এই বছরও আপনাকে উপহার দেওয়ার মতো কোনও ভালবাসার মানুষ নেই! ক্ষতি কী? নিজেকে ভালবেসে উপহার দিন। ঝটপট ঠিক করুন আর পছন্দের জিনিসগুলো কিনে নিয়ে এসে নিজেকেই নিজে উপহার দিয়ে দেখুন, অন্যের উপহারের থেকেও সেটি অনেক বেশি আনন্দের হবে আপনার কাছে।
দিনটি উপভোগের জন্য ছোট্ট ভ্রমণ:
অনেকদিন ধরে যে জায়গাগুলোতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কাজের চাপে হয়তো সেগুলো সম্ভব হচ্ছিল না। আর আজ যখন সুযোগ পেয়েছেন বেরিয়ে পড়ুন নিজের জন্য কিছুটা সময় হাতে রেখে নিজেকে সেই পথের সঙ্গী করতে। খুব দূরে নয়, কাছাকাছি কোনও একটি জায়গায় যান। আর যদি সেটাও সম্ভব না হয়, তাহলে বলব বিকেলবেলা কোনও নদীর ধারে পড়ন্ত সূর্যের আভা যখন জল স্পর্শ করে তখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী তো আপনি হতেই পারেন। দেখবেন প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে কীভাবে মোহের দ্বারা আচ্ছন্ন করে দেবে।
ইচ্ছে পূরণ:
জীবনে রোজগারের প্রথম দিকে হয়তো কোন একটা সময় নিজের জন্য খুব শখ করে একটা ক্যামেরা কিনেছিলেন, বা কখনও খুব ইচ্ছা ছিল বড় নৃত্য শিল্পী হওয়ার, কিংবা সংগীতকে নিজের জীবনের অঙ্গ হিসাবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, যেগুলোর কোনওটাই হয়তো কর্পোরেট লাইফে প্রবেশের পর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সময় যেমন থেমে থাকে না ঠিক; সেইভাবেই সময়ই আপনাকে আপনার সেই সমস্ত স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরার জন্য সুযোগ করে দেয়। ধুলো জমে থাকা তানপুরাটি মুছে আবার আপনি বসতে পারেন নিজের সংগীত সাধনায়। আলমারিতে রেখে দেওয়া ঘুমুরগুলো এই একটা দিনের জন্য আপনার পায়ের ঠাঁই পেতেই পারে। আবার বাক্স থেকে বের করে লেন্স পরিষ্কার করে সেই শখের ক্যামেরাটি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন আজকের দিনের সুন্দর সুন্দর কিছু মুহূর্তকে ফ্রেমেবন্দি করার আশায়।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো:
ভ্যালেন্টাইন্স ডে মানে যে শুধু নিজের প্রেমিককে ভালবাসতে হবে এমন নয়। ভালবাসা তো সবাইকে দেওয়া যায়। তাই এই দিনটায় পরিবারের সঙ্গে আপনি কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। নিজের কথা ও তাদের কথা শোনার সময় তো আর রোজ থাকে না। তাই এই দিনটাই হয়তো হতে পারে আপনার এবং আপনার পরিবারের মধ্যে কথোপকথনের এক অনন্য মাধ্যম।
সুতরাং বলা যায় যে, এই বছর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি যদি আপনি সিঙ্গেল হয়ে থাকেন এবং যদি এখনও আপনার ভালবাসার মানুষটিকে খুঁজে না পান, তাহলে হয়তো এই কাজগুলো করে আপনি ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স-ডে অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন। কারণ ভালবাসা শুধু একজনের জন্য হয় না। ভালোবাসা হয় সকলের জন্য। তবে তার আগে প্রয়োজন নিজেকে সব থেকে বেশি ভালবাসা।