বিশ্বউষ্ণায়ন বা গ্লোবালওয়ার্মিং-এর জেরে আমার প্রত্যেকেই ভীষণভাবে পরিবেশ সচেতন হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই পরিবেশসচেতনতাবোধ যে আমাদের মধ্যে বেশ অনেকটাই দেখা দিয়েছে, এই নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে রিনিউয়েবেল বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে দেখা হচ্ছে যে, পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষে বিষয়গুলো ঠিক কতখানি উপকারি। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার ফলে একরকমভাবে আমরা পরিবর্তমান পরিস্থিতি এবং সময়ের সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকজাত বিভিন্ন দ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইন চালু করা হয়েছে, যারফলে পরিবেশের সুষমতা বজায় রাখা এবং একরকমভাবে পরিবেশ সংরক্ষণতাবোধ মানুষের মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে।
পরিবেশ সচেতনতা বিষয়েই খাস কলকাতা শহরের বুকে চোখে পড়ল এক গুরুত্বপূর্ণ নজির। ব্যবহৃত এবং পুরনো বিভিন্ন টায়ার ব্যবহার করে কলকাতার এসপ্ল্যানেড চত্বরে গড়ে উঠেছে ছোট একটি পার্ক। আমাদের পরিবহণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে টায়ারের বিকল্প কোনও বস্তু এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি। অথচ পরিবেশ সুরক্ষায় এই ব্যবহৃত টায়ার মোটেই আশাপ্রদ নয়, কাজেই উপযুক্ত প্রতিস্থাপক না থাকার ফলে একরকমভাবে টায়ারগুলো ব্যবহারের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসাসূচক।
কলকাতা পরিবহণ কর্পোরেশনের উদ্যোগে অভিনব এই উদ্যোগের ফলে শহরের বুকে, একইসঙ্গে সমগ্র দেশের মধ্যে প্রথম টায়ার পার্ক তৈরি হল। এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের আধিকারিক জানিয়েছেন, মূলত বর্জ্য জাতীয় পদার্থকে শিল্পে রূপান্তর করাটাই হল তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য, ফেলে দেওয়া যে কোনও বস্তু থেকেই শিল্প তৈরি হতে পারে, এই বার্তা জনমানসে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই তাঁদের এই প্রচেষ্টা। মূলত বাস ডিপোতে স্তূপীকৃত টায়ার থেকেই এই টায়ারগুলোকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং শিল্পীদের রং-এর তুলিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে একে।
কী কী রয়েছে
শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ছোট্ট এই পার্ক কাম ক্যাফেটিতে পাবেন বিভিন্ন রকমের খাবার, একইসঙ্গে আপনি পাবেন গান-বাজনার পরিবেশ এবং টায়ারের গায়ে রং-বেরংয়ের কারুশিল্প উপভোগ করার সুযোগ।
ঠিকানা
ময়দান, এসপ্ল্যানেড, কলকাতা-৭০০০৬৯
কী কী ভাবে সাজানো হয়েছে
পরিত্যক্ত বিভিন্ন টায়ার যত্নসহকারে ব্যবহার করার ফলে কোনওটি থেকে তৈরি হয়েছে বসবার চেয়ার-টেবিল আবার কোনওটি থেকে তৈরি হয়েছে সুসজ্জিত দোলনা। বাচ্চাদের মনের মতো কার্টুন এবং অন্যান্য জিনিসও রয়েছে এই পার্কটিতে। কাজেই ছোটর মধ্যে সুন্দর এবং পরিবেশ বান্ধব এই পার্কটি আপামর কলকাতাবাসীর মনে অল্প সময়ের মধ্যেই যে বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
সুতরাং, এসপ্ল্যানেড মোড়ের ভিড় এবং জমজমাট পরিবেশকে পাশ কাটিয়ে যদি পুরনো বন্ধুর সঙ্গে একটু একান্তে কথা বলতে চান, তাহলে অবশ্যই ঢুঁ মেরে আসতে পারেন পার্কটি থেকে।