কলকাতা ভ্রমণে এসে মিষ্টিমুখ করবেন না, তা কি হয়? কলকাতা নামের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে অনেক মিষ্টির সৃষ্টি কাহিনি। শতাব্দী প্রাচীন এমন অনেক মিষ্টির বিপণী রয়েছে যা এখনও কলকাতা শহরের এক একটি নক্ষত্র বললেও কিছু ভুল হবে না। সেই ঐতিহ্যবাহী বিপণী থেকে সাধারণ মিষ্টির বিপণী, যে কোনও মিষ্টি প্রিয় মানুষের কাছে একপ্রকারের স্বর্গ। আর আপনি যদি কলকাতার নতুন অতিথি হয়ে থাকেন এবং একই সঙ্গে মিষ্টিপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে এই শহরের সেরা মিষ্টির ঠিকানাগুলোর মিষ্টি চেখে নিতে কিন্তু একদম মিস করবেন না যেন।
১৮৫৫ সালে এই মিষ্টি বিপণীর যাত্রা শুরু হয়। এই বিপণীর কর্ণধার কে. সি. দাস দাবি করেন খাস কলকাতাই রসগোল্লার জন্মস্থান। ‘রসগোল্লা’ মিষ্টিটা সম্পর্কে কম বেশি সকলেরই বিশেষ জ্ঞান আছে। তাছাড়াও এই রসালো গরম রসগোল্লার মধ্যে রয়েছে জিভে জল আনা স্বাদ। এই রসগোল্লা কে নিয়েই কে. সি দাস আরেকটি মিষ্টির উদ্ভাবন করেছেন, যা রসমালাই হিসেবে পরিচিত। রসগোল্লার মতো রসমালাইও কিন্তু বেশ সুস্বাদু।
কলকাতা শহরের আরেকটি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন ভাণ্ডার বা মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান হল বলরাম মল্লিক এবং রাধারমণ মল্লিকের বিপণী। সমস্ত কলকাতা জুড়ে দুই বিখ্যাত মানুষের সম্মিলনে নির্মিত সন্দেশ এবং মিষ্টি দইয়ের যথেষ্ট নাম ডাক রয়েছে। আর হ্যাঁ এখানে এসে নলেন গুঁড়ের সন্দেশ টেস্ট করতে কিন্তু ভুলবেন না।
প্রকৃতপক্ষে কলকাতা শহরবাসির কাছে মিষ্টি দইটা একটা ইমোশন। আর যাদব চন্দ্র দাসের মিষ্টি দই তো লা-জবাব। কলকাতার ব্যস্ততম অঞ্চল কলেজ স্ট্রিটে অবস্থিত এই বিপণীটি সত্যজিৎ রায়, অপর্ণা সেনের মতো তারকাদের কাছেও একমাত্র পছন্দের জায়গায় ছিল। কি, একবার কলকাতার মিষ্টি দই চেখে দেখবেন নাকি?
বাঙালিদের যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানের একমাত্র সঙ্গী কিন্তু পায়েস। তাই নয় কি? চালের পায়েস কিন্তু মিষ্টিপ্রেমী মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। আপনি যদি পায়েস খেতে ভালোবাসেন, তাহলে নলীন চন্দ্র দাস এন্ড সন্স-এর পায়েস একবার টেস্ট করে দেখতে পারেন। এই বিপণীর পায়েসের খ্যাতি প্রায় ১৭৫ বছরের প্রাচীন, যা আজও সমান ভাবে অক্ষুণ্ণ। এখানে আপনি বিভিন্ন স্বাদের পায়েসের সন্ধান পেয়ে যাবেন, তবে নলেন গুড়ের পায়েসটা এককথায় অসাধারণ।
ছানার জিলিপির জন্য সেরা ঠিকানা হলো মৌচাক। গড়িয়াহাটে অবস্থিত এই বিপণীতে আপনি পেয়ে যাবেন জিলিপির আরেকটি সংস্করণ। ছানার পুর ভরা এবং রসে ভেজা জিলিপি টেস্ট করার লোভটা আপনিও ছাড়তে পারবেন না। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ছানার জিলিপির জন্য গড়িয়াহাটের মৌচাক একমাত্র সেরা ঠিকানা।
পশ্চিমবঙ্গের আরেকটি প্রধান মিষ্টান্ন হল সীতাভোগ। ছোট ছোট গুলাব জামুন সহযোগে মিষ্টি ভাত কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। কথিত আছে, এই মিষ্টিটি শ্রী রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতার খুব প্রিয় মিষ্টি ছিল। আর তাই মিষ্টির নামকরণ হয় সীতাভোগ। এই সীতাভোগের স্বাদ আহরণ করতে আপনাকে আসতে হবে সেন মহাশয়-এ।
বাঙালিদের বছর শুরু হয় পৌষপার্বণ দিয়ে। আর এই পৌষ পার্বণের প্রধান অঙ্গ হল পাটিসাপটা। ছোট ছোট প্যানকেকের মধ্যে গুড় নারকেল এবং ড্রাই ফ্রুটস সম্মিলিত পুরে ভরা পাটিসাপটা সকলেরই খুব পছন্দের একটি খাবার। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো মিষ্টি বিপণীতে এই পাটিসাপটা বিক্রি হলেও, পিঠে বিলাসীর বেকড পাটিসাপটার স্বাদটা এক্কেবারে অন্যরকম।
সকল মিষ্টিপ্রেমী মানুষদের জন্য প্রাণের শহর কলকাতায় রইলো আগাম নিমন্ত্রণ ।আপনার শহরের মিষ্টির কাহিনিটা আমাদের লিখে জানতে কিন্তু ভুলবেন না ।