কেনাকাটি করতে আমরা সকলেই ভালোবাসি। এমনকি একটা গোটা দিন শুধুমাত্র শপিং এর জন্য রেখে দিতেও আমরা পিছুপা হই না। কিন্তু শপিং এর জন্য অতিরিক্ত খরচ করে ফেলাটাও নির্বুদ্ধিতার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আপনার উপার্জনের কিছুটা অংশ সাশ্রয় করাও প্রয়োজন। আর তাই সমস্ত শপোহলিক মানুষের জন্য কলকাতার কাছেই কম খরচে শপিং করার কয়েকটা হদিশ রইল।
১. নিউ মার্কেট চত্বরের গো-গাগা:
১৮৭৪ সালে কলকাতার বুকে ব্রিটিশ নাগরিকদের কেনাকাটির জন্য শপিং আর্কেড গড়ে ওঠে। আর সেখান থেকেই ক্যালকাটা কর্পোরেশন এর অধীনে নিউ মার্কেটের সূচনা। ১৯০৩ সালে এর নাম ছিল স্যার স্টুয়ার্ট হগ্, মার্কেট পরবর্তী কালে যা হগ্ মার্কেট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গে এই ধরণের মার্কেট সেই সময় নতুন হওয়ার কারণে এই মার্কেটটিকে নিউ মার্কেট-এর আখ্যা দেওয়া হয় এবং বর্তমানেও এটি নিউ মার্কেট নামেই পরিচিত।
এই মার্কেটে একই ছাদের তলায় সমস্ত রকম জিনিস পেয়ে যাবেন। জামাকাপড় থেকে জুতো, ফ্যাশন জুয়েলারি থেকে দামি ধাতু বা পাথরের তৈরি জুয়েলারি, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে খেলনা, নানান রকমের খাদ্য সামগ্রী থেকে সুন্দর ফুল কিংবা ড্রাই ফ্রুটস; চট জলদি সব কিছুই হাতের কাছে পেয়ে যাবেন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, বহু প্রাচীন এবং বিশ্বের দরবারে জনপ্রিয় বিপণী থেকে অনেক ধরণের বহুমূল্য জিনিস খুব সহজেই পেয়ে যাবেন এখানে।
এই মার্কেটটা অন্যান্য যে কোনও শপিং মল বা শপিং আর্কেড-এর তুলনায় যথেষ্ট সাশ্রয়ী। যেমন ধরুন একটা ফুলের তোরার দাম অন্য শপিং মল এ ৩০০/- টাকা বা তারও বেশি, সেখানে একই ফুলের তোরার এখানে ১৫০/- টাকায় পেয়ে যেতে পারেন।
নিউ মার্কেটের রাস্তার দু'পাশে বিভিন্ন ধরণের ব্র্যান্ড এর বিপণী যেমন বাটার জুতোর দোকান, জকির স্টোর, প্যান্টালুনস র আউটলেট, সুমঙ্গল, ইত্যাদি উপলব্ধ আছে। শতাব্দী প্রাচীন নিজামস রেস্টুরেন্টও এখানেই অবস্থিত। এমনকি কাঠি রোল-এর উৎপত্তিও এই স্থান থেকেই।
এই ধরণেরই স্ট্রিট শপিং-এর আরেকটি ডেস্টিনেশন হলো গড়িয়াহাট। আপনি কখনও এই স্থানে শপিং করতে গেলে দেখতে পাবেন, রাস্তার দু’ধারে গৃহসজ্জা, রেডিমেড জামাকাপড়, বিছানার চাদর, শীতের পোশাক এমনকি ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বিক্রেতাগণ বসে আছেন।
গড়িয়াহাটেও আপনি খুব সস্তায় শপিং করে ফেলতে পারেন। ইচ্ছা করলে রাস্তার ধারের খাবারের দোকান থেকে খাবার কিনেও খেতে পারেন। কলকাতার মতো জায়গায় আপনি ১০০/- টাকার কমেও খাবার পেয়ে যাবেন।
আপনি যদি বই পড়তে ভালোবাসেন তাহলে কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে আপনাকে স্বাগত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির নিকটে কলকাতার রাস্তা জুড়ে রয়েছে বইয়ের বিপণীগুলি। এই বুকস্টলগুলোতে সাহিত্য থেকে ব্যবসা, এমনকি বিভিন্ন ধরণের ওষুধের বইও পেয়ে যাবেন অবিশ্বাস্য রকমের কম খরচে।
কলকাতার এই সবচেয়ে বড় বই বাজারে অনেক দুষ্প্রাপ্য বইয়েরও সন্ধান পেতে পারেন। এমনকি অনুবাদ সাহিত্যের বই-এর প্রথম সংস্করণ এখানে অনেক কম খরচে পেয়ে যাবেন। বই কিনে ফেরার সময় কফি হাউস থেকে বিখ্যাত কফির স্বাদ আস্বাদন করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।
৪. রঙের প্রদর্শনী দেখতে পৌঁছে যেতে পারেন হাওড়ার ফুল বাজারে:
হাওড়া ব্রিজের কাছে কখনও সুগন্ধি ফুলের সৌরভে মোহিত হয়েছেন? হাওড়ার ফুল বাজারে আপনি পেয়ে যাবেন বিভিন্ন রঙিন এবং সুগন্ধি ফুলের সন্ধান। এখানে আপনি টিউবগোলাপ থেকে অর্কিড, লিলি ফুল থেকে গাঁদা ফুল, এই রকম সমস্ত ধরণের ফুলের দেখা পাবেন।
যে কোনও মল বা আপনার স্থানীয় ফুল মার্কেটের থেকে অনেক কম খরচে অনেক বেশি ফুল হাওড়া ফুল বাজার থেকে আপনি পেয়ে যাবেন। জন্মদিন হোক বা বিবাহবার্ষিকী, একরাশ ফুল চট করে মন ভাল করে দেয়।
এম. জি রোডের কাছে বড় বাজার সমগ্র ভারতবর্ষের কাছে সব চেয়ে বড় এবং সস্তায় শপিং করার শ্রেষ্ঠ ঠিকানা। এখানে অবিশ্বাস্য রকমের কম খরচে পেয়ে যাবেন জামাকাপড় থেকে গৃহের অন্দর সজ্জার সামগ্রী, চকোলেট থেকে সমস্ত রকম উপহারের জিনিস, কনস্ট্রাকশনের যাবতীয় জিনিস থেকে বিভিন্ন রকমের মশলাপাতি।
বিখ্যাত কোম্পানির মূল সামগ্রী এই বড় বাজার থেকেই কেনা হয়। আবার প্রসিদ্ধ মিষ্টি বিপণী যেমন হলদিরাম এখানেই অবস্থিত। ওষুধপত্র থেকে প্রসাধন সামগ্রী এবং ইলেকট্রিক জিনিসও এখানে সুলভে পাওয়া যায়।
আপনি কি জানেন ২০১২ সাল পর্যন্ত হাতিবাগান মার্কেটে নানান ধরণের পাখি এবং পশু বিক্রি করা হত? কলকাতার একমাত্র এই জায়গা থেকেই আপনি আপনার প্রিয় পোষ্যটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতেন।
এখানকার কিছু বিপণী প্রায় বহু বছরের প্রাচীন। বিখ্যাত ষ্টার থিয়েটার এই হাতিবাগানেই অবস্থিত। আজও এখানে এমন কয়েকটি বিপণী আছে যারা এখনও এমন এমন ভারতীয় সিল্ক শাড়ি বিক্রি করেন, যা বর্তমানে প্রায় দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু এই শাড়িও আপনি কম খরচে কিনে আপনার শাড়ির সংগ্রহের তালিকাটি পরিপূর্ণ করতে পারেন।
কম খরচে শপিং এর ব্লগ টা কেমন লাগল আমাদের লিখে জানাতে কিন্তু ভুলবেন না ।